কারি লাইফ এওয়ার্ড পেলেন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সাঈদ চৌধুরী

Curryজনপ্রিয় মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এক্সেলসিয়র সিলেট হোটেল এন্ড রিসোর্টের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর সাঈদ চৌধুরী কারি লাইফ বিজনেস এচিভমেন্ট এওয়ার্ড লাভ করেছেন। গত এক দশকে বাংলাদেশে এনআরবি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি এ সম্মাননা লাভ করেন। ২১ ডিসেম্বর রবিবার লন্ডনের অভিজাত হিলটন হোটেলে ৭শত আমন্ত্রিত অতিথির এক জাকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে এই এওয়ার্ড প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বৃটিশ হাউজ অব কমন্সের হোম অ্যাফেয়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী ও প্রভাবশালী রাজনীতিক  কিথ ভাজ এমপির কাছ থেকে তিনি এওয়ার্ড গ্রহন করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিখ্যাত ফুড ম্যাগাজিন কারি লাইফ এর প্রধান সম্পাদক সৈয়দ নাহাস পাশা।
সাঈদ চৌধুরী ছাড়াও সম্মাননা প্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষা ক্ষেত্রে আইকন কলেজের প্রফেসর নুরুন্নবী, টেলিকমিউনিকেশনে সাইটেলের আমিরুল ইসলাম চৌধুরী, আইন পেশায় ব্যারিষ্টার মনোয়ার হোসেন, কার্গো ব্যবসায় জেএমজির মনির আহমদ, ট্র্যাভেলস ব্যবসায় এয়ার এক্সপ্রেসের মুজিবুল হক, হোলসেল ব্যবসায় ইবকোর রুবায়েত কামাল, কমিউনিটি সম্প্রীতিতে বিসিএর ভাইস চেয়ার অলি খান ও সেলিম চৌধুরী।
প্রতিথযশা লেখক সাঈদ চৌধুরী একজন সফল ব্যবসায়ী ও সংগঠক হিসেবে দেশে ও প্রবাসে প্রায় ২ যুগ ধরে সুনামের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। সিলেটের খাদিমপাড়ায় প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক মানের হোটেল এন্ড রিসোর্ট এক্সেলসিয়র সিলেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাঈদ চৌধুরী প্রবাসীদের মাতৃভূমিতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা সহ বাংলাদেশের পটর্যন শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। তিনি দেশের শেয়ার মার্কেটে তালিকাভূক্ত প্রথম সফল এয়ারলাইন্স  ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের  ফাউন্ডার ডাইরেক্টর।  প্রবাসীদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এই এয়ারলাইনের চেয়ারম্যান ক্যাপটেন তাছবীরুল আহমদ চৌধুরী যে কজন মানুষকে নিয়ে এই বিশাল অসাধ্য সাধন করেছেন সাঈদ চৌধুরী তাদের অন্যতম। সাঈদ চৌধুরী ইউনাইটেডের শুধু ডাইরেক্টর নন, মিডিয়া পার্টনার হিসেবে প্রাথমিক ৫০ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন।
সাঈদ চৌধুরী ২০১২ সালে বৃটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের (বিবিসিসি) ডাইরেক্টর নির্বাচিত হন এবং ২০১৩ ও ১৪ সালে বিবিসিসির প্রেস ও পাবলিসি ডাইরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমান বিশ্ব বাণিজ্যের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের শিল্প-বাণিজ্যে ব্যাপক গতি সঞ্চারের লক্ষ্যে যুক্তরাজ্যে আয়োজন করা হয় এক্সপো বাংলাদেশ। বিবিসিসির  উদ্যোগে ও বাংলাদেশ হাইকমিশন লন্ডনের সহায়তায় অনুষ্ঠিত এই এক্সপোর অর্গানাইজিং কমিটির একজন দায়িত্বশীল হিসেবে সাঈদ চৌধুরী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে ও সিলেট প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত প্রেস কন্ফারেন্সে মূল বক্তব্য  তুলে ধরেন। বাণিজ্য মন্ত্রনালয়, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো, বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন এবং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সঙ্গে বৈঠকেও তিনি প্রতিনিধিত্ব করেন।
