নির্যাতন সবসময়ই অন্যায় : ক্যামেরন

Cameronব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, নির্যাতন অন্যায়। নির্যাতন সবসময়ই অন্যায়। সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) জিজ্ঞাসাবাদ-কৌশল নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের সংশ্লিষ্ট কমিটির প্রকাশ করা প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় গত মঙ্গলবার তুরস্কের আঙ্কারায় এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন।
প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে ক্যামেরন বলেন, সন্ত্রাসীদের মোকাবিলায় নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ফল এক্কেবারে উল্টোটি হচ্ছে। ক্যামেরন উল্লেখ করেন যে, আমাদের মধ্যে যারা একটি নিরাপদ, অধিক নিশ্চিন্ত বিশ্ব দেখতে চান, তারা সন্ত্রাসীদের পরাজয় দেখতে চান। কিন্তু নৈতিকতা হারালে আমরা সফল হবো না।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, নাইন-ইলেভেনের পর যা ঘটেছে, তা নিঃসন্দেহে অন্যায়। আমাদের এটা পরিষ্কার করা উচিত যে অন্যায় হয়েছে। সিআইএকে সহায়তা করার অভিযোগে যুক্তরাজ্যেও সমালোচনা হচ্ছে।
২০০১ সালের নাইন-ইলেভেন হামলার পর আটক আল-কায়েদার বন্দিদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় নির্মম নির্যাতন করেছিল যুক্তরাষ্ট্র কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। এভাবে ভয়ঙ্কর কৌশলের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া ভুল তথ্য দিয়ে আল-কায়েদা ও সন্ত্রাসী হুমকি সম্পর্কে হোয়াইট হাউস ও মার্কিন কংগ্রেসকে বিভ্রান্ত করেছিল সংস্থাটি।
সিআইএ’র ওই জিজ্ঞাসাবাদ-কৌশল নিয়ে প্রকাশ করা এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলেছে মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের সংশ্লিষ্ট কমিটি। এ প্রতিবেদনের জের ধরে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বজুড়ে সতর্কতা জারি করে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের আমলে বহু বন্দিকে জিজ্ঞাসাবাদে সিআইএ যে গোপন কার্যক্রম চালিয়েছিল, প্রতিবেদনটিকে তার একটি মারাত্মক প্রমাণ হিসেবে দেখা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বারাক ওবামা ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ওই বিতর্কিত জিজ্ঞাসাবাদ পদ্ধতি বাতিল করেন। তিনি একে ‘নির্যাতন’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, যে প্রক্রিয়ায় বন্দিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তা মার্কিন মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সিনেট ইনটেলিজেন্স কমিটি কর্তৃক এ সংক্রান্ত প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি উপরোক্ত কথা বলেন। গত মঙ্গলবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে সন্ত্রাসী হামলার পর কয়েক বছর ধরে সন্ত্রাসী সন্দেহে যাদের আটক করা হয়েছে তাদের ওপর মার্কিন মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নিষ্ঠুর অত্যাচার করা হয়েছে। অত্যাচারের মাধ্যমে জোরপূর্বক তাদের কাছ থেকে তথ্য আদায়ের চেষ্টা করা হয়েছে। আর পুরো বিষয়টি নিয়ে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) ঠা-া মাথায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে মার্কিন নাগরিকদের বিভ্রান্ত করে গেছে। প্রতিবেদনটির ফাঁস হওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, আটক বন্দি, বিশেষ করে সন্ত্রাসী সন্দেহে আটক লোকজনের কাছ থেকে তথ্য বের করতে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাদের প্রতি যৌন নির্যাতনের হুমকি দেওয়া হয়েছে, না ঘুমাতে দিয়ে দিনের পর দিন জিজ্ঞাসাবাদ চলেছে। কোনো তথ্য না পেয়েও নির্যাতন বন্ধ করা হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের আমলে সন্দেহভাজন আল-কায়েদার ওপর এ নির্যাতনের নীতি গ্রহণ করেছিল সিআইএ। বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর এ নীতি বাতিল করেন। এ বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, যে প্রক্রিয়ায় বন্দিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তা মার্কিন মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের ওই পদ্ধতিগুলো মার্কিন ভাবমূর্তিকে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে ফেলেছে। এতে বৈশ্বিক নানা বিষয়ে বিশ্বসহযোগিতা পাওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। তবে ডেমোক্রাটিক নেতারা বলেছেন, ওসামা বিন লাদেন ও অন্যান্যদের তথ্য পাওয়ার জন্য অমানবিক উপায়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার দরকার ছিল।
অন্যদিকে, এই প্রতিবেদন প্রকাশের জের ধরে হামলা হতে পারে এমন আশঙ্কায় বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সব দূতাবাস ও মার্কিন স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। প্রতিবেদন প্রকাশের আগে আগাম সতর্কতা হিসেবে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে হোয়াইট হাউস সূত্র জানিয়েছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button