পাকিস্তানে চলছে শোকের মাতম
পেশোয়ারের আর্মি স্কুলে শিশুদের উপর তালেবান হত্যাযজ্ঞর ঘটনায় শোকে মুহ্যমান পাকিস্তান। চলছে তিন দিনের জাতীয় শোক। সব সরকারি আধা সরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে।
হাসপাতালে আহতদের আর্তচিৎকার, স্বজনদের আহাজারি আর বুকফাটা আর্তনাদে সন্তানকে শেষ বিদায়- পাকিস্তানের পেশোয়ারের সর্বশেষ চিত্র এমনই।
মঙ্গলবার পেশোয়ারের সেনাস্কুলে ঢুকে এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়েছে তেহরিক-ই-তালেবান (পাকিস্তান)৷ ফুলের পাপড়ির মতো ১৩২টি শিশু-সহ ১৪১ জন মুহূর্তে ছিন্নভিন্ন৷ সেনারা জঙ্গিদের উপর হামলা চালিয়েছে৷ তার বদলা নিতে সেনাস্কুলের শিশুদের নিকেশ করে দিল জঙ্গিরা৷ নির্মম প্রতিশোধের এই ছবি দেখে শিউরে উঠেছে বিশ্ববাসী৷
কফিনে শোয়ানো ফুটফুটে মুখগুলো রক্তাক্ত৷ অনেককেই দেখে চেনার উপায় নেই৷ খুব কাছ থেকে ছোড়া কালাশনিকভের গুলি মুখের আধখানা দেহ থেকে ছিঁড়ে নিয়ে গিয়েছে৷ গোটা পেশোয়ার আজ যেন শিশুর মর্গ৷
প্রায় আট ঘণ্টার সেনা অভিযানে নয় জঙ্গির মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে মঙ্গলবার বিকালে সেই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির অবসান ঘটে। বুধবারও পেশোয়ারের হাসপাতালে হাসপাতালে আহত সন্তানের জন্য অভিভাবকদের উদ্বিগ্ন প্রহর কাটছে। ফুলে ছাওয়া কফিন কাঁধে রাজপথে ছুটছে শবযাত্রীদের মিছিল।
পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে রাতেও মোম জ্বালিয়ে সমবেত হয়ে শোক প্রকাশ করে সাধারণ মানুষ। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রত্যয় জানান তারা।
পেশোয়ারের এক বাবা জঙ্গি হামলায় হারিয়েছেন তার ১৫ বছর বয়সী ছেলেকে। কান্নার দমকে ঠিকমতো কথা বলতে পারছিলেন না তিনি।
“যখন খবর পেলাম, আমি তখন আদালতে। খবর পেয়েই হাসপাতালে ছুটে গেলাম…….ওর বুকের ডান দিকে আর হাতে গুলি লেগেছিল।”
১০ বছর বয়সী গুল শেরের চাচা সাজিদ খান জানান, তার ভাইপোর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ছিল।
চোখ মুছতে মুছতেই তিনি বললেন, “আমরা এই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে পারব না, প্রতিশোধের জন্য শুধু আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারব।”
বর্বর এই হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো চলছে শোক আর নিন্দার ঝড়।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনসহ বিশ্ব নেতারা হামলার নিন্দা আর হতাহতের ঘটনায় শোক জানিয়েছেন।
শোক জানিয়েছেন এবছর নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী মালালা ইউসুফজাই। নারী শিক্ষা নিয়ে কাজ করায় পাকিস্তানি এই কিশোরী নিজেও তালেবানদের গুলিতে আহত হয়েছিলেন।
পেশোয়ারের স্কুল শিশুদের এই হত্যার ঘটনায় ‘হৃদয় ভেঙ্গে গেছে’ বলে জানিয়েছেন মালালা।
নিরাপরাধ শিশুদের এই হত্যাকাণ্ডকে ‘কাপুরুষোচিত’ বলেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন।
একই ধরনের মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের প্রতিবেশী দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার হামলার নিন্দা জানিয়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাকিস্তানের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন।
এমনকি যে সংস্থাটির সাথে পাকিস্তানি তালিবানদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, সেই আফগান তালিবানও এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, মহিলা ও শিশুদেরকে হত্যা করা ইসলাম সমর্থন করেনা।