‘মিতা তত্ত্ব অনুযায়ী শেখ হাসিনা কিংবা রবীন্দ্রনাথও বাঙ্গালী না’

‘মিতা তত্ত্ব অনুযায়ী শেখ হাসিনা  বাঙ্গালী না। বঙ্গমাতাও বাঙ্গালী না। কারণ বঙ্গমাতা মাথায় কাপড় দিতেন। শেখ হাসিনাও মাঝে মাঝে মাথায় কাপড় দেন।’
জনপ্রিয় রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী মিতা হকের  ‘বাঙালি পরিচয়ের সংজ্ঞার’ ব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুকে এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আবু সুফিয়ান।
হাসান জামান লিখৈছেন, তাহলে তো দাড়ি থাকার কারনে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও বাঙ্গালী নন।
গত শুক্রবার রাত ৮টায় একাত্তর টিভিতে ‘সংস্কৃতিজনের রাজনীতি ভাবনা’ শীর্ষক এক টকশোতে মিতা বাঙালির পরিচয়ের ব্যাপারে সংজ্ঞায় দেন, ‘মাথায় কাপড় ও নেকাব বা হিজাব পরা নারীরা কখনোই বাঙালি নয়।’ তার মতে যে সব পুরুষের দাড়ি আছে ও টুপি পরেন তারাও বাঙালি নয়।
মিথিলা ফারজানার উপস্থাপনায় টকশোতে মিতা ছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন নাট্যকার মামুনুর রশীদ, অভিনেতা তারিক আনাম খান।
তার এই অভিনব সংজ্ঞার ব্যাপারে ফেসবুকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক একেএম ওয়াদিদুজ্জামান লিখেছেন, ‘আমি ‘বাঙ্গালী’ কী না? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে তো জানতে হবে যে আমি নিজেকে ‘বাঙ্গালী’ বলে দাবী করেছি কী না? প্রাচীন ‘বঙ্গ’ রাজ্যের ‘বাঙ্গাল’রা কখনোই বৃটিশ শাসনের বাই প্রোডাক্ট কোলকাতা কেন্দ্রীক বুদ্ধিজীবী সমাজের সঙ্গায়িত ‘বাঙ্গালী’ পরিচয়ে পরিচিত হতে চায় নাই, এখনো চায় না। বৃটিশ আমলেই প্রখ্যাত কৌতুক অভিনেতা সাম্যময় বন্দ্যোপাধ্যায় (ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়) ‘বাঙ্গাল’কে পুংলিঙ্গ এবং ‘বাঙ্গালী’কে স্ত্রী লিঙ্গ বলে ব্যঙ্গ করেছিলেন। কোলকাতা কেন্দ্রীক বুদ্ধিজীবীদের নেতৃত্বে বাহ্মণ্যবাদীরা থাকায় তাদের সৃষ্ট এই ‘বাঙ্গালী’ ভাবধারাটি প্রায় সর্বোতভাবে অন্য ধর্মের সাংষ্কৃতিক উপাদানকে অস্বীকার করে এসেছে। যে কারনে শতবর্ষ পুরাতন শরৎচন্দ্রের উপন্যাসে ‘বাঙ্গালী বনাম মুসলমানদের ফুটবল ম্যাচ’ এর বিবরণ পাওয়া যায়। দীর্ঘদিনের সেই প্রকৃত ‘বাঙ্গালী’ সংঙ্গাটি মিতা হক আবার আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন। উনি যথাযথই বলেছেন; আমিও উনার সাথে একমত যে, “হিজাব, ঘোমটা ও দাড়ি-টুপিঅলারা আর যাই হোক বাঙ্গালী না”। ঘোমটা মাথায় গায়েঁর বধু, খালেদা জিয়া বা শেখ হাসিনা কখনোই ‘বাঙ্গালী’ নন। মিতা হকের এই বক্তব্যের পর মাথায় ঘোমটা দিয়ে বা হিজাব পড়ে কিম্বা দাঁড়ি রেখে মাথায় টুপি দিয়ে নিজেদের যারা ‘বাঙ্গালী’ দাবী করেন বা ‘বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ’ এর তত্ত্বকথা শোনান, তাদের পরিচয় সংকটের অবসান ঘটবে। হয় তারা এখন থেকে আর নিজেদের ‘বাঙ্গালী’ দাবী করবে না, নয়তো নিজেদের ঘোমটা-হিজাব ও দাঁড়ি-টুপি বর্জন করবে।’
