ভালোবাসায় দেশ জয়

Erduganসোমালিয়া বলতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের মানচিত্র। এর পাশাপাশি দেশটির জলদস্যুর কথা মনে হতে শিরদাঁড়া শক্ত হয়ে যায়। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এক সময় হতাশ হয়ে পড়েছিলেন সোমালিয়ার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে। তবে সোমালিয়া এখন বদলাচ্ছে। আর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে যে দেশটি সেটি হচ্ছে তুরস্ক।
একটা সময় রাজধানী মোগাদিসুর যে বন্দরটিতে শুধু গোলাগুলির আওয়াজ শোনা যেতো, এখন সেখানে নোঙ্গর করছে বিদেশি জাহাজ। জাহাজগুলো থেকে নামছে সিমেন্ট, চাল, গাড়ি আর পাস্তা বোঝাই কন্টেইনার।এগুলোর মধ্যে তুরস্কের পণ্যই বেশি।আবার যে ক্রেনগুলো জাহাজ থেকে পণ্য নামাচ্ছে এগুলোর মধ্যেও রয়েছে তুরস্কের ক্রেন।
মোগাদিসুর রাস্তায় বের হলে সোমালিয়ার পতাকার পাশেই চোখ পড়বে তুরস্কের পতাকায়। বিমানবন্দর থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো নির্মাণ করছে তুর্কী প্রকৌশলী ও কর্মীরা। গত বিশ বছরের মধ্যে সোমালিয়ায় কোনো বিদেশি এয়ারলাইন্স নিয়মিত উড্ডয়ন করেনি। অথচ এখন মোগাদিসুতে সপ্তাহে চারটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে তুর্কি এয়ারলাইনস।রাজধানী তুরস্ক কর্তৃপক্ষ যে হাসপাতালটি নির্মাণ করছে, তাতেও কর্মরত আছেন তুর্কি চিকিৎসকরা। হাসপাতালের বাইরে সোমালি পতাকার পাশে শোভা পাচ্ছে তুর্কি পতাকা। হাসপাতালের পাশেই উসমানি আমলের স্থাপত্য শৈলীতে মসজিদের নির্মাণ কাজ করছেন তুর্কি শ্রমিকরা। তাদের সঙ্গে আছেন সোমালীয় শ্রমিকরা। এমনকি রাজধানীতে যে গাড়িগুলো ময়লা-আবর্জনা সরানোর কাজ করছে সেগুলোও তুরস্কে নির্মিত।
যে দেশটিকে পশ্চিমা দাতাগোষ্ঠীরা এক সময় এড়িয়ে চলতো তুরস্কের সঙ্গে তার দহরম-মহরমের বিষয়টি রহস্যের ব্যাপারই বটে।
এ রহস্য জানতে হলে একটু পেছনে তাকাতে হবে। গৃহযুদ্ধ বিধ্বস্ত সোমালিয়াকে বিদেশিরা পারতপক্ষে এড়িয়েই চলতেন।সোমালিয়ার সঙ্গে কোনো বাণিজ্যিক লেনদেন করতে হলে তারা পাশের দেশ কেনিয়ার মাধ্যমে করতেন। ২০১১ সালে তুর্কি প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান সোমালিয়া সফরে যান। সেসময় সশস্ত্র দেহরক্ষী ছাড়াই এরদোয়ান মোগাদিসুর রাজপথে হাঁটতে শুরু করেন। সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী । তারা রাস্তায় ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষদের সঙ্গে কথা বলেছেন। রাস্তার পাশ থেকে ময়লা মাখা শিশুদের কোলে তুলে নিয়েছেন। এরদোয়ানের স্ত্রী বুকে টেনে নিয়েছেন ঘরবাড়িহীন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মেয়েদের। বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান ও তার স্ত্রীর এই ভালোবাসায় মুগ্ধ সোমালি জনগণ। তাইতো এদেশের অনেক বাসিন্দা এখন তাদের ছেলেদের নাম রাখেন এরদোয়ান আর মেয়েদের ইস্তাম্বুল।
এরপর থেকে সোমালিয়ায় প্রবেশ করতে শুরু করে তুর্কি ব্যবসায়ীরা। মোগাদিসু বন্দরে দায়িত্বরত এক তুর্কি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত সেপ্টেম্বরে বন্দরের দায়িত্ব নেয়ার পর তুর্কি কোম্পানি প্রতি মাসে আয় করছে ৪০ লাখ ডলার।অবশ্য এর ৫৫ শতাংশই চলে যায় সোমালি সরকারের রাজস্ব ভাণ্ডারে। তবে আশার কথা, আয় বাড়ছে। অর্থাৎ বন্দরে জাহাজের সংখ্যা বাড়ছে, বাণিজ্য বাড়ছে।
মোগাদিসুর স্কুলগুলোতে সোমালীয়দের সঙ্গে পড়ছে তুর্কি ছেলে-মেয়েরা। সোমালি শিক্ষকরা তাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। শুধু ছাত্র-ছাত্রী নয় সোমালিরা দেশটিতে কর্মরত তুর্কিদের হাসিমুখে বরণ করে নিয়েছে। তাদের ভাষ্য, ২০ বছরেরও বেশি সময় পর আর বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে জাতিসংঘ তাদের দিয়েছে মাত্র পেন্সিল। আর মাত্র তিন বছরে সোমালিদের হাতে বিধ্বস্তপ্রায় মোগাদিসুকে কার্যকর একটি নগরীতে পরিণত করতে সাহায্য করেছে তুর্কিরা। তুর্কি-সোমালি প্রেমের বন্ধনের রহস্যটা এখানেই! -বিবিসি অবলম্বনে লিখেছেন শাহেদ হোসেন

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button