শায়খুল হাদীস মাওলানা নেজামুদ্দিনের ইন্তেকাল
খেলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ডাক জানিয়ে শেষ নি:শ্বাষ ত্যাগ করলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির শায়খুল হাদিস মাওলানা নেজাম উদ্দিন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শুক্রবার রাজধানীতে দলের ৫ম সাধারণ অধিবেশনে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এরপর বারডেম হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মৃত্যুপূর্ব বক্তৃতায় তিনি, সমাজে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা ও সর্বস্তরের মানুষের অধিকার আদায়, সুষম অর্থনীতি এবং কল্যাণকামী রাষ্ট্র জন্যে খেলাফত পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ডাক দেন। তঁর বয়েস হয়েছিল ৬৬ বছর। দীর্ঘদিন থেকে তিনি হৃদরোগে ভোগছিলেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। মাওলানা নেজাম উদ্দিন হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার পুটিজুড়ি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। শনিবার বিকেল আড়াইটায় পুটিজুড়ি বাজার মাঠে তাঁর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, রাজধানী ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার ইন্সটিটিউটে শুক্রবার বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ৫ম সাধারণ অধিবেশন চলছিল। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের পুরোটা সময় মাওলানা নেজাম উদ্দিন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শেষ অধিবেশনে বিকেল চারটার দিকে তিনি বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন।
বক্তব্যে খেলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থার কল্যাণকর দিকগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, সমাজের সব শ্রেণি ও পেশার মানুষের উন্নয়ন ও উন্নতি নিশ্চিত করতে হলে খেলাফত ব্যবস্থার দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। প্রায় সাত মিনিটের মত বক্তব্য রাখেন তিনি। বক্তব্যের শেষ দিকে তিনি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন। এমন অবস্থায়ই তিনি বক্তব্য শেষ করে নিজের আসনে এসে বসেন। এরপর প্রধান অতিথির বক্তব্য দিচ্ছিলেন দলের আমির প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমান। তাঁর বক্তব্যে শুরুর মিনিট চারেকের মধ্যে মাওলানা নেজাম উদ্দিন চেয়ার থেকে ঢলে পড়েন বলে জানিয়েছেন দলটির সিলেট অঞ্চলের নেতা মাওলানা সিরাজুল ইসলাম সিরাজী ও মাওলানা শাহ মমশাদ আহমদ। এরপর তাকে প্রথমে তাকে কাকরাইলে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নেয়া হয়। অবস্থা খারাপের দিকে গেলে সেখান থেকে বারডেম হাসপাতালে নেয় হয়। সেখানেই তিনি মারা যান।
মাওলানা নেজাম উদ্দিন মৃত্যুসময় পর্যন্ত বাংলাদেশ খেলাফত মসলিসের সিনিয়র নায়েবে আমিরের দায়িত্ব পালন করলেও এর আগে তিনি একই দলের মহাসচিবসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। একইভাবে তিনি মৃত্যুর আগে সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার জামেয়া হুসাইনিয়া গহরপুর মাদরাসার শায়খুল হাদিসের দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে সিলেট জামেয়া মাদানিয়া কাজিরবাজার মাদরাসায় ১৫ বছর শিক্ষা সচিবসহ ২৫ বছর শিক্ষকতায় ছিলেন।
মাওলানা নেজাম উদ্দিনের মৃত্যুতে খেলাফত মজলিসের শোক প্রকাশ:
প্রবীন আলেমে দ্বীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর মাওলানা নেজাম উদ্দিনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন খেলাফত মজলিস নেতৃবৃন্দ।
পৃথক পৃথক শোক বার্তায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ভাষা সৈনিক অধ্যক্ষ মাসউদ খান, প্রিন্সিপাল মাওলানা মজদুদ্দিন আহমদ, সিলেট জেলা সভাপতি, মাওলানা মোশাহিদ আলী, সেক্রেটারি মাওলানা আইয়ুব আলী, সিলেট মহানগর সভাপতি হাফেজ মাওলানা নুরুজ্জামান, সেক্রেটারি অধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান।
শোক বার্তায় নেতৃবৃন্দ বলেন, মাওলানা নেজাম উদ্দিনের অবদান দ্বীনি শিক্ষা ও ইসলামী আন্দোলনে অপরিসীম, তার মৃত্যুতে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে তা অপূরনীয়। আমরা তাহার রুহের মাগফিরাত ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
শোক প্রকাশ: বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা নেজাম উদ্দিনের মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমেবদনা জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় আমির প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমান ও মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক। পৃথক বার্তায় তারা মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বলেন, একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্রর জন্যে খেলাফত ব্যবস্থার জন্যে আজীবন সংগ্রাম ও সাধনা করেছেন মাওলানা নেজাম উদ্দিন। কোনো মোহে অন্ধ না হয়ে আমৃত্যু তিনি আদর্শের প্রতি অবিচল থেকেছেন। জীবনের শেষ বক্তব্যেও সেই স্বাক্ষর রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে দল ও জাতির যে অপূরণীয় ক্ষতি হল তা পূরণ হবার নয় উল্লেখ করে নেতৃদ্বয় তাঁর পরিবার ও স্বজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। এদিকে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমীর বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মাওলানা নিজামুদ্দিনের ইন্তিকালে খেলাফত মজলিসের আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, মাওলানা নিজামুদ্দিনের ইন্তিকালে জাতি একজন প্রথিতযশা আলেমে দ্বীনকে হারাল। এক যৌথ শোকবাণীতে নেতৃদ্বয় আজ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে বারডেম হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগকারী মরহুম মাওলানা নিজামুদ্দিনের রুহের মাগফিরাত কামনা করে মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমমবেদনা জ্ঞাপন করেন।