কক্সবাজারে ৪ দেশের সম্মেলন
ইকোনমিক করিডোর গড়তে চুক্তি স্বাক্ষর
জি এম আশেক উল্লাহ ও গোলাম আজম খান কক্সবাজার: বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমার ইকোনমিক করিডোর (বিসিআইএমইসি) সড়কযোগাযোগের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন চার দেশের প্রতিনিধিরা। কক্সবাজারের ওশান প্যারাডাইস হোটেলে সম্মেলন কক্ষে দুই দিনের সম্মেলন শেষে গতকাল বৃহষ্পতিবার দুপুরে চার দেশের প্রতিনিধিরা চুক্তিতে সই করেন। বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র সচিব এম শহিদুল হক, চীনের পক্ষে ইয়ামিং ওয়াং, ভারতের পক্ষে প্রদীপ কুমার রাজওয়াট ও মিয়ানমারের পক্ষে রাষ্ট্রদূত মো: মিন্টু খান চুক্তিতে সই করেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছেন পররাষ্ট্রসচিব এম শহিদুল হক।
সম্মেলন শেষে বাংলাদেশের পরারাষ্ট্রসচিব এম শহিদুল হক সাংবাদিকদের জানান, দুই দিনের সম্মেলনে চারটি দেশের আলাদা আলাদা প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হয়। প্রত্যেকটি দেশ সাতটি প্রস্তাবনা ও একটি ফ্রেমওয়ার্ক নিয়ে আলোচনা করে। প্রস্তাবনায় কুনমিং থেকে কলকাতা পর্যন্ত ২৪৯০ কিলোমিটার করিডোর, জ্বালানি সহযোগিতা, বিনিয়োগ ও ব্যাংকিং, বাণিজ্য, সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য দূরীকরণ, টেকসই উন্নয়ন, মানুষের মধ্যে যোগাযোগ এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে।
পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক বলেন, চীনের কুনমিং থেকে মিয়ানমার বাংলাদেশের পুরো শরীর দিয়ে ভারতে চলে যাবে সড়কটি। এটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের জন্য খুলে যাবে পূর্বমুখী ব্যবসায় বাণিজ্যের দুয়ার।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল ইউমিং ওয়াং বলেন, আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়ন ছাড়া এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। সেই পথেই আমরা হাঁটছি।
বৈঠকে চীনের ৩৯ জন, ভারতের আটজন এবং মিয়ানমারের পাঁচজন প্রতিনিধি অংশ নেন। প্রথম যৌথ স্টাডি গ্রুপের বৈঠক গত বছর ডিসেম্বরে কুনমিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়। আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য বিসিআইএমের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় যার মাধ্যমে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে কুনমিংয়ের সাথে কলকাতার সংযোগ স্থাপিত হবে।
কুনমিং থেকে কলকাতার দূরত্ব ২৪৯০ কিলোমিটার। বাংলাদেশের প থেকে অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রস্তাব করা হয়। ভারতের প্রাথমিক ধারণা ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রয়োজন হবে। তবে কত বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে সেই সম্পর্কে চীন ও মিয়ানমার কোনো ধারণা দেয়নি।
এর আগে, বুধবার ১১টি নির্ধারিত বিষয়ে প্রতিনিধিরা তাদের নিজ নিজ দেশের অবস্থান তুলে ধরেন এবং তাদের কর্মপরিকল্পনা অন্য সদস্যদের অবহিত করেন। বৈঠকের উদ্দেশ্য, ধারণা (কনসেপ্ট) ও পরিধি, অপারেশন সম্পাদনের নীতি এবং যোগাযোগের বিষয়ে আলোচনা হয়। জ্বালানি সহযোগিতা, বিনিয়োগ ও ব্যাংকিং, বাণিজ্য, সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য দূরীকরণ, টেকসই উন্নয়ন, যোগাযোগ এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নিয়েও প্রতিনিধিরা আলোচনা করেন।
১৯৯৮ সালে ট্র্যাক টু কূটনীতির মাধ্যমে এই আলোচনা শুরু হয়। ২০১৩ সালে এই উদ্যোগ সম্পর্কে চীন ও ভারতের দুই প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর সরকারি পর্যায়ে আলোচনা শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছর ডিসেম্বর মাসে কুনমিংয়ে প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কুনমিং বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, প্রতিটি দেশ তাদের নিজস্ব জাতীয় পরিকল্পনা প্রস্তুত করে দ্বিতীয় বৈঠকে আলোচনা করবে। তৃতীয় বৈঠক যেটি কলকাতায় অনুষ্ঠিত হবে সেখানে চারটি পরিকল্পনার সব বিষয় বিবেচনা করে একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে।
চীনের কুনমিং শহরটি হাজার বছর আগে রেশম সুতা দিয়ে কাপড়সহ নানা সামগ্রীর জন্য বিখ্যাত ছিল। কুনমিং থেকে বণিকদল মিয়ানমার-বাংলাদেশ হয়ে রেশমসামগ্রী নিয়ে বাণিজ্যে যেত দিল্লি পর্যন্ত। বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে কুনমিং সফর করে সড়কটি বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়। সেই সূত্র ধরে উখিয়ার ঘুনধুম এলাকায় স্থাপন করা হয় মৈত্রী ফলক।