সাঈদ চৌধুরী নোবেল  বিজয়ী ডক্টর  মুহাম্মদ  ইউনুসের গণ সম্বর্ধনার পেছনেও মুখ্য ভুমিকা পালন করেন। ২০০৬  সালের ১৫ ডিসেম্বর লন্ডনের আলেক্সজান্ডার প্যালেসে ডক্টর ইউনুসকে এই সম্বর্ধনা দেয়া হয়েছিল। এতে বৃটিশ ও ইউরোপীয় এমপিসহ প্রায় ২০০০ হাজার ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানের সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সুভ্যেনির সম্পাদনার কাজটিও করেন তিনি। নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর পরই লন্ডনে অত্যন্ত কম সময়ের মধ্যে এই সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অল্প বয়সে লেখা জনপ্রিয় উপন্যাস ছায়াপ্রিয়ার লেখক সাঈদ চৌধুরী গল্প, উপন্যাস ও কবিতার পাশাপাশি দেশ-বিদেশের খ্যাতিমান ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নিয়ে সাংবাদিকথায় ব্যাপক আলোড়ন  সৃষ্টি করেন। সিলেটের স্থানীয় সংবাদপত্রের পাশাপাশি ১৯৮৯ সাল থেকে জাতীয় দৈনিকে লেখালেখির মাধ্যমে পেশাগত সাংবাদিকতা শুরু করেন। ১৯৯০ সালে সিলেট প্রেসকাবের স্থায়ী সদস্য মনোনীত হওয়ার পর ১৯৯৩-৯৪ এবং ১৯৯৫-৯৬ সালে প্রেসকাবের নির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। প্রবাসে তিনি দীর্ঘদিন লন্ডন বাংলা প্রেসকাবেরও নির্বাহী সদস্য ছিলেন। তিনি সাপ্তাহিক ইউরো বাংলা ও অনলাইন  দৈনিক সময়ের প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক হিসেবে বাংলা সাংবাদিকতায় ব্যাপক ভুমিকা রাখছেন।
২০১০ সালে ইসলাসিক সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) ৫৭টি দেশের তত্ত্ব ও তথ্য সমৃদ্ধ ডাইরেক্টরি মুসলিম ইন্ডেক্স সম্পাদনা করে সাঈদ চৌধুরী ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন। ২০০৮ সালে বৃটেনের সকল এশিয়ান রেষ্টুরেন্ট নিয়ে তিনি সম্পাদনা করেন ইউকে এশিয়ান রেষ্টুরেন্ট ডাইরেক্টরি। তার সম্পাদনায় ২০০৩ সালে প্রকাশিত হয় বৃটেনে বাংলাদেশী ব্যবসা বিষয়ক গাইড ইউকে বাংলা ডাইরেক্টরি। সাঈদ চৌধুরীর এই ডাইরেক্টরি সমূহ আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সহ প্রাত্যহিক জীবনে এক অপরিহার্য অনুসঙ্গ।
কেবল প্রিন্ট মিডিয়া নয়। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতেও সাঈদ চৌধুরীর রয়েছে সরব পদচারনা। দেশে অবস্থানকালে সিলেট বেতার তাঁর অসংখ্য কথিকা ও প্রবন্ধ প্রচার করেছে। যুক্তরাজ্যেও তিনি এখানকার রেডিও এমসিআর ও বেতার বংলায় এবং বাংলা টেলিভিশন বাংলা টিভি, চ্যানেল এস, এটিএন বাংলা, এনটিভি, চ্যানেল আই প্রভৃতির অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশগ্রহন করেন।
১৯৯৭ সালে সাঈদ চৌধুরীর একান্ত প্রয়াসে সিলেটের বেশ কজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের অংশ গ্রহনে প্রতিষ্ঠিত হয় বৃটিশ বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল (বিবিআইএস)। তিনি প্রতিষ্ঠাতা রেক্টর মনোনীত হন। প্রথম বছরেই নার্সারী থেকে জিসিএসই (ওলেভেল) পর্যন্ত ক্লাস চালু হয় এবং বৃটিশ কাউন্সিলে জিসিএসই পরীক্ষায় শিক্ষার্থিদের সাফল্য সবাইকে চমকে দেয়। ১৯৯৮ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত জাতীয় কম্পিউটার প্রোগ্রামিং  প্রতিযোগিতায় বিবিআইএস এর প্রতিযোগিরা অনেক বিশ্ববিদ্যালয়কে হারিয়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ৪র্থ স্থান দখল করে বিপুল প্রশংসা অর্জন করে। স্কুলের ডাইরেক্টর ও রেক্টর সাঈদ চৌধুরীর তত্তাবধানে সুদক্ষ শিক্ষক মন্ডলীর প্রচেষ্টার ফলেই এই সাফল্য সম্ভব হয়েছিল। বৃটিশ হাই কমিশনার ডেভিড সি ওয়াকার ১৯৯৮ সালের ২৫ জুলাই বিবিআইএস পরিদর্শন করে এর ভূয়সী প্রশংসা করেন। বিবিসির বিখ্যাত সাংবাদিক ফ্রান্সেস হ্যারিসন একই সালের ৫ আগস্ট সাঈদ চৌধুরীর সাক্ষাৎকার সহ বিবিআইএস এর সামগ্রীক কার্যক্রমের বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।
