সৈয়দ কায়সারের ফাঁসির আদেশ
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক জাতীয় পার্টি সরকারের প্রতিমন্ত্রী হবিগঞ্জের সৈয়দ মুহম্মদ কায়সারকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগের মধ্যে ১৪টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ৩ সদস্যের বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অপর ২ সদস্য হলেন- বিচারপতি মুজিবুর রহমান মিয়া এবং বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম। এর আগে বেলা ১১টা ১০ মিনিটে সৈয়দ কায়সারের বিরুদ্ধে ৪৮৪ পৃষ্টা রায়ের সারসংক্ষেপ পড়ে শোনানো হয়। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সৈয়দ মুহাম্মদ কায়সারকে পুলিশি নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাকে ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসা হয়।
এদিকে রায়কে ঘিরে ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।
সোমবার বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ রায় ঘোষণা এ দিন ধার্য করেন।এর আগে ২০ আগস্ট একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতনসহ ১৬টি অভিযোগে দায়ের করা মামলায় উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে রায় অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন ট্রাইব্যুনাল।
১৬টি ঘটনায় ট্রাইব্যুনাল আইনে কায়সারের বিরচদ্ধে চলতি বছর ২ ফেব্রুয়ারি অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। এর পর ৪ মার্চ থেকে রাষ্ট্রপক্ষের সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। কায়সারের বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগ বিষয়ে প্রসিকিউশন আইনি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে।
গত ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ৬ কার্যদিবস প্রসিকিউশন এবং ৭ আগস্ট থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত আসামিপক্ষ ৭ কার্যদিবস যুক্তি উপস্থাপন করে। গত ৯ মার্চ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত কায়সারের বিরচদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগমসহ ৩২ জন সাক্ষী। অন্যদিকে আসামিপক্ষ কোনো সাফাই সাক্ষী হাজির করতে পারেনি।
গত বছর ১৫ মে কায়সারের বিরচদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। ২১ মে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। আসামিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৪ আগস্ট বিশেষ বিবেচনায় কায়সারকে শর্ত সাপেক্ষে জামিন দেন ট্রাইব্যুনাল-২। অভিযোগ গঠনের শুনানিতে তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন।
সৈয়দ কায়সারের বাবা সৈয়দ সাঈদউদ্দিন ১৯৬২ সালে সিলেট-৭ আসন থেকে কনভেনশন মুসলিম লীগ থেকে এমএনএ নির্বাচিত হন। আর সৈয়দ কায়সার ১৯৭০ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্িবতা করে পরাজিত হন।
প্রসিকিউশনের অভিযোগে বলা হয়, একাত্তর সালে দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ৫০০ থেকে ৭০০ ‘স্বাধীনতাবিরোধীকে’ নিয়ে ‘কায়সার বাহিনী’ গঠন করেন এই মুসলিম লীগ নেতা। তিনি নিজে ছিলেন ওই বাহিনীর প্রধান। এ বাহিনীর নিজস্ব ইউনিফর্ম ছিল।
সৈয়দ কায়সারের বিরচদ্ধে অভিযোগ তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পথ দেখিয়ে বিভিন্ন গ্রামে নিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের লোক এবং হিন্দু সমপ্রদায়ের ওপর দমন অভিযান চালাতেন। পরে স্বাধীনতার ঠিক আগে তিনি আত্মগোপন করেন। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর ১৯৭৮ সালে আবারও রাজনীতিতে সক্রিয় হন কায়সার।
১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১৭ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সাংসদ নির্বাচিত হন। পরে জিয়াউর রহমানের সময়ে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন এবং হবিগঞ্জ বিএনপির সভাপতি হন। এরশাদের আমলে তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। ১৯৮৮ সালে হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য হন।