বাংলাদেশের রাজনীতি কোন পথে ?
মো: রাকিবুর রশীদ:
বাংলাদেশের রাজনীতি এখন কোন পথে-স্বভাবত এমন প্রশ্ন সবার মনে। সাধামাঠা উত্তর দিলে বলা যায়-অনেকটা এলোমেলো ও দিকশূণ্য দেশের রাজনীতি। তত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের অবস্থান দুই দিকে হওয়ায় এ অবস্থার সৃস্টি হয়েছে।
কোনো অঘটন না ঘটলে আগামী বছরের শুরুতেই সাধারণ নির্বাচন হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতক দলগুলো ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু আজও সেই সাধারণ নির্বাচনের পদ্ধতি কি হবে তা এই জাতি নিশ্চিত হতে পারেনি। প্রধান দুই দল এই নির্বাচন নিয়ে দু’টি ভিন্ন অবস্থানে আছে। বিএনপি চায় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার, কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার চায় দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন। সাত বছর আগে এই জাতি আরও একবার এমন ভয়ানক রাজনৈতিক অবস্থার শিকার হয়েছিল। আবারও সেই পরিস্থিতি যে আসবেনা সেটা নিশ্চিত বলা যাবেনা। কারণ প্রধান রাজনৈতিক দুই দলের ভাষা ও আচরণ আমাদের সঙ্কায় ফেলে দিচ্ছে।
জাতীয় সংসদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ৩৩০ জন সদস্য রয়েছেন। তাদের বাদ দিয়ে আপামর দেশের সাধারণ নাগরিক বিষয়টি অনুধাবন করছেন। কিন্তু কোটি মানুষের মতামতের মূল্যায়ন কতটা হচ্ছে দেশে। মানুষ হরতাল না চাইলেও দেশে হরতাল হয়, হয় বিভিন্ন সংবেদনশীল চুক্তি, এমনকি সংবিধান সংশোধনী। এসব কারণে তেল লাগানো বাঁশে বাঁদরের ওঠা-নামার গাণিতিক অবস্থায় পড়েছে বাংলাদেশের গণতন্ত্র।
অতীতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কিভাবে প্রতিকূলতায় পড়েছিল তা নিশ্চই ভুলে যাননি রাজনীতিবীদরা। জনগন নয় বরং রাজনীতিবীদরাই তাতে বেশী কোনঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। দেশের সংকটপূর্ণ মুহুর্তে সাধারণ জনগনের চাপে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আবারো গণতান্ত্রিক উত্তরণ হয়েছে। দিবা স্বপ্ন না দেখলে স্পষ্ট ভাবে মেনে নিতে হয় এদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানে কম বেশি কাজ করছে। এটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। সরকার ও বিরোধী দল উভয়কেই এ বিষয়টি লক্ষ্য রাখা উচিত। বিরোধী দলকে সংসদীয় কার্যক্রমে আরো বলিষ্ট ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। কারণ, একটি শক্তিশালী বিরোধী দল গণতন্ত্রের অন্যতম চাবিকাটি। কিন্তু বিরোধী দল সংসদে তাদের দয়িত্ব পালন কম করে, রাজপথে জনগনের সহানুভূতি অর্জনের এক প্রকার বৃথা চেষ্টা করেছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সরকার তাদের মেয়াদকালে জনগনকে চরমভাবে উপো করেছে। মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা বার বার বিভিন্ন বক্তব্যে ও কর্মকান্ডে জনমনে ব্যথা দিয়েছে।
সে যাই হোক, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ সকল প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে এগিয়ে চলছে। দেশ ও সমাজকে সমৃদ্ধ করছে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন যথেষ্ট শক্তিশালী হয়েছে বলে বিভিন্ন সময় একাধিক মহল তাদের মতামত দিয়েছে। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে বেশকটি উপনির্বাচন গ্রহণযোগ্যভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সুতরাং গণতান্ত্রিক চর্চায় কিছুটা হয়েও আমরা এগিয়েছি। তাই সরকার ও বিরোধী দলের বিদেশী বন্ধুদের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টায় সময় নষ্ট না করে জনগনের মতামত জানার চেষ্টা ও মূল্যায়ন করা উচিত। উচিত নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন পদ্ধতিকে আরও শক্তিশালী করা।
পৌরসভা নির্বাচন সাফল্যজনকভাবে শেষ হওয়ার পর সরকার এর ব্যপক আলোচনায় এবং বাহবা জাহির করায় খুব স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল সরকার তথা আওয়ামীলীগ তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দিতে পারে । সরকারের সব স্তর থেকেই জোর আওয়াজ ছিল এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব তত্বাবধায়ক সরকারের আর দরকার নেই । প্রধান মন্ত্রী বলেছেন নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা হবে এবং নির্বাচন কমিশন ই নির্বাচন সম্পন্ন করবেন। ওই সময় দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকবে অর্থাৎ বর্তমান সরকার আগামী সংসদ নির্বাচন সময়ে ক্ষমতায় থাকবে। কিন্তু বিএনপি জোর গলায় বলেছে আমরা এসব মানি না ।আর এতে নির্বাচন অনুষ্টান নিয়ে শঙ্কা থেকে যাচ্ছে। ইদের পরে রাজনীতি কোনপথে যাবে তা বলা মুশকিল। এমন অবস্থায় জরুরি ঐক্যমত প্রয়োজন বলে মনে করছেন দেশের মানুষ।