স্বর্গে যেতে চাইলে বাংলাদেশ ঘুরে আসুন
‘স্বর্গে যেতে চাইলে বাংলাদেশ ঘুরে আসুন’, কিংবা ‘যুক্তরাষ্ট্র আমাকে তাড়িয়ে দিলে কি হয়েছে, বাংলাদেশ তো আছে’। কথাগুলো আর কারও নয়, বিশ্বের সর্বকালের সেরা মুষ্টিযোদ্ধা (বক্সার) মুহম্মদ আলীর।
তবে আজ নয়, ৩৫ বছর আগে বাংলাদেশে ভ্রমণে এসে মুগ্ধ হয়ে এ কথা বলেছিলেন ক্রীড়াজগতের এই কিংবদন্তি। স্বয়ং তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নিমন্ত্রণে স্ত্রী ভেরোনিকাকে নিয়ে সপ্তাহব্যাপী সফরে এসেছিলেন তিনি। এসময় তাকে সম্মাননা হিসেবে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান।
সম্প্রতি পুনঃপ্রকাশিত ১৯৭৮ সালের এক দুর্লভ ডকুমেন্টারি থেকে এসব তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। ‘Muhammad Ali Goes East: Bangladesh’ I Love You’ (মুহম্মদ আলীর পূর্ব সফর: বাংলাদেশ, তোমায় ভালোবাসি) নামে ডকুমেন্টারিটি তৈরি করেছিলেন রেগিন্যাল্ড ম্যাসে।
সেসময় সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত বাংলাদেশের বয়স মাত্র ৭ বছর। আর মুহম্মদ আলীর খ্যাতির শীর্ষে। ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে লিওন স্পিঙ্কসের সঙ্গের বিখ্যাত ম্যাচে হারের পর হেভিওয়েট শিরোপা হাতছাড়া হয়ে যায় মুহম্মদ আলীর। এরপরই ছুটি কাটাতে আসেন বাংলাদেশে।
ঢাকার বিমানবন্দরে মুহম্মদ আলীকে বরণ করতে হাজির হয়েছিলেন ২০ লাখেরও বেশি ভক্ত। অবস্থানকালে বাংলাদেশের বিখ্যাত স্থানগুলো স্ত্রীকে নিয়ে চষে বেড়ান মুহম্মদ আলী। সুন্দরবন, সিলেটের চা বাগান, রাঙামাটির কাপ্তাই লেক, কক্সবাজার– কিছুই বাদ দেননি। তাকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সম্মাননা হিসেবে নাগরিকত্ব ও বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেওয়া হয়। যার ফলে দেশত্যাগের আগে তিনি স্বগোতক্তি করেছিলেন- যদি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া হয়, আমার আরেক ঘর আছে।
কক্সবাজারে একখণ্ড জমিও উপহার দেওয়া হয় মুহম্মদ আলীকে, একটি স্টেডিয়াম তার নামে নামকরণ করা হয়। ডকুমেন্টারিতে বাংলাদেশে ফিরে এসে একটি বাড়ি বানানোর ইচ্ছা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘স্বর্গে যেতে চাইলে বাংলাদেশে আসুন।’
ঢাকা স্টেডিয়ামে ১২ বছর বয়সী এক বালকের সঙ্গে তিনি প্রীতি বক্সিং ম্যাচে অংশ নিয়েছিলেন। ছেলেটি অবশ্য তাকে নকআউটে হারিয়ে দিয়েছিল!
সেসময় মুহমদ আলীর ক্যারিয়ার শেষদিকে থাকলেও খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছেছিলেন। তাকে প্রায়ই বৈশ্বিক আইকন বলা হতো। তিনি ছিলেন পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত এবং সুপরিচিত মুখ। বিশেষ করে ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিপক্ষে স্পষ্ট অবস্থান নিয়ে তিনি তুমুল আলোড়ন তোলেন। কঙ্গো, ফিলিপাইনসহ সেসময়ের বিভিন্ন অনুন্নত দেশে তিনি বেশ কিছু বিখ্যাত ম্যাচ খেলেছিলেন।
নিজ দেশ যুক্তরাষ্ট্র তাকে নিয়ে সমালোচনা করলেও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার কারণে মুসলিম বিশ্বে এবং নিজের কৃষ্ণবর্ণ নিয়ে গর্বের কারণে আফ্রিকায় তিনি অকুণ্ঠ জনপ্রিয়তা লাভ করেন। অবশ্য এক দশকের মধ্যেই এ চিত্র অনেকটা পালটে যায়, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের ঘনিষ্ঠজনে পরিণত হন।
৭১ বছর বয়সী মুহম্মদ আলী বর্তমানে একজন আন্তর্জাতিক কূটনীতিক হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করে থাকেন। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি তাকে শতাব্দীর সেরা ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছে।
তবে সেসময় মুহম্মদ আলীর বিভিন্ন দেশ সফর নিয়ে বেশ সমালোচনা হয়েছিল। কেননা, উগান্ডার ইদি আমিন, ইরাকের সাদ্দাম হুসেইনের মতো সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে উঠে শাসকদের সঙ্গে তার সখ্যতা ছিল চোখে পড়ার মতো। জিয়াউর রহমানের আমন্ত্রণেও তিনি একই কারণে সাড়া দিয়েছিলেন বলে অনেকে মনে করেন।
১৯৪২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকিতে ক্যাসিয়াস ক্লে জুনিয়রের জন্ম হয়। ২২ বছর বয়সে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পর নাম পরিবর্তন করে মুহম্মদ আলী রাখেন। তার কন্যা লায়লা আলীও বর্তমানে একজন পেশাদার নারী বক্সার।