তুহিন মালিকের মামলা প্রত্যাহারের দাবি সিটিজেন মুভমেন্টের
বিশিষ্ট আইনজীবি ও দেশপ্রেমিক বক্তা ড. তুহিন মালিকের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক ও রাজনৈতিক মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে সিটিজেন মুভমেন্ট ইউকে। ১০ ডিসেম্বর বুধবার বিকেলে পূর্ব লন্ডনের স্থানীয় একটি রেস্তোরায় এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিটিজেন মুভমেন্ট ইউকের আহ্বায়ক এম এ মালেক।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড.তুহিন মালিকের বিরুদ্ধে সরকারের ইন্ধনে ছাত্রলীগ দুটি পৃথক মামলা করেছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মানুষের মৌলিক মানবিক অধিকার। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিকাশ এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশকে স্থিতিশীল করতে সহায়তা করে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য বাংলাদেশে আজ এই মূল্যবোধ নির্বাসিত। বিরোধীদল ও মতকে নিষ্পেষণই বর্তমান অবৈধ সরকারের মূলমন্ত্রে পরিণত হয়েছে। ছলে বলে কৌশলে দেশের ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার জন্য আওয়ামীলীগ দেশে অত্যাচার নির্যাতনের পথ অবলম্বন করেছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মুফতি শাহ সদরুদ্দিন, প্রফেসর মাওলানা সালেহ আহমেদ, সেভ বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান ব্যারিষ্টার নজরুল ইসলাম, বিশিষ্ট মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব ব্যারিষ্টার আবু বকর মোল্লা, জিয়া স্মৃতি পাঠাগার ইউকের চেয়ারম্যান শরীফুজ্জামান চৌধুরী তপন, শিক্ষাবিদ নসরুল্লাহ খান জুনায়েদ, এম এ কাদের, শামসুর রহমান মাতাব, ব্যারিষ্টার তমিজ উদ্দিন, আবেদ রাজা, ব্যারিষ্টার হামিদুল হক লিটন আফিন্দি, ব্যারিষ্টার আলিমুল হক লিটন, আমিনুর রহমান আকরাম, সেলিম আহমেদ, আমিনুল ইসলাম প্রমূখ।
লিখিত বক্তব্যে এম এ মালেক বলেন, দেশের আইন, শাসন আর বিচার বিভাগ আজ প্রশ্নের সম্মুখীন। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের মান সম্মান ধূলায় লুণ্ঠিত। দেশের মানুষ আওয়ামী দুঃশাসনে এক দূর্বিসহ জীবন যাপন করছে। সাধারণ মানুষ দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, বিদ্যুত পানি আর গ্যাসের সংকটে দিনাতিপাত করছে। দেশে আইনের শাসন নেই। মাত্রাতিরিক্ত দলীয়করণে দেশের মানুষ আজ সুশাসনবঞ্চিত। একদলীয় শাসনের অবয়বে চলছে দেশ। বিরোধী দল, বিরুদ্ধমত শুধু দলনের শিকারই হচ্ছে না – ক্ষমতাসীনদের নির্মূল অভিযানের এক অব্যর্থ নিশানার শিকার হচেছ দেশের মানবতা।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ড.তুহিন মালিক নিজের বিবেককে বিক্রি না করে, নিজের জীবনের পরোয়া না করে বিভিন্ন টক শোতে সরকারের মুখোশ উন্মোচন করেছেন তাই সরকার তার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ছাত্রলীগকে নিয়ে মামলা করিয়েছে। এম এ মালেক সরকারের এই অপকর্মের তীব্র নিন্দা জানিয়ে অনতিবিলম্বে ড.তুহিন মালিকসহ বিরোধীদলের সকল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকরা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
এম এ মালেক বলেন, যুক্তরাজ্যে সিটিজেন মুভমেন্টের সেমিনারে যোগ দিতে লন্ডনে আসার পথে সরকার ড.তুহিন মালিককে নানাভাবে বাধা দেয়। এটিই প্রমাণ করে সরকার একটি উসিলা খূঁজছিলেন তাকে হেনস্তা করার জন্য। তারই সুযোগ নিয়েছে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকার। এমনকি টক শো গুলোও এখন সকরার নিয়ন্ত্রণ করে। এতে কারা অতিথি হবে, কি কথা বলা যাবে না, সেটারও দিকনির্দেশা দেয় সরকার। তিনি বলেন, রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করার অধিকার কেবল রাষ্ট্রের। একজন ব্যাক্তি কিভাবে এধরণের মামলা দায়ের করতে পারেন। আর আদালতও এই মামলা গ্রহণ করে পুলিশ বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে। এর চেয়ে হাস্যকর বিষয় আর কি হতে পারে? বিচার বিভাগও এখন আর স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না
এম এ মালেক বলেন, আওয়ামী লীগ এখন গণতন্ত্র হত্যাকারী, সৈ¡রাচারী, ফ্যাসিস্ট শক্তি হিসেবে মানুষের কাছে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের হাতে গণতন্ত্র সংবিধান, দেশ কোনো কিছুই নিরাপদ নয়। তারা একে একে রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। সর্বশেষে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে একদলীয় নির্বাচন করে গণতন্ত্রের কবর রচনা করেছে তারা। এর জন্য আওয়ামীলীগকে করুণ পরিণতি গ্রহণ করতে হবে।
লিখিত বক্তব্যে এম এ মালেক বলেন, এই সরকার আওয়ামী নেতা-কর্মীদের সরকার। তারা সচেতন জনগণের সরকার হতে পারেনি। ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের গুম, খুন, মামলা-হামলা করে আসছে। মিথ্যা মামলার কারণে বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীরা তাদের বাসা-বাড়িতে থাকতে পারছে না। শেখ হাসিনা যদি ১৬ কোটি মানুষের প্রধানমন্ত্রী হতেন তাহলে বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর মামলা হামলা এবং গুম খুন করা হতো না। বিরোধীমতকেও দমন করা হতো না।
এম এ মালেক অবিলম্বে এই অবৈধ সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, শেখ হাসিনার পায়ের তলায় মাটি নেই। তাই খোদ প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের প্রত্যেক মন্ত্রীই খিস্তি খেউড়কে তাদের একমাত্র উপজীব্যে পরিণত করেছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের দূতের বিরুদ্ধেও কুৎসিত মন্তব্য করতে তারা দ্বিধা করছেন। এসবই প্রমাণ করে এই সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে এখন দিশা হারিয়ে ফেলেছে। এম এ মালেক সাংবাদিকদের জানান, স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য ড. তুহিন মালিকের বিরুদ্ধে সরকারের হয়রানির বিষয়টি ইতিমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বৃটিশ পার্লামেন্ট ও জাতিসংঘকে অবহিত করা হয়েছে।