৩৮৯ জন মাওলানাকে দস্তারে ফজিলত প্রদান
অন্তত একটি করে সন্তানকে আলেম বানান : আল্লামা শফি
সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে জামেয়া ক্বাসিমূল উলূম দরগাহ হযরত শাহজালাল (রহ.) মাদরাসার ৩ দিন ব্যাপি ৪০ সালা দস্তাবন্দী মহাসম্মেলনের দস্তারে ফজিলত প্রদান করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে দারুল উলুম মইনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক এবং হেফাজতে ইসলামের আমীর হযরত মাওলানা আহমদ শফি ১৪২০ হিজরী থেকে ১৪২৮ হিজরী পর্যন্ত মোট ৩৮৯ জন মাওলানাকে দস্তারে ফজিলত প্রদান করেন। পরে হেফাজতের আমির আলীয়া মাঠে বয়ান পেশ করেন।
খলিফায়ে মাদানী আল্লামা শাহ আহমাদ শফী তার মূর্যবান বয়ানে বলেন, প্রতিটি মুসলমানকে হালাল-হারাম বেচে চলতে হবে। ইসলামী শরীয়তে যে সব বিষয় হারাম করাহয়েছে এসব থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হবে।
তিনি বলেন, ছবি উঠানো ইসলামে হারাম। কোন প্রাণীর ছবি আকা-ঝুলিয়ে রাখা এসব হারাম। যারা ছবি তুলবে হাশরের দিন আল্লাহ পাক এর মধ্যে প্রাণ দেওয়ার জন্য বলবেন। সে ব্যাক্তি যখন প্রাণ দিতে পারবেনা, তখন তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
তিনি বলেন, আমাদের কাজ হলো শরীয়তের মাসআলা বলে দেওয়া। আমল করা না করা আপনাদের ব্যাপার। সাবধান, এ ধরনের ফটো উঠাবেন না।
আল্লামা শফি বলেন, শরীয়তের একটা মাসআলা জেনে রাখা এক হাজার রাকাত নফল নামাজ হতে উত্তম। নবীজির হাদিস বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘কিয়ামতের দিন সব চাইতে বড় আযাব দেওয়া হবে তাদের, যারা ছবি উঠায়, দেখায় এবং বাধাই করে ঘরে রাখে।’
তিনি বলেন, নবীজি সা: বলেছেন ‘যার সাথে যাদের মহাব্বত রয়েছে, তার সাথে তাদের হাশর-নশর হবে।’ তিনি আলেমদের সাথে মহাব্বত রাখার পরামর্শ দিয়ে বলেন, আপনাদের যারা আলেমদের মহব্বতের টানে এই দস্তারবন্দি মহাসম্মেলনে উপস্থিত হয়েছেন তাদের হাশরও এই আলেমদের সাথে হবে। আলেমরা হচ্ছেন নায়েবে রাসুল। হক্কানী আলেমদের চেহারার দিকে তাকালেও আপনারা মাহরুম (বঞ্চিত) হবেন না।
উপস্থিত হাজার হাজার জনতাকে লক্ষ করে আল্লামা শফী বলেন, আপনারা ওয়াদা করে যে প্রত্যেকের অন্তত একটি ছেলেকে হাফেজ, আলেম, মুহাদ্দিস বানাবেন। কওমী মাদ্রাসায় লেখা পড়া করে কেউ বেকার থাকেনা, কেউ উপবাস থাকেনা। রিজিকের মালিক আল্লাহপাক। তিনি কাউকে উপবাস রাখেননা।
নিজেকে একটি কওমী মাদ্রাসার পরিচালক উল্লেখ করে আল্লামা শফী আরো বলেন, আমি আপনাদের নিকট ভিক্ষা চাইতেছি, অন্তত একটি ছেলেকে মাদ্রাসায় দিন। বর্তমানে ৯০ বছর বয়সে উপনিত হয়েছি কোন দিন কাপড় ক্রয়করিনি। উপবাস থাকিনি।
