শুভ বড়দিন : শুরু হয়েছে বিশ্বজুড়ে আনুষ্ঠানিকতা

Christmasশুভ বড়দিন আজ। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। খ্রিষ্ট ধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্ট এই পুণ্যময় দিনে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে পবিত্র বেথেলহেমে গরিব কাঠমিস্ত্রির গোয়ালঘরে মাতা মেরির গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, ঈশ্বরের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য একজন নারীর প্রয়োজন ছিল। সেই নারীই কুমারী মেরি। ধর্ম বিশ্বাস বলে ‘ঈশ্বরের অনুগ্রহে ও অলৌকিক ক্ষমতায়’ মেরি কুমারী হওয়া সত্ত্বেও গর্ভবতী হন। ঈশ্বরের দূত গাব্রিয়েল-এর কথামতো শিশুটির নাম রাখা হয় যীশাস, যা বাংলায় যীশু। ধর্মে শিক্ষাভ্রষ্ট তৎকালীন ইহুদি সমপ্রদায়ের মধ্যে ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসেবে আবির্ভূত এ শিশুটিই বড় হয়ে খ্রিষ্ট ধর্ম প্রচার করেন। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, যীশুর জন্মের অনেক বছর পর থেকে খ্রিস্টানরা এ দিনটিকে আনন্দ ও মুক্তির দিন হিসেবে পালন করতে শুরু করে। ৪৪০ খ্রিস্টাব্দে পোপ এ দিনটিকে স্বীকৃতি দেন। তবে উৎসবটি জনপ্রিয়তা পায় মধ্য যুগে। সে সময় এর নাম হয় ‘ক্রিসমাস ডে’। খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীরা বিশ্বাস করেন, মানবজাতিকে সুপথ প্রদর্শন, সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করা এবং সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচারের জন্য যীশু জন্ম নিয়েছিলেন।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো লন্ডনের খ্রিস্টান সমপ্রদায়ও আজ যীশুখ্রিস্টের জন্মোৎসব পালনে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। আজ তারা যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, আনন্দ-উৎসব ও প্রার্থনার মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করবেন। দিবসটি উপলক্ষে লন্ডনসহ সারা দেশে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। আজ বৃহষ্পতিবার ও কাল শুক্রবার সরকারি ছুটি।
বড় দিন উপলক্ষে ব্রিটেনের সব গির্জা, প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও, র‌্যাডিসন ওয়াটার ব্লুসহ অভিজাত হোটেল ও স্থাপনাদিতে আলোকসজ্জা আর ফুলে ফুলে সাজানো হয়েছে। অভিজাত হোটেলগুলোতে সাজানো হয়েছে ‘ক্রিসমাস ট্রি’। এসব হোটেলে বড়দিনের আয়োজনে থাকছে দেশী-বিদেশী নানা ধরনের খাবার ও ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের কেক। থাকবে শিশুদের জন্য বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, ফ্যাশন শো, জাদু প্রদর্শনীসহ নানা আয়োজন। এছাড়া গির্জার বেশির ভাগেই থাকছেন শিশুদের প্রিয় সান্তাক্লজ। তিনি শিশুদের মাঝে উপহারসামগ্রী বিতরণ করবেন। বিভিন্ন গির্জার ভেতর ও বাইরে তৈরি করা হয়েছে যীশুর জন্ম-ইতিহাসভিত্তিক ‘গোশালা’। দিনটি উপলক্ষে অনেক খ্রিস্টান পরিবারে তৈরি হবে কেক, পিঠা ও বিশেষ খাবার। এছাড়া, সাজসজ্জা তো রয়েছেই। এদিন আত্মীস্বজন পরস্পরের বাড়িতে বেড়াতে যান। অনেক এলাকায় আয়োজন করা হয় প্রীতিভোজের। দিনটিকে উপলক্ষ করে অনেক গির্জার বাইরে ইতিমধ্যেই মেলা বসেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আজ বিভিন্ন গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা ও খ্রিস্টযোগ হবে। এর বাইরে পারিবারিকভাবেও দিনটি উদযাপনের আয়োজন করা হয়েছে। খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাসীদের অনেকের ঘরেই বসানো হয়েছে প্রতীকী গোশালা। বেথেলহেমের গরিব কাঠুরের গোয়াল ঘরে যীশুখ্রিস্টের জন্ম-এ বিশ্বাস থেকে গোশালার প্রতিকৃতিকে গুরুত্ব দেয়া হয়। লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ বড়দিন উপলক্ষে সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। বিভিন্ন গির্জায় পুলিশ সতর্কাবস্থায় অবস্থান করছেন।
দিনটি উদযাপন উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন। বড়দিন উপলক্ষে খ্রিস্টান সমপ্রদায়কে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button