ইমিগ্র্যাশন নিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ছয়টি পরিকল্পনা

Cameronব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ২০ ডিসেম্বর ২০১৪ ডেইলি এক্সপ্রেসে নিজের এক কলাম লিখেছেন। তাতে তিনি ব্রিটেনের ইমিগ্র্যাশন সিস্টেম নিয়ে নিজের ছয়টি পরিকল্পণার কথা পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেছেন। এর আগেই আচ করেছিলাম, যখন টেলিফোনে কথা হচ্ছিলো সিনিয়র প্রেস সেক্রেটারি অ্যালেস্টার ক্যাম্পবেলের সাথে, তারও আগে প্রাইম মিনিস্টার প্রেস অফিসের জেসমিনের সাথে কথা হয়েছিলো। ধারণাই ছিলো এরকম কিছু একটা আসছে। প্রাইম মিনিস্টার ডেভিড ক্যামেরন ইমিগ্র্যাশন নিয়ে বিশাল এক চাপ- ভিতরে এবং বাহিরে রয়েছেন, এই অবস্থায় নিজের পরিকল্পনা জানান দিবেনই। ঠিক তাই হলো। ডেইলি এক্সপ্রেসে ডেভিড ক্যামেরন তার পরিকল্পনার নাম দিয়েছেন ফেয়ার ইমিগ্র্যাশন সিস্টেম, তবে ব্রিটেন ফার্স্ট। এই লেখাতে ডেভিড ক্যামেরন পুরো ইমিগ্র্যাশন ব্যবস্থা নিয়ে যেমন কথা বলেছেন, একই সাথে অতীতের লেবার দলের নীতিকেও তিনি ভ্রান্ত নীতি বলে সমালোচনা করেছেন। সেই সাথে নিজের প্রথম ডাউনিং ষ্ট্রীটে ঢুকার পর ইমিগ্র্যাশন নিয়ে যে পরিকল্পণা করেছিলেন, তার প্রসঙ্গ টেনে একনাগারে নিজের ইমিগ্র্যাশন সংক্রান্ত কাজের ফিরিস্তি তুলে ধরে সুনির্দিষ্ট ছয়টি পরিকল্পণার কথা জানিয়েছেন। ব্রিটেনের ইমিগ্র্যাশন নিয়ে ডেভিড ক্যামেরনের ছয়টি পরিকল্পনা হলো-
০১) ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো থেকে ইমিগ্র্যান্ট আসা ক্রমান্বয়ে হ্রাস করা-যারা ব্রিটেনে শুধু মাত্র চাইল্ড বেনিফিট, ট্যাক্স ক্রেডিট, হাউজিং বেনিফিট ক্লেইমের জন্য ব্রিটেনে আসার ইচ্ছা বা পরিকল্পনা করছেন,তাদেরকে ব্রিটেনে আসার পর কমপক্ষে চার বছর থাকার পরেই উপরোক্ত বেনিফিট ক্লেইম করার যোগ্য হবেন। এর অর্থই হলো ইইউ থেকে ইমিগ্র্যান্ট আসা কমিয়ে আনা। ডেভিড ক্যামেরন লিখেছেন এতে তাদের কাছে ব্রিটেন আর খুব আকর্ষণীয় বাসস্থান হবেনা ।
০২) ডেভিড ক্যামেরন সোশ্যাল হাউজিং এর ব্যাপারেও নতুন পরিকল্পনার কথা লিখেছেন। তাতে তিনি বলছেন, সোশ্যাল হাউজিং ক্লেইম করতে হলে ইমিগ্র্যা -ন্টকে ঐ ক্লেইমকৃত এলাকায় নিদেন পক্ষে চার বছর বাস করার প্রমাণ দিতে হবে।
০৩) তৃতীয় যে পরিকল্পনার কথা ডেভিড লিখেছেন, তাতে তিনি বলছেন,ইইউ নাগরিক ব্রিটেনে ইমিগ্র্যান্ট হয়ে নিজে ব্রিটেনে থাকলে, অথচ নিজ সন্তান ব্রিটেনের বাইরে (ইইউতে) থাকার পরে চাইল্ড বেনিফিট, চাইল্ড ট্যাক্স ক্রেডিট ক্লেইম করতে পারবেননা। এতে তিনি যত দীর্ঘ সময় ব্রিটেনে কাজ করেননা কেন- তাতেও তিনি বিবেচিত হবেননা।
০৪) ইউকে ট্যাক্স পেয়ার ইউর ইমিগ্র্যান্টদের জব সিকার এলাউন্স সাপোর্ট করবেননা। ডেভিড ক্যামেরন লিখেছেন, ইউনিভার্সাল ক্রেডিট সিস্টেম ওভারহোল্মিং হওয়ার পরে আমরা নতুন আইন করেছি ইইউর জব সিকার্সদের জন্য, যাতে তারা এটা ক্লেইম করতে পারবেননা। তাই আমরা পুরনো সিস্টেমের বিপরীতে নতুন সিস্টেম টিপিক্যালি ইইউর ইমিগ্র্যান্ট
৬০০ পাউন্ড পর্যন্ত জব সিকার্স ক্লেইম করতে পারবেন।
০৫) ডেভিড ক্যামেরন লিখেছেন, কাজ খোজার জন্য ইইউর নাগরিকদের জন্য আমরা আরো কড়াকড়ি আরোপ করতে চাই। আর তাহলো ব্রিটেনের আসার পরে ছয় মাসের মধ্যে যদি তিনি কাজ যোগাড় করতে না পারেন, তবে ব্রিটেন ত্যাগ করতে হবে।
০৬) ডেভিড ক্যামেরন এবিউস এর বিষয়ে আরো শক্তিশালী ক্ষমতা এপ্লাইয়ের পক্ষে। তিনি লিখেছেন, ফ্রি মুভম্যান্টের সুযোগ নিয়ে ক্রিমিনাল, ফ্রড, ভিক্ষুক ও রাস্তায় ঘুমানোর লোক, ফ্রড ভ্রমণকারী, ক্রিমিনাল রেকর্ডধারীদের ব্রিটেন ডিপোর্টেড এবং পূণরায় ব্রিটেনে ফিরে আসার পথ বন্ধ করে দিতে চাই।
ডেভিড ক্যামেরন তার এই ছয়টি পরিকল্পনার কথা লিখে লিখেছেন, ব্রিটেনের ইমিগ্র্যাশন এবং ওয়েলফেয়ার সিস্টেম সিকিউর করার জন্য এইগুলো আমরা করতে চাই। এই সব পরিকল্পনা আমরা আলাপ আলোচনা করার পর পরিষ্কার সিদ্ধান্ত নিয়ে তারপর আমরা সিদ্ধান্ত নেবো ইইউর ভিতরে থাকবো কি থাকবোনা এবং সেজন্যে ২০১৭ সালে আমরা রেফারেন্ডামের ব্যবস্থা করবো।
ডেভিড ক্যামেরন তার এই ছয় পরিকল্পনা তুলে ধরার আগে লিখেছেন, ব্রিটেনের জন্য ইমিগ্র্যান্ট অবশ্যই ভালো এবং তারা আমাদের অর্থনীতি ও সমাজ জীবনে অবশ্যই ভুমিকা রাখছেন। ইমিগ্র্যান্টদের জন্য দরজা বন্ধ করার মানেই হলো স্কিল ও ভালো ইমিগ্র্যান্ট আসার পথ বন্ধ করে দেয়া। তবে ডেভিড ক্যামেরন এও লিখেছেন বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে ইমিগ্র্যান্টরা এখানে আসেন একেবারে শূন্য হাতে এবং আসার পর নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন করেন এবং ব্রিটিশ সোসাইটিতেও ভুমিকা রাখেন।তাই তাদের জন্য এর দরজা বন্ধ মানেই হলো দক্ষ পেশাদার এবং ব্রিটিশ চলমান জীবন ধারাকে ব্যহত করা। আমরা ইমিগ্র্যান্টদের আসা বন্ধ নয়, কন্ট্রোল করতে চাই ফেয়ার সিস্টেমের মাধ্যমে ।
তিনি বিগত লেবার সরকারের ক্ষমতার সময়ে দুই তৃতীয়াংশ ইমিগ্র্যান্ট ব্রিটেনের আসার পর অবৈধভাবে থাকার রেকর্ড এবং ব্রিটিশ সমাজে কেওজ সৃষ্টির জন্য লেবার দলের কঠোর সমালোচনা করেন।
তিনি লিখেছেন, লেবার দল নেতা এড মিলিব্যান্ডের ইমিগ্র্যাশন নিয়ে ক্লিয়ার কোন পরিকল্পনা নেই। তিনি আরো লিখেছেন এড মিলিব্যান্ডের যা আছে তা কেবলমাত্র হৈ চৈ বা শোরগোল আর ইমিগ্র্যাশন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনা, যা তিনি তার ক্ষমতার শুরুতে এসে পেয়েছিলেন বলে লিখেছেন।
ডেভিড লিখেছেন, এই সমস্যা কেবলমাত্র ইমিগ্র্যান্টদের সংখ্যা দিয়ে নয় বরং আগের ইমিগ্র্যাশন সিস্টেমই ভুলে ভরা ছিলো। তিনি আরো লিখেছেন, এমনও অনেক ইমিগ্র্যান্ট আছেন যারা জীবনে কখনো ট্যাক্স পে করেননি অথচ দিনের পর দিন বেনিফিট নিয়ে দিনযাপন করেছেন।
তিনি লিখেছেন আমি আমার অফিসে প্রথমে ঢুকেই এই সত্যিকারের সমস্যা অনুধাবন ও চিহ্নিত করার পর রিয়েল সমাধানের পথে এগিয়েছি- সত্যিকারের জব করেছি বলে তিনি লিখেছেন।
ডেভিড লিখেছেন ১৯৯০ সালের পর ইউরোপের ইমিগ্র্যান্টদের গণহারে আসার পথ সিগনিফিক্যান্টলি আমরা কমিয়ে আনার সূচনা করেছি। সফলও হচ্ছি। তিনি আরো লিখেছেন, ক্ষমতায় এসে ভূয়া কলেজ এর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছি এবং ভূয়া কলেজ ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছি।
আমরা অবৈধ ইমিগ্র্যান্টদের ধরতে তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স কেড়ে নিয়েছি, ব্যাংক একাউন্ট খোলার পথ বন্ধ করেছি, ল্যান্ড লর্ডদেরকে ইমিগ্র্যান্টদের ষ্ট্যাটাস চেকের ব্যবস্থা করেছি। ক্যামেরন আরো লিখেছেন, আমরা এতো সবের মধ্য দিয়ে অবৈধদের চিহ্নিত করার পরে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি।
ডেভিড আরো লিখেছেন, আমরা নতুন নিয়ম করেছি। আইনের পরিবর্তন এনেছি। আগে ডিপোর্ট এবং পরে এপিল করার ব্যবস্থা চালু করেছি। বিদেশী ক্রিমিনালসদের যাদের আমরা ধরেছি, তাদের আগে ডিপোর্ট করেছি। নিজ দেশ থেকে এপিলের সুযোগ দিয়েছি। যারা ধরা পড়ার পর এপিলের সুযোগ নিয়েছেন, তাদের আমরা একেবারেই ডিপোর্ট করেছি- ব্রিটেনে ফিরে আসার পথ বন্ধ করে দিয়েছি।
ডেভিড লিখেছেন, আগামী এপ্রিল থেকে সকল এয়ারপোর্ট এবং চেক পয়েন্ট ও পোর্টসমূহে কম্প্রিহেনসিভ চেকিং সিস্টেম চালু হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে থেকে যারা আসবেন তাদের প্রত্যেককেই এই কম্প্রিহেনসিভ চেকিং এর মুখোমুখি হতে হবে।
ডেভিড লিখেছেন, বিগত কয়েক দশকে অধিক সংখ্যক ইমিগ্র্যান্ট ইউরোপ থেকে ব্রিটেনে এসেছেন, যা আমাদের জনগণের উপর বোঝা হয়ে আছেন। ব্রিটিশ জনগন হতাশ। সেজন্যেই আমরা ক্লিয়ারলি পরিবর্তন আনতে চাচ্ছি, আমরা একটা স্বচ্ছ পরিকল্পনা সাজিয়েছি। কারণ আমরা স্বচ্ছ ইউরোপ চাই। আমাদের পরিকল্পনা তাই একেবারেই পরিষ্কার এবং স্বচ্ছ।
ডেভিড ক্যামেরন লেবার দলের ইমিগ্র্যাশন নীতির সমালোচনার সাথে সাথে ইউকিপেরও সমালোচনা করেন। তিনি লিখেছেন, ইউকিপ এড মিলিব্যান্ড ও এড বলসকে ডাউনিং ষ্ট্রীটে পাঠাতে চায়, যাদের ইমিগ্র্যাশন নিয়ে কোন স্বচ্ছ প্ল্যান নেই। কেবল ইমিগ্র্যাশন সিস্টেম ম্যাস করা ছাড়া।
ডেভিড সবশেষে এসে লিখেছেন, আমরা স্বচ্ছ ভাবে ইমিগ্র্যাশন কন্ট্রোল করতে চাই। আর লেবার ইউকিপ চায় ইমিগ্র্যাশন ও অর্থনীতিতে কেওস। আমরা ইইউ রেফারেন্ডাম চাই- তারা রেফারেন্ডাম চায়না। সুতরাং ফেয়ার ইমিগ্র্যাশন সিস্টেম- যেখানে ব্রিটেন ফার্স্ট- এই নীতি জনগণ চান নাকি ইমিগ্র্যাশন কেওস চান- সেটা জনগণকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button