অশালীন মন্তব্য নয়, ইতিহাসের নিরিখে কথা বলুন : তারেক রহমান

Tareq Rahmanআওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও দলীয় নেতাদের অশালীন মন্তব্য ছেড়ে শালীন ভাষায় ইতিহাসের নিরিখে কথা বলতে আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
শনিবার যুক্তরাজ্য বিএনপির মাধ্যমে লন্ডন থেকে তারেক রহমান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে তিনি এ আহবান জানান।
তারেক রহমান বলেন, তার বক্তব্যের কোন অংশটি ভুল কিংবা অপ্রাসঙ্গিক এসবের কোনো যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা না দিয়েই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দলের কিছুসংখ্যক নেতা তার উপর অশালীন বাক্যবানে হামলে পড়েছে। তার বিরুদ্ধে ক্রমাগত অশ্লীল ও অশোভন উক্তি করে চলেছে।
শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান বলেন, ইতিহাসকে আপন গতিতে চলতে দিন। নিজের স্বার্থে সেটিকে বাধাগ্রস্ত করবেন না। ইতিহাসকে আদালতের কাঠগড়ায় তুলবেন না। বরং ইতিহাসবিদদের নির্মোহ তথ্য-উপাত্তে কালের পরিক্রমায় প্রকৃত সত্য নিয়ে ইতিহাস আপন আলোয় উদ্ভাসিত হবে।
ইতিহাসের আলোকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে ২০১৪ সালে বিভিন্ন সময়ে দেয়া নিজের বক্তব্য সম্পর্কে তারেক রহমান বলেন, তিনি বেশ কয়েকটি বক্তৃতায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বইপত্র এবং দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও জার্নালের রেফারেন্স তুলে ধরে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট ও স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ভূমিকা তুলে ধরেছিলেন। সেইসব বক্তৃতায় অত্যন্ত প্রাসঙ্গিকভাবেই সেই সময়ের  গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ভূমিকাও তার বক্তৃতায় উঠে এসেছে।
তিনি বলেন, ওইসব বক্তব্যে তিনি যা বলেছেন- এর কোনো কথাই তার মনগড়া কিংবা বানোয়াট ছিল না। একইসঙ্গে তিনি এ-ও বলেছিলেন, তার কোনো বক্তব্য ভুল প্রমাণিত হলে এবং এর বিপরীতে দলিল-প্রমাণসহ প্রকৃত তথ্য উপস্থাপিত হলে তিনি সেটি শুধরে নিতে কোনো দ্বিধা করবেন না।
তারেক রহমান বলেন, যুক্তি ও তথ্য-প্রমাণসহ তার উপস্থাপিত সব তথ্যই আওয়ামী লীগের চোখে ‘অপপ্রচার’ বলে গণ্য হচ্ছে এবং আওয়ামী লীগ তাদের ভাষায় এ ‘অপপ্রচার’ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির হবু কান্ডারী বলেন, আওয়ামী লীগ যদি মনে করে এসব বন্ধ হওয়া দরকার- তাহলে এ কাজটি তাদেরই আগে বন্ধ করা দরকার। কারণ তারাই শুরু করেছে।
রাজনীতি হওয়া উচিৎ দেশ এবং জনগণের উন্নয়নের জন্য এ কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, বরাবরই শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক শক্তি ও সমর্থনকে ব্যাক্তিগত রেষারেষি এবং প্রতিহিংসায় পরিণত করেন।
তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি দীর্ঘসময় রাষ্ট্রপরিচালনা করেছে। কিন্তু বিএনপি কখনোই কোনো প্রতিহিংসার আশ্রয় নেয়নি। কারো বিরুদ্ধে মিথ্যাচারে লিপ্ত হয়নি। ক্ষমতায় গিয়ে নিজের মতো ইতিহাস বিনির্মাণের চেষ্টা করেনি। এমনকি আদালতের আশ্রয় নিয়ে ইতিহাসের সত্য-মিথ্যা নিরুপণেরও চেষ্টা করেনি।