ফারিগীন আলেম উলামাদের উদ্দেশ্যে হাজার হাজার আলেমের উস্তাদ বয়োবৃদ্ধ এই আলেমে দ্বীন স্বীয় মুর্শিদ সায়্যিদ হোসাইন আহমদ মাদানীর স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমি অসুস্থ শরীর নিয়ে আপনাদের সিলেটে এসেছি শুধূ আমার উস্তাদের ভালবাসার কারনে। আমার উস্তাদ শায়খুল ইসলাম মাদানী (র) এই সিলেটকে অত্যন্ত মহব্বত করতেন। সেই মহব্বতের ঠানেই আমি আপনাদের নিকট চলে এসেছি। প্রত্যেক এলাকায় মক্তব-মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসলামের সুমহান বার্তা পৌছে দিতে তিনি আহবান জানান তিনি।
রাত সোয়া ৯ টায় বয়ান শুরু করেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী। এসময় সভাপতিত্ব করেন জামেয়া মাদানীয়া আঙ্গুরা মোহাম্মদপুরের মুহতামিম মাওলানা শায়খ জিয়া উদ্দীন।
অধিবেশন পরিচালনা করেন জামেয়া দারুল কোরআন সিলেটের প্রতিষ্টাতা পরিচালক, সাবেক এম পি, এডভোকেট শাহীনুর পাশা চৌধুরী।
অন্যন্যের মধ্যে গুরুত্বপুর্ন বক্তব্য রাখেন, পাকিস্তানের দারুল উলুম করাচির আল্লামা মুফতি শাহ রফি উসমানী, পাকিস্তানের দারুল উলুম করাচীর নায়েবে মুফতি মাওলানা মুফতি আব্দুল মান্নান, মাওলানা আযহার আলী আনওয়ার শাহ, মাওলানা আব্দুল মতিন, মাওলানা হুসাইন আহমদ, মাওলানা মাসউদ আহমদ, মাওলানা আখলাক রাশিদী, মাওলানা জিল্লুর রহমান, মাওলানা মুহিবুল হক, মাওলানা শায়খ আব্দুস শহীদ গলমুকাপনী, মুফতি আব্দুল মুন্তাকিম, মুফতি আবুল কালাম যাকারিয়া মুফতি মাওলানা তফজ্জুল হক, মাওলানা মুশতাক আহমদ খান, মাওলানা হারুনুর রশীদ, মাওলানা মোস্তফা আহমদ, মাওলানা মুফতি বুরহান উদ্দিন, মাওলানা নাজির হোসাইন, মাওলানা গোলাম নবী, মাওলানা যুবাইর আহমদ, মাওলানা শায়খ আব্দুল করিম, মাওলানা জিল্লুর রহমান প্রমুখ।
দ্বিতীয় দিনের ৪ পর্বের সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন যথাক্রমে মাওলানা ওলিউর রহমান, মাওলানা ইসহাক, মাওলানা আব্দুস বাসিত ও মাওলানা শায়খ জিয়া উদ্দিন।
এদিকে, বিএনপির নেতারা সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে জামেয়া ক্বাসিমূল উলূম দরগাহ হযরত শাহজালাল (রহ.) মাদরাসার ৩ব্যাপি ৪০ সালা দস্তাবন্দী মহাসম্মেলনের গিয়ে সংহতি প্রকাশ করে। সিলেট জেলা বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট নূরুল হকের নেতৃত্বে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিম, যুগ্ম সম্পাদক আলী আহমদ, মহানগর বিএনপির যুগ্ম-আহবায়ক নাসিম হোসাইন, ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিল তৌফিকুল হাদী প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে জামেয়া ক্বাসিমূল উলূম দরগাহ হযরত শাহজালাল (রহ.) মাদরাসার ৩দিন ব্যাপি ৪০ সালা দস্তাবন্দী মