লেজগিন নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী
মুহাম্মদ রোকনুদ্দৌলাহ্: লেজগিন নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী মূলত রাশিয়ার দক্ষিণ দাগেস্তান এবং আজারবাইজানের উত্তরাংশের মানুষ। তুর্কমেনিস্তান, ইউক্রেন, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান ও তুরস্কেও উল্লেখযোগ্য লেজগিন রয়েছে। মোট লেজগিন জনসংখ্যা প্রায় আট লাখ; এর মধ্যে দাগেস্তানে বাস করে প্রায় তিন লাখ ৮৫ হাজার এবং আজারবাইজানে এক লাখ ৮০ হাজার। বাকিদের বসবাস অন্যান্য দেশে।
বেশির ভাগ লেজগিন বাস করে বন্ধুর পার্বত্য এলাকায়, যেখানে রয়েছে গভীর নির্জন গিরিখাত ও গিরিসঙ্কট। এখানকার গ্রীষ্মকাল গরম ও শুষ্ক। আর শীতকালে বেশ বাতাস বয়। এ সময় কনকনে শীত পড়ে। কিছু লেজগিন বাস করে কাস্পিয়ান সাগরের কাছে, যেখানে শীতকাল শুষ্ক ও মৃদু। লেজগিনরা কথা বলে লেজগিন ভাষায়। একসময় এ ভাষা লেখা হতো আরবি হরফে। ১৯২০-এর দশকে সোভিয়েতরা আরবি বদলে ল্যাটিন হরফ চাপিয়ে দেয়। এরপর ১৯৩৮ সালে ল্যাটিন হরফ বদলিয়ে চালু করা হয় সিরিলিক হরফ। লেজগিন ভাষায় থাকা অনেক আরবি ও ফারসি শব্দ বদলিয়ে সমমানের রুশ শব্দ চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে এ রুশিকরণ তেমন সফলতা আনেনি বলে মনে করা হয়। কারণ লেজগিনরা নিজেদের ভাষায়, ঐতিহ্যে একাত্মতাবোধ করে। একসময় লেজগিনরা বাস করত মুক্ত সমাজে। বর্ধিত পারিবারিক একক ছিল ‘তুখুম’। সমাজ ছিল পিতৃতান্ত্রিক এবং বয়স্ক পুরুষ শাসন করত সমাজ। এরা সমাজের প্রয়োজনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করত। বর্তমানে আধুনিকীকরণ ও গ্রাম থেকে অনেক মানুষ শহরে বসবাস শুরু করায় তুখুম গুরুত্ব হারিয়েছে। বেশির ভাগ লেজগিন নিজ গোত্রে বিয়ে করে। আর এতে সিদ্ধান্ত নিতে বয়স্ক মহিলারা প্রভাব খাটায়। একসময় বিয়েতে বরকে কালিম (কনের মূল্য) দিতে হতো। বর্তমানে তা চালু আছে প্রতিকী হিসেবে। লেজগিন নারীরা কার্পেট বুননে পটু। এতে থাকে জ্যামিতিক নকশা। এ অঞ্চলের অর্থনীতি অনেকটা খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ (দুধ, পনির, মাখন), চামড়ার কাজ ও বস্ত্রবয়নের ওপর নির্ভরশীল। কিছু লেজগিন ঋতুভিত্তিক ধাতুর কাজ, বিশেষ করে অস্ত্র ও অলঙ্কার তৈরির কাজ করে। ‘লেজগিন্কা’ লেজগিনদের ঐতিহ্যবাহী লোকনৃত্য। এতে যুগল নাচ প্রচলিত আছে। আবার পুরুষের একক নাচও আছে। যুগল নাচে নারী-পুরুষ দূরত্ব ও শালীনতা বজায় রাখে। ৯ শতক থেকে আরব মুসলমানদের দ্বারা প্রভাবিত হতে শুরু করে এ জনগোষ্ঠী। ১৮ শতকে এদের বেশির ভাগ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। এরা খুবই ধার্মিক। এমনকি সোভিয়েত যুগেও এরা গোপনে ধর্ম পালন করত। বর্তমানে দাগেস্তান ও স্বাধীন আজারবাইজানে শত শত মসজিদ দেখা যায়।