তারেক রহমান অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় গিয়েছে তারা ইতিহাস পাল্টে দেয়ার চেষ্টা করেছে। আদালতের আশ্রয় নিয়ে জনগণের উপর ইতিহাস চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে। এমনকি স্কুলের পাঠ্যপুস্তক থেকে স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, স্বাধীনতার অন্যতম পথিকৃত মাওলানা ভাসানীর নামও বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান বলেন, তার মা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যিনি বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী এবং তিনবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। শেখ হাসিনা প্রায়শই  তার সম্পর্কে অশোভন মন্তব্য করেন, নানারকম কটুক্তি করেন।
তারেক রহমান বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে আমার বাবা যখন মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে পাকিস্তানি শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করছেন- তখন আমরা ছোট্ট দুই ভাই মায়ের আশ্রয়ে এক অনিশ্চিত গন্তব্যে।
তারপরও খোদ শেখ হাসিনা এবং তার দলের কিছুসংখ্যক নেতা এ সম্পর্কে নির্দ্বিধায় অশালীন-অরুচিকর মন্তব্য করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তারেক রহমান প্রশ্ন করে বলেন, কখনো তিনি নিজে কিংবা তার দলের নেতাকর্মীরা প্রশ্ন করেননি, ৭১ সালের ওই সময়টিতে কোথায় ছিলেন শেখ হাসিনা? কাদের আশ্রয়ে ছিলেন তিনি? মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এত নিরাপদে কেমন করে তার সন্তানের জন্ম হয়েছিলো? মুুক্তিযোদ্ধাদের যখন পাকিস্তানি হায়েনারা নির্মমভাবে হত্যা করছিলো- তখন শেখ হাসিনাকে তারা কেন এত সহায়তা করেছিলো?  কারা করেছিলো? কেন করেছিলো?
তারেক রহমান বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা কখনোই এসব নিয়ে প্রশ্ন্ন না করলেও শেখ হাসিনা এবং তার দলের কিছুসংখ্যক নেতা এর মর্যাদা রাখেননি।
শেখ হাসিনাকে প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নামে সমপ্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো সিটি প্রশাসন ‘জিয়াউর রহমান ওয়ে’ নামে একটি সড়কের নামকরণ করেছে। জিয়াউর রহমানের নামে শিকাগোতে সড়কের নামকরণ মেনে নিতে পারছেন না তিনি। শেখ হাসিনা তাই এ নামকরণ বাতিলের জন্য তিনি রাষ্ট্রীয় প্রশাসনকে ব্যবহার করছেন। এই অপতৎপরতার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ দূতাবাসকেও জড়িত করা হয়েছে।
প্রশাসনকে ব্যবহার এই ধরনের প্রতিহিংসা দেশ ও জনগণের জন্য কোনো সম্মান বয়ে আনতে পারে না- এমনকি এটি রাষ্ট্রীয় শিষ্টাচার ও সংস্কৃতি বিরোধী বলে মন্তব্য করেন তারেক রহমান।
বিবৃতিতে তারেক রহমান আরো অভিযোগ করে বলেন, তার সম্পর্কে শেখ হাসিনা প্রায় সময়ই বেফাস মন্তব্য করেন। তার সম্পর্কে শেখ হাসিনার সামপ্রতিক মন্তব্য কোনো সুস্থতার পরিচয় বহন করে না বলেও তারেক রহমান উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, আমার জীবনযাপন সম্পর্কে শেখ হাসিনা না জেনেই বিভিন্ন সময় নানারকম মন্তব্য করেন। তবে এটি তার স্বভাবজাত ভেবে আমার মা কিংবা আমাদের পরিবার সবসময়ই এসব নোংরামির জবাব দেয়া থেকে সচেতনভাবেই বিরত থেকেছি।
তারেক রহমান প্রশ্ন করে বলেন, বিএনপি’র  নেতাকর্মীরা যদি বিদেশে শেখ হাসিনার সন্তানের যাবতীয় অনৈতিক জীবনাচার এবং অপকর্মের তথ্য-প্রমাণ হাজির করে এবং শেখ হাসিনা যেসব শব্দ ব্যবহার করেন যেমন ‘জানোয়ার’, ‘শকুন’, তার পুত্র সম্পর্কেও যদি এসব ভাষা প্রয়োগ করা হয়- তখন এসব কি শেখ হাসিনার কাছে ভালো লাগবে?
পরিশেষে বিবৃতিতে হযরত আলী (রা.) একটি বাণীর উদ্ধৃতি দিয়ে তারেক রহমান বলেন, তিনি বলেছেন- যুক্তিবুদ্ধিহীনরাই অশ্লীল কথা বলে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button