হেফাজত সম্পর্কে সরকারের প্রেসনোট
সোমবার, সরকার নিম্নবর্ণিত প্রেসনোট জারি করেছে। প্রেসনোটে বলা হয়, গত ৫ মে ২০১৩ তারিখে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নামক একটি অরাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানারে ঢাকা মহানগরের ৬টি প্রবেশপথে অবরোধের ঘোষণা দেয়। অবরোধ পরবর্তীতে তারা মতিঝিল শাপলা চত্বরে মোনাজাত পরিচালনার মাধ্যমে তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি সমাপ্ত ঘোষণা করবেন মর্মে অঙ্গীকার করেন। কিন্তু ৫ মে সকাল থেকেই তাদের উচ্ছৃঙ্খল নেতা-কর্মীরা ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা বিশেষ করে পুরানা পল্টন, নয়াপল্টন, মতিঝিল শাপলা চত্বর, দৈনিক বাংলা মোড়, স্টেডিয়ামসহ গোটা এলাকায় হামলা, ভাংচুর, বোমাবাজি এবং অগ্নিসংযোগ শুরু করে। তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অফিস (সিপিবি অফিস, আওয়ামী লীগ অফিস ইত্যাদি), পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনা (মতিঝিল থানা, পল্টন থানা, ডিসি ট্রাফিক পূর্ব অফিস, বিভিন্ন পুলিশ বক্স), বিভিন্ন ব্যাংক, ব্যাংকের এটিএম বুথ, বায়তুল মোকাররমের স্বর্ণের দোকান, ফুটপাতের বইয়ের দোকান, এমনকি বিভিন্ন দোকানে থাকা কয়েকশ’ কুরআন শরীফ, হাদিস-কিতাবেও অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেয়।
হেফাজত কর্মীরা ইলেকট্রিক করাত দিয়ে রাস্তার মাঝখানে এবং পার্শ্বে থাকা গাছ কেটে রাস্তায় ব্যারিকেডের সৃষ্টি করে পুলিশের গাড়িসহ গণপরিবহনে হামলা চালায় ও অগ্নিসংযোগ করে। দিনব্যাপী তাদের হামলায় পুলিশ সদস্য, পথচারী, পরিবহন শ্রমিকসহ মোট ১১ জন নিহত হয়। বিভিন্ন রাস্তার ইলেকট্রিক পোল উপড়ে ফেলায় সন্ধ্যার পরে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। অন্ধকারে শাপলা চত্বরের আশপাশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়সহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক ভবনকে টার্গেট করে তারা হামলা চালাতে থাকে। তাদেরকে তাদের এ হিংসাত্মক হামলা থেকে বিরত থাকতে এবং মতিঝিল শাপলা চত্বর থেকে সরে যাওয়ার জন্য বার বার অনুরোধ করা হলে তারা সরে না গিয়ে তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দেয়। এমতাবস্থায় দেশের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকা ধ্বংসাত্মক হামলা থেকে রক্ষার্থে মতিঝিল শাপলা চত্বর থেকে তাদেরকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। পরিকল্পনামাফিক রাত ২টার দিকে মাইকে তাদেরকে ঐ স্থান ত্যাগ করার জন্য বারবার অনুরোধ করা হয়। এতে তারা আরও উত্তেজিত হয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালাতে থাকে, মঞ্চের মাইক থেকে পুলিশের ওপর হামলা চালানোর নির্দেশ দেয়া হয়। পুলিশ তাদেরকে স্থান ত্যাগের জন্য শক্তি প্রয়োগের বিষয়ে সতর্ক করে। কিন্তু এতে তারা কর্ণপাত না করায় পুলিশ নিয়ম অনুযায়ী নন-লেথাল উইপন (ঘড়হ খবঃযধষ ডবধঢ়ড়হ) হিসেবে টিয়ার গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড, জলকামান ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে। এতে ১০ মিনিটের মধ্যেই তারা সকলেই স্থান ত্যাগ করে। তবে তাদের বিভিন্ন গ্রুপ সংগঠিত হয়ে অলিগলির ভেতর থেকে কিছুক্ষণ হামলা চালায়। এক পর্যায়ে পুলিশের প্রতিরোধের মুখে তারাও পালিয়ে যায়।
