অভিবাসী ছাড়া জার্মানীর অর্থনৈতিক উন্নতি সম্ভব নয়
ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশ জার্মানী৷ এদেশের ‘ওয়ার্কিং এজ পপুলেশন’ (কর্মজীবী জনসংখ্যা) ২০৩০ সালের মধ্যে ৬৩ লাখ কমে যাবে৷ বর্তমানে দেশটির জনসংখ্যা ৮ কোটি ২০ লাখ, ২০৬০ সালে যেটা কমে হবে সাড়ে ছয় বা ৭ কোটি৷
কোলনভিত্তিক আইডাব্লিউ ইনস্টিটিউট এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে এর ফলে প্রতিবছর ২২ বিলিয়ন ইউরো হাতছাড়া হচ্ছে জার্মানীর। তাই নীতিনির্ধারকরা এ ব্যাপারে সরকারকে এরই মধ্যে সতর্ক করেছেন।
জার্মানীতে গণিত বা অঙ্ক, কম্পিউটার, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি-এসব চাকরির ক্ষেত্রে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া খবই দুষ্কর হয়ে উঠছে। জার্মানীতে এখন বেকারত্বের হার মাত্র ৬.৬ শতাংশ, যেখানে ইউরোপের অন্যান্য দেশে তা ৯.৩ শতাংশ। ফলে জার্মানীতে যেসব অভিবাসী আছেন, প্রতিভা ও যোগ্যতার কারণে বেশিরভাগ পদে স্থান হচ্ছে তাদের৷ কিন্তু এমন লাখো কোম্পানি রয়েছে যারা জার্মানদের প্রাধান্য দেন, কিন্তু ১০ জনের পদে ৬ জনের বেশি যোগ্য প্রার্থী পান না।
হানসগ্রোহেস-এর মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান টমাস এগেনটার জানালেন, ২০ বছর আগে যোগ্য চাকরি প্রার্থীরা দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াতো, আর আজ আমরাই যোগ্য প্রার্থীদের খুঁজে বেড়াই।
২০৬০ সাল নাগাদ এই সমস্যাটি আরো প্রকট হবে। কেননা বর্তমানে একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মীর জায়গায় গড়ে প্রায় ২.৩ জন কর্মী রয়েছে, কিন্তু ২০৬০ সালে তা দাঁড়াবে ১.৩ জনে৷ এছাড়া ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় জার্মানীতে জন্মহারও বেশ কম। এদিকে, রাজনীতিবিদরাও জন্মহার বাড়ানোর জন্য তেমন কোনো নীতি নির্ধারণ করছেন না। অবশ্য ২০০৫ সালে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল নতুন মা’দের বাসায় থেকে সন্তানদের লালন পালনের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা দেয়ার পরিকল্পনা করলে তা ব্যাপক সমালোচিত হয়। সমালোচকরা বলেছিলেন, এর ফলে কর্মক্ষেত্র থেকে নারীদের দূরে রাখার পরিকল্পনা হচ্ছে। এছাড়া ম্যার্কেল অবসরের বয়স ৬৭ করতে চেয়েছিলেন, যা পরে শরীক দলগুলোর চাপে ৬৩ করা হয়। অর্থনীতিবিদ ডেভিড ম্যাকি বলেছেন, “জার্মানীতে জন্মহার না বাড়লে অভিবাসীদের ছাড়া জার্মান শ্রমবাজারে ধস নামবে।”
বার্লিনের পপুলেশন এন্ড ডেভেলাপমেন্ট ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক স্টেফান সিফার্ট বলেছেন, ‘ওয়ার্কিং এজ পপুলেশন’ বা কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা সঠিক রাখতে হলে জার্মানীতে ২০৫০ সাল নাগাদ প্রতিবছর অভিবাসীদের সংখ্যা হতে হবে ৩ লাখ।
গত বছর জার্মানীতে অভিবাসী আসার সংখ্যা ছিল ৪,৬০,০০০ এবং এ বছর তা ৫ লাখে দাঁড়াবে বলে জানান৷ দক্ষ এবং যোগ্য শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের ব্লু কার্ড দেয়া হলেও সেই পদ্ধতি দক্ষ জনশক্তি গড়তে খুব একটা সাহায্য করছে না।