ঢাবিতে সাড়ে ১২শ’ পিচ ইয়াবাসহ সাত বহিরাগত আটক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) সাড়ে ১২শ’ পিচ ইয়াবাসহ বহিরাগত সাত ‘খুচরা’ ইয়াবা বিক্রেতাকে আটক করেছেন শাহবাগ থানা পুলিশ। গত রোববার গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলের মাঠের পাশে বসুনিয়া ভার্স্কযের গেইটের সামনে তাদেরকে আটক করা হয়। এসময় তাদের ব্যবহৃত দুইটি সিএনজি ও একটি মোটর সাইকেল আটক করা হয়।
আটককৃতরা হলেন-সুব্রত কুমার ভৌমিক ওরফে সজীব (২৮), সঞ্জয় বিশ্বাস ওরফে সুমন (২৭), মোঃ বাচ্চু (৩৩), মোঃ শহীদুল ইসলাম (২৯), মোঃ কাবুল খান (৩০), কাজী শহিদুল ইসলাম (৩০) ও মোঃ আকবার (৩২)। সোমবার সকালে তাদের বিরূদ্ধে বাদি হয়ে মামলা করেন শাহবাগ থানার পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ সোহেল রানা। মামলা নং-১৪।
সোমবার সন্ধ্যায় শাহবাগ থানার পরির্দশক (তদন্ত) হাবিল হোসেন বলেন, আটককৃত সাতজনসহ অজ্ঞাতনামা আরও বেশ কয়েকজনকে ১৯৯০ সালের মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯(১) এর ৯ ধারায় আসামী করে মামলা করা হয়েছে। দুপুরে তাদেরকে আদালতে চালান দিলে আদালত তাদের প্রত্যেককে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে শাহবাগ থানায় পুলিশি হেফাজতে আটকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে একাধিক ছাত্রলীগ নেতার নাম উঠে আসলেও তাদের বিরূদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ছাত্রলীগ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হলের একাধিক সূত্র জানায়, এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান। তিনি ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতাদের মাধ্যমে এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। এছাড়া, বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক ছাত্রলীগ নেতা এই ব্যবসার সাথে জড়িত বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে শাহবাগ থানার পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ সোহেল রানা জানতে পারে, রোববার রাত দেড়টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলের সামনে ইয়াবা বিক্রি হচ্ছে। পরে তার নেতৃত্বে ক্যাম্পাসে টহলরত শাহবাগ থানার পুলিশের সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলের মাঠের পাশে বসুনিয়া ভার্স্কযের গেইটের সামনে অবস্থান নেয়।
রাত দুইটার দিকে হলের দিক থেকে দুইটি সিএনজি ও একটি মোটর সাইকেল বসুনিয়া ভার্স্কযের গেইট দিয়ে বের হতে চাইলে তাদের আটকিয়ে দেয় পুলিশের সদস্যরা। এতে সিএসজি ও মোটর সাইকেলে থাকা সকলের দেহ তল্লাশি করলে ছয়জনের দেহে ২শ’ পিচ এবং অন্যজনের দেহে ৫০ পিচ ইয়াবা পাওয়া যায়, যার ওজন প্রায় ২শ’ গ্রাম।
পরে সিএসজি ও মটর সাইকেলসহ তাদেরকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সিএনজি দুটির রেজিঃ নং যথাক্রমে ঢাকা মেট্রো-থ-১৩-৪৫৭৮ এবং ঢাকা মেট্রো-দ-১১-১৪৩৮। মোটর সাইকেলের রেজিঃ নং-সিলেট-হ-১২-৩৭৫৮।
এদিকে থানায় তাদের পুলিশি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আসামীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলের ৩১১, ৩৩৭ এবং ৩৩৮ নং রুমের ওয়াসিম, মেহেদী, মাকসুদ, টিটু ও সুমনসহ বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে ইয়াবা ক্রয় করে ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে।
জানা যায়, হলের ৩৩৭ নম্বর রুমটি হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাকসুদ রানা রহমান মিঠু, ৩১১ নম্বর রুমটি হল ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আরাফাতের এবং ৩৩৮ নাম্বার রুমটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংগঠনিক সম্পাদক মাকসুদ নিয়ন্ত্রিত বলে একাধিক সূত্র জানায়।
ওয়াসিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও মাকসুদ ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ন-সম্পাদক। সুমন হলশাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসানের কর্মী। জানা যায়, ওয়াসিম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। সুমন ম্যানেজমেন্ট এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র বলে হলের একটি সুত্র জানিয়েছে।
মুহসীন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আলী আক্কাস বলেন, বাইরের কিছু লোকের সাথে যোগসাজসে হলের কিছু শিক্ষার্থী এই ব্যবসা করে থাকে। বিশ্ববিদ্যায়ের প্রক্টর বিষয়টি জানালে হলের পক্ষ থেকে জড়িতদের বিরূদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের (ভারপ্রাপ্ত) প্রক্টর ড. এ এম আমজাদ বলেন, পুলিশ যাদের আটক করেছে তাদের কাছ থেকে মুহসীন হলের বেশ কয়েকটি রুম ও বেশ কয়েকজনের নাম এসেছে। আমরা দেখবো বিষয়টি কারো সাজানো কি না। সবকিছু দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।