অভিযান পরিচালনাকালে বিপুলসংখ্যক ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াসহ দেশী-বিদেশী সংবাদকর্মী উপস্থিত ছিলেন। কয়েকটি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া পুরো অভিযান সরাসরি সম্প্রচার করেছে। রাতের অভিযানে কোনরূপ মারণাস্ত্র ব্যবহার না করার কারণে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। তবে দিনের বেলায় হেফাজতে ইসলাম ও তাদের সহযোগী উচ্ছৃঙ্খল নেতা-কর্মীদের আক্রমণ ও পুলিশের প্রতিরোধের কারণে মোট ১১ জন ব্যক্তি নিহত হয়। পরবর্তীতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ২ জনের মৃত্যু হয়।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে, বিশেষ করে মূলধারার ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া এ বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনসহ বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদন প্রকাশ ও প্রচার করে। কিন্তু “অধিকার” নামক বেসরকারি সংস্থাটি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার তথা দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার লক্ষ্যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে (যঃঃঢ়://িি.িড়ফযরশধৎ.ড়ৎম/ধনড়ঁঃ.যঃসষ) বাংলা এবং ইংরেজি ভাষায় ২৮ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে নিহতের সংখ্যা ৬১ বলে দাবি করে। উক্ত বেসরকারি সংস্থা “অধিকার” এর সচিব এডভোকেট আদিলুর রহমান খান (৫২), পিতা ডাঃ আশিকুর রহমান, মাতা প্রফেসর আক্তার জাহান ফরিদা বানু, গ্রাম-ষোলকর, থানা-শ্রীনগর, জেলা-মুন্সীগঞ্জ, বর্তমান ঠিকানাঃ বাড়ি নং-৩৫, সড়ক-১১৭, গুলশান, ঢাকা গত কয়েক বছর যাবৎ সংস্থাটির নির্বাহী হিসাবেও সামগ্রিক কার্যাবলী পরিচালনা করে আসছেন। তার নির্দেশনায় আলোচ্য প্রতিবেদনে শুধু রাতের অভিযানে হত্যাকা- চালানো হয় বলে ভিত্তিহীন অভিযোগ করা হয় এবং দিনব্যাপী হেফাজত নেতাকর্মীদের হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, বোমাবাজি ও হত্যার বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে যাওয়া হয়। দিনের বেলায় নিহত কয়েকটি মৃতদেহের এবং আহত কয়েকজনের ছবি কম্পিউটারে ফটোশপের সাহায্যে জোড়া লাগিয়ে রাতের অভিযানে তারা নিহত হয়েছে বলে প্রচ্ছদ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এডভোকেট আদিলুর রহমান খান উক্ত ওয়েবসাইট ব্যবহার করে যে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়েছেন তার ফলে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মাঝে বিভ্রান্তি ও চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
২৮ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে ৬১ জনের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য না দিয়ে একটি কাল্পনিক প্রতিবেদন তৈরি করা হয়, যার কারণে এহেন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উদ্ভব হয় এবং দেশে-বিদেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার তথা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়। এ ধরনের মিথ্যা, কাল্পনিক তথ্য ইন্টারনেটে বিশেষ উদ্দেশ্যে ছড়িয়ে দেয়ায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন/২০০৬ এর ৫৭(১)(২) ধারায় অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এ অভিযোগের পক্ষে ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনটি দালিলিক সাক্ষ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হবে। বর্ণিত ধারায় এরূপ অপরাধের শাস্তি হিসেবে ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদ- এবং এক কোটি টাকা পর্যন্ত আর্থিক জরিমানার বিধান রয়েছে।
উল্লেখ্য যে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন/২০০৬-এ বর্ণিত অপরাধগুলো আমলযোগ্য না হলেও অজামিনযোগ্য এবং বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতারযোগ্য। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন/২০০৬ এর ৫৭ (১) ও (২) ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে এডভোকেট আদিলুর রহমান খান-এর বিরুদ্ধে গুলশান থানায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (জিডি নং-৫১৪, তারিখঃ ১০/০৮/২০১৩) দায়েরের পরই তাকে তার গুলশানস্থ বাসার সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়। দেশের প্রচলিত আইন লঙ্ঘনের কারণে তাকে আইন সঙ্গতভাবে গ্রেফতার পূর্বক বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। তথ্য বিবরণী।