বাংলাদেশের উন্নয়নে ৩৩৪ কোটি ডলার ঋণ দিবে এডিবি
বাংলাদেশের উন্নয়নে ২০১৫-১৭ সালে ৩৩৪ কোটি ১০ লাখ ডলারের বড় ঋণ সহায়তা দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। ইনক্লুসিভ (অন্তর্ভুক্তিমূলক) ও টেকসই প্রবৃদ্ধি এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ ঋণ দেয়া হবে।
এর মধ্যে অবকাঠামো উন্নয়নে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সম্প্রতি এডিবি প্রকাশিত ‘কান্ট্রি অপারেশন বিজনেস প্ল্যান: বাংলাদেশ ২০১৫-১৭’তে এ পরিকল্পনা ব্যক্ত করা হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১১-১৫ সালের জন্য এর আগে কান্ট্রি পার্টনারশিপ স্ট্র্যাটেজি ঘোষণা করেছিল এডিবি। ২০১১ সালের অক্টোবরে ঘোষিত সে পরিকল্পনায় পাঁচ বছরে ৪৫২ কোটি ১০ লাখ ডলার ঋণ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল সংস্থাটি।
সে হিসাবে বছরে গড়ে ৯০ কোটি ৪২ লাখ ডলার করে ঋণ দেয়ার কথা ছিল। এছাড়া পরবর্তী পরিকল্পনায় ২০১৫-১৭ সালে বছরে গড়ে ১১১ কোটি ৩৭ লাখ ডলার করে দেবে এডিবি।
এ হিসাবে ২০১১-১৫ সময়ের তুলনায় ২০১৫-১৭ সময়ে বছরে গড়ে ২৩.১৭ শতাংশ ঋণ প্রদান বাড়াবে এডিবি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব (এডিবি উইং) মো. সাইফুদ্দিন জানান, এডিবি বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী। সংস্থাটি কয়েকটি ক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বিশেষ করে অন্য দাতা সংস্থার তুলনায় অবকাঠামো উন্নয়নে অনেক বেশি ঋণ দিয়েছে। এডিবির দেয়া ঋণের বেশির ভাগই সহজ শর্তের।
আগামী তিন বছর এডিবির ঋণের মধ্যে সহজ শর্তের ঋণ (এডিএফ) থাকছে ১৭০ কোটি ৭০ লাখ ডলার। আর কঠিন শর্তের ঋণ (ওসিআর) থাকছে ১৬৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
এডিএফ ঋণে ১ শতাংশ সুদ আরোপ করা হয় এবং এ ঋণ পরিশোধের মেয়াদকাল ২৫ বছরের বেশি হয়। সংস্থাটির সদস্য হওয়ার পর থেকেই স্বল্প সুদের এ ঋণ পেয়ে আসছে বাংলাদেশ।
অন্যদিকে ওসিআর নামে এডিবির কঠিন শর্তের ঋণে লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অফারড রেট বা লাইবরের সঙ্গে কমিটমেন্ট চার্জ আরোপ করা হয়। এর ফলে এ ঋণে সুদহার ৪-৫ শতাংশের বেশি হয়।
২০০০ সালের পর এডিবি বাংলাদেশকে এ ধরনের কঠিন শর্তের ঋণ বেশি দিচ্ছে।
বিজনেস প্ল্যানের তথ্যমতে, আগামী তিন বছরে ঋণ সহায়তার ক্ষেত্রে খাতভিত্তিক গুরুত্ব দেবে এডিবি। এজন্য সুনির্দিষ্টের (কনফার্মড) পাশাপাশি কয়েকটি প্রকল্পে স্ট্যান্ডবাই বরাদ্দও রাখা হচ্ছে।
এতে প্রকল্পভিত্তিক গুরুত্ব দেয়া হবে। এছাড়া বিভিন্ন বড় প্রকল্পে একক অর্থায়ন সম্ভব না হলে কো-ফিন্যান্সারের ব্যবস্থা করবে এডিবি। এর মাধ্যমে আগামী তিন বছরে অতিরিক্ত ১৬২ কোটি ২৩ লাখ ডলার ঋণ সংস্থান করবে সংস্থাটি।
অবকাঠামো খাতে বাংলাদেশকে ১৯০ কোটি ৯০ লাখ ডলার ঋণ দিতে আগ্রহী এডিবি। এর মধ্যে পরিবহন খাতে দেয়া হবে ৭৭ কোটি ২০ লাখ ডলার।
মূলত সড়ক ও রেল পরিবহন, পরিবহন নীতিমালা এবং প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নে এ অর্থ দেয়া হবে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও আঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধিকে এক্ষেত্রে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
নিজস্ব ঋণের বাইরে অতিরিক্ত ৫২ কোটি ৫০ লাখ ডলারের কো-ফিন্যান্স সংগ্রহ করবে সংস্থাটি।
অবকাঠামো খাতের আওতায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দেয়া হবে ৭৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এছাড়া অতিরিক্ত ৫২ কোটি ডলার কো-ফিন্যান্স সংগ্রহের ব্যবস্থা করবে এডিবি।