বৃটেনের ক্রীড়া জগতেও বিচরন রয়েছে সাঈদ চৌধুরীর। তিনি লন্ডন টাইগার্সের সাথে সরাসরি জড়িত। এছাড়া যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী সাবেক খেলোয়াড়দের জনপ্রিয় সংগঠন সোনালী অতীত এবং নতুন প্রজন্মের সংগঠন বাংলাদেশ ফুটবল এসোসিয়েশন ইউকের প্রচার কার্যক্রমে বিভিন্নভাবে সহায়তা করে থাকেন। তিনি প্রবাসে নতুন প্রজন্মকে খেলাধুলার প্রতি উৎসাহিত করতে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে চলেছেন। ২০০১ সালের ১৪ মার্চ মাইলএন্ড স্টেডিয়ামে ইউনাইটেডের সাথে স্পোর্টিং বেঙ্গল এবং ১৮ মার্চ আপ্টন পার্ক স্টেডিয়ামে ওয়েস্টহাম ইউনাইটেডের সাথে আবাহনী ক্রীড়াচক্রের খেলায় তিনি ধারা ভাষ্যকার ছিলেন। আপ্টন পার্কের খেলাটি বিবিসিসহ বৃটেনের জাতীয় টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়।
সাঈদ চৌধুরী ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর বাস্তবায়ন পরিষদের অর্গানাইজিং সেক্রেটারি হিসেবে সিলেটে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি আসকপের সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে উত্তর সিলেটের শিক্ষা ও যোগাযোগের উন্নয়নে প্রানান্ত প্রয়াস চালিয়েছেন। আম্বরখানা থেকে বাদাঘাট হয়ে শিবের বাজার-ছাতক রাস্থা বাস্তবায়নে এবং বাদাঘাটে ব্রিজ নির্মাণে সাঈদ চৌধুরীর প্রচেষ্টা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করতে হয়।
সিলেট বিভাগ আন্দোলনেও তিনি সক্রিয় ভাবে জড়িত ছিলেন। ১৯৯৪ সালের ২৮ নভেম্বর বিবিসি সিলেটের উন্নয়ন প্রসংগে তার তাৎপর্যবহ সাক্ষাৎকার প্রচার করে।
সাঈদ চৌধুরী বলেন, মানুষ আমাকে ভালোবাসে। আমিও মানুষকে ভালোবাসি। এই ভালোবাসাই আমার সবচেয়ে বড় অর্জন। আমার এই ভালোবাসা এসেছে কাজের মধ্য দিয়ে। তার স্বীকৃতিও মিলেছে নানা ভাবে। টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের মেয়র এওয়ার্ড এবং নিউহাম ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এওয়ার্ড সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংগঠন, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। আমেরিকান বায়োগ্রাফিকাল ইন্সটিটিউটের ইন্টারন্যাশনাল ডাইরেক্টরি অব ডিসটিংগুই্জ্ড লিডারশীপের অস্টম সংখ্যায় হাতে গোনা যে কয়জন ব্যক্তির স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে সাঈদ চৌধুরী অন্যতম।
সিলেট সদর উপজেলার হাটখোলা ইউনিয়নের নোয়াগাও নিবাসী সাঈদ চৌধুরী উত্তর সিলেটের শিক্ষা ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক ৪ বারের নির্বাচিত স্যারপঞ্চ ডা: এম এম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও সমাজসেবী বেগম কামরুন্নেছার পুত্র। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত সাঈদ চৌধুরীর সহধর্মিনী আফিয়া চৌধুরী সেন্ট্রাল লন্ডনে এসেট ম্যানেজম্যান্ট একাউন্টেন্ট। ইমতিয়াজ চৌধুরী ও রাইয়ান চৌধুরী নামের দুই পুত্রের জনক সাঈদ চৌধুরী সকলের দোয়া প্রার্থী।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button