স্বাধীনতায় মুজিব পরিবারের ন্যূনতম অবদান নেই

Tareqবিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতায় মুজিব পরিবারের ন্যূনতম অবদান নেই। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে শেখ মুজিব পরিবার ও হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীর যে আঁতাত হয়েছিল ইতিহাসে তার বিভিন্ন প্রমাণ আছে। লাখ লাখ পরিবার যখন আধাবেলা খেয়ে না খেয়ে দিশেহার ছিল তখন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারকে বিরাট অংকের মাসিক ভাতা দেয়া হতো। শেখ মুজিব পাকিস্তানে বহাল তবিয়তে ছিলেন।
সোমবার যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত বিজয় দিবসের সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান বিভিন্ন ঐতিহাসি তথ্য ও দলিল উপস্থাপন স্থাপন করে এসব কথা বলেন।
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার বক্তব্যের শুরুতে স্বাধীনতাযুদ্ধে যাদের অবদান আছে তাদের শ্রদ্ধাভরে স্বরণ করেন।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার যুদ্ধের পরবর্তী ৪৪ বছরে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধই বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
তারেক রহমান বলেন, ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর শেখ মুজিবুর রহমান সামরিক শাসক ইয়হিয়া খানের ষড়যন্ত্রমূলক ‘এল এফ ও’ অধ্যাদেশের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। একই অধ্যাদেশের অধীনে একই বছর ১৭ ডিসেম্বরের প্রাদেশিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন শেখ মুজিবুর রহমান। ‘এল এফ ও’ অধ্যাদেশের মূল ছিল অখ- পাকিস্তান রক্ষার সংগ্রাম। কিন্তু ২৬ মার্চ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার মাধ্যমে তাদের অখ- পাকিস্তান রক্ষার সংগ্রাম ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি মেজর জিয়া বলছি— ঐ একটি শব্দই ছিলো তখন মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে এক দুর্দমনীয় শক্তি, তাদের আত্মার কথা।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে মুক্তিযুদ্ধের শক্তি হিসাবে শেখ মুজিব নিজেও বিশ্বাস করতেন না। মুক্তিযুদ্ধের জন্য আওয়ামী লীগকে কখনো প্রস্তুত করা হয়নি।
তারেক রহমান ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, নিউক্লিয়াসের জনক সিরাজুল আলম খানের উদ্ধৃতি দিয়ে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেন, সিরাজুল আলম খান বলেছেন আওয়ামী লীগ হলো এন্টি লিবারেশন ফোর্স। তিনি এর সোজা বাংলা করে বলেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের দল। এ সময় মহিউদ্দিন আহমদের সামপ্রতিক বইয়ের বিভিন্ন রেফারেন্স এবং সিরাজুল আলম খানের সঙ্গে লেখক মহিউদ্দিনের কথোপকথনের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি উপরোক্ত কথা বলেন।
তারেক রহমান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সময়কালীন ঘটনা এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন লেখকের বইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে শেখ মুজিবকে আবারো পাক বন্ধু হিসেবে তার মূল্যায়ন তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, শেখ মুজিব অবৈধভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন। শেখ মুজিব পাকিস্তানী পাসপোর্ট নিয়ে দেশে এসেছিলেন। একই সময়ে তিনি এ কে খন্দকার, তাজউদ্দিন আহমদ, শিরিন শারমিন ও বদরুদ্দিন উমরের লেখা থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
চলমান ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনার সরকারকে অবৈধ সরকার আখ্যায়িত করে বলেন, রংহেডে হাসিনা তার বাকশালী পিতার মতো ক্ষমতা অবৈধভাবে দখল করে আছে।
তিনি তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ১৯৭১ সালে বাঙালিরা যেভাবে জেগে উঠেছিলো, এই অবৈধ সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আবারো সবাই জেগে উঠছে, সেদিন আর বেশি দূরে নয়।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী বলেন, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ইতিহাসের সত্য উচ্চারণ করেছেন। আর এতে আধিপত্যবাদী আওয়ামী লীগের গ্রাত্রদাহ শুরু হয়েছে। বস্তির নরনারীরা যে ভাষায় কথা বলেন তারা সে ভাষায় কথা বলছেন। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার পর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যে মুজিব পরিবারের কারোই স্বাধীনতার যুদ্ধে ন্যূনতম অবদান ছিল না, তারা মহান স্বাধীনতার ঘোষক ও বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও তার পরিবারকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হেয় করার চেষ্টা করছে। সময় এসেছে অনির্বাচিত অগণতান্ত্রিক আওয়ামী লীগের যড়যন্ত্র বন্ধ করার।
আরেক অতিথি বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, ২৬ মার্চে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণা পরবর্তী ১১ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। তাই আজ আমরা স্বাধীনতা দিবস পালন করছি। সেই অমর নেতার হাত ধরে বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শত ষড়যন্ত্র বিএনপিতে কোণঠাসা করে রাখতে পারবে না।
পূর্ব লন্ডনের চেশিয়ার স্ট্রিটে অবস্থিত ‘এট্রিয়াম লন্ডন’ কমিউনিটি সেন্টারে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বিজয় দিবসের সভা শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুস। সেক্রেটারি কয়সর এম আহমদের পরিচালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মীর নাসির উদ্দিন আহমেদ, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী, চেয়ারপার্সনের পররাষ্ট্র-বিষয়ক উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য মুশফিক ফজল আনসারী, ডঃ এম এ মালিক, বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার এম এ সালাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ মালেক, আব্দুল হামিদ, আবুল কালাম আজাদ, তৈমুস আলী, যুক্তরাজ্য বিএনপির প্রচার সম্পাদক এম এ কাঈয়ূম, মিডল্যান্ডস বিএনপির নেতা ব্যারিস্টার আব্দুল মজিদ তাহের প্রমুখ।
এ ছাড়া পরদিন যুক্তরাজ্য জাসাসের আয়োজনে পালন করা হবে ৪৪তম বিজয় দিবস ও কনসার্ট ফর ডেমোক্রাসি। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
Tareq2

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button