ফাহাম আব্দুস সালাম লিখেছেন, ‘মিতা হক আইডেন্টিটি ক্রাইসিসটা আপনার, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশীর না- যেটা আপনি অন্যের ওপর চাপিয়ে দিয়ে আপনার অল্প বুদ্ধি ও মেধার প্রায়শ্চিত্ত করেন। রাস্তা ঘাটে আপনার মতো শাড়ি না পরা মেয়েদেরই শুধু আপনার চোখে পড়ে কারণ এর বেশি কিছু দেখার জন্য যে সফিস্টিকেশান, প্রস্তুতি ও পড়াশোনা প্রয়োজন সেটা আপনার নেই। এই ঘাটতিকে আপনি পুষিয়ে নিতে চান শুদ্ধ বাংলায় কথা বলে, বড় টিপ দিয়ে, ভান করে। আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারি যে বিষয় নিয়ে আপনার অগাধ আস্থা, সেই বাঙালিত্ব নিয়েও আপনার তেমন কোনো পড়াশোনা নেই, জানাশোনা নেই।
দাড়ি টুপি দেখলেই আপনি অস্বস্তিতে ভোগেন কেননা আপনি প্রগ্রেসিভ না ভীষণ ধরনের ট্রাইবাল মেন্টালিটির মানুষ। সবাইকে আপনার নিজের মতো না দেখলে মনে করেন যে সবকিছু হাতছাড়া হয়ে গেলো। আপনার আগ্রহ আসলে ‘আইল দেয়ায়’, নাহলে আপনি ইনসিকিউরড হয়ে পড়েন, তাই অভিযোগ সবাই কেন আপনার মতোন না।
আপনি বাঙালিত্ব ও ইসলামকে এক সাথে ধারণ করতে পারেন না, সাধারণ মানুষ যে এই সাধারণ কাজটা করতে সক্ষম সেটা আপনি বোঝেন না। এই দেশের মানুষ তার স্পিরিচুয়ালিটির ক্ষুধা মেটায় ধর্ম দিয়ে, সংস্কৃতির ক্ষুধা মেটায় বাঙালিত্ব দিয়ে। এ ধরনের কাজের কোনো হ্যান্ডবুক হয় না, তাই তাকে আপোষ করতে হয়। কোনো সময় তার বাঙ্গালিত্বে খামতি হয়, কোনো সময় ইসলামে, বাট য়ু নো ওয়াট, ইট রিয়ালি ডাজন ম্যাটার মাচ। তারা আপনার মতোন অলস সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণীর ঘ্যান ঘ্যান করা মানুষ না। তাদের “কাজ” আছে।
আপনিই আসলে সেকেলে ধারণার মানুষ, আপনার কাছে আইডেন্টিটির অনুষঙ্গ হোলো কেবল শাড়ি পরা, পাঞ্জাবি পরা – এসব – কারণ এর চেয়ে গভীরে বুঝতে হলে মেধার প্রয়োজন হয় যেটা আপনার নেই। তার চেয়েও বড় কথা আপনি শিখেছেন শুধুই ঘৃণার ব্যবসা করতে। এই কাজ করতে কাওকে না কাওকে আপনার ইনফেরিয়র প্রমাণ করতে হবেই। যেহেতু আপনার জীবিকার জন্য দাড়ি-টুপিকে ছোটো করতে হয় সেহেতু আপনি দাড়ি-টুপিকে ছোটো করছেন। যদি জীবিকার জন্য বাঙালিত্বকে ছোটো করতে হতো – আপনার যে মেধা – আপনি বড় বড় টিপ দেয়া নিয়েই টিপ্পনি কাটতেন।
(দয়া করে মনে করবেন না আপনি যে বিরক্তি উদ্রেক করেন তার কারণ এই যে আপনি বাঙালিত্ব নিয়ে আপ্লুত এবং এ দেশে ইসলামের প্রসার নিয়ে উদ্বিগ্ন। আপনাকে অসহনীয় ঠেকে কারণ প্লেইন এন্ড সিম্পল – আপনি একজন অল্প বুদ্ধি এবং খুবই অল্প পড়াশোনা জানা মানুষ।)’
মওলা বাবা মিতাকে উদ্দেশ্যে করে লিখেছেন, ‘আপনার কাছে আমার কিছু প্রশ্ন আছে;
প্রশ্ন ১- আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিন্তু মাথায় কাপড় দেন, তাহলে কি উনি বাঙালি না?
প্রশ্ন ২- আমাদের বিরোধীদলীয় নেত্রীও কিন্তু মাথায় কাপড় দেন, তবে কি উনিও বাঙালি না?
প্রশ্ন ৩- মুক্তিযুদ্ধের কোনও বীরঙ্গনা যদি মাথায় কাপড় দেন তবে কি উনি বাঙালি থাকবেন না?
শেষ প্রশ্ন, কোনও পাকিস্তানি/ভারতীয় যদি মাথায় কাপড় না দেয় তবে কি তারা বাঙালি হয়ে যাবে?
উত্তর দিতে পারবেন, মিতা হক?’

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button