বিদ্যুৎ উত্পাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ সক্ষমতা বৃদ্ধি, জ্বালানি দক্ষতা, গ্যাস উত্পাদন ও বিতরণ বৃদ্ধিতে এ ঋণ দেয়া হবে। আর পানি এবং অন্যান্য নগর অবকাঠামো ও সেবার উন্নয়নে দেয়া হবে ৩৭ কোটি ২০ লাখ টাকা।
পাশাপাশি ১০ কোটি ২০ লাখ ডলারের কো-ফিন্যান্স সংগ্রহ করা হবে। শহর অঞ্চলে পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন সেবার সম্প্রসারণ, পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও বস্তি উন্নয়ন এবং প্রাতিষ্ঠানিক ও দক্ষতা উন্নয়নে খাতটিতে ঋণ দেয়া হবে।
অবকাঠামো উন্নয়নের বাইরে শিক্ষা খাতেও ২০১৫-১৭ সালে বড় অঙ্কের ঋণ দেবে এডিবি, যার পরিমাণ ৭৩ কোটি ডলার। মূলত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সম্প্রসারণ, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা উন্নয়ন এবং শিক্ষা খাতের উন্নয়নে এ ঋণ দেয়া হবে।
এছাড়া এ খাতে ৩১ কোটি ডলার অতিরিক্ত কো-ফিন্যান্স সংগ্রহ করা হবে। কৃষি, প্রাকৃতিক সম্পদ ও গ্রামীণ উন্নয়নে আগামী তিন বছরে ৩২ কোটি ৮০ ডলার ঋণ দেবে এডিবি।
গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, নদীর অববাহিকা ও বন্যা ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সক্ষমতা উন্নয়ন, জ্ঞান (নলেজ) ব্যবস্থাপনা, শস্যবীমা এবং কিছু পাইলট প্রকল্পে ব্যবহারের জন্য এ ঋণ দেয়া হবে।
পাশাপাশি এ খাতে ১১ কোটি ৫৩ লাখ ডলার কো-ফিন্যান্স জোগাড় করে দেবে সংস্থাটি।
এডিবির ঋণ দেয়ার আরেকটি খাত ক্যাপিটাল মার্কেট উন্নয়ন। এ খাতে ৩৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার ঋণ দেবে সংস্থাটি। পাশাপাশি ৫ কোটি ডলার অতিরিক্ত কো-ফিন্যান্স সংগ্রহ করে দেবে।
এদিকে এডিবি চলতি ২০১৪ সালে বাংলাদেশকে কী পরিমাণ ঋণ দেবে তাও প্রকাশ করেছে তাদের ওয়েবসাইটে।
সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে আটটি প্রকল্পের বিপরীতে বাংলাদেশকে মোট ৪৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার ঋণ দেয়া হবে। এর মধ্যে এডিএফ ঋণের পরিমাণ ৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার এবং ওসিআর ঋণের পরিমাণ ৪০ কোটি ডলার।
এডিবির বাংলাদেশ মিশনের মুখপাত্র গোবিন্দ বার বলেন, কোনো কোনো প্রকল্পে আগামী তিন বছরে এডিবি সহযোগিতা করবে তার একটি খসড়া করা হয়েছে। এরই মধ্যে বিজনেস প্ল্যানটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
ঋণের বাইরেও কারিগরি সহায়তা হিসেবে আগামী তিন বছরে ১ কোটি ২৩ লাখ ডলার দেবে এডিবি। এ অর্থ অনুদান হলেও সরাসরি এডিবির অধীনে ব্যয় করা হবে। তবে আগামী তিন বছরে সরাসরি কোনো অনুদান দেবে না সংস্থাটি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, ঋণদাতা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে এডিবি বাংলাদেশের প্রতি বেশি বন্ধুভাবাপন্ন বলে ধারণা করা হয়।
এতে ১৯৭৩ সালে এডিবির সদস্যপদ লাভের পর থেকে গত ৪০ বছরে সংস্থাটি বাংলাদেশকে দেড় হাজার কোটি ডলার ঋণ ও অনুদান দিয়েছে।
উল্লেখ্য, এডিবি বাংলাদেশের অন্যতম একটি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ এর সদস্যপদ লাভ করার পর এই সংস্থা তাদের আর্থিক সহায়তার একটি বড় অংশ প্রদান করে আসছে।
ঋণের ক্ষেত্রে এডিবি প্রধানত অবকাঠামো বিশেষ করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, স্থানীয় সরকার, পরিবহন, শিক্ষা, পানিসম্পদ ও সুশাসন খাতকে প্রাধান্য দিয়ে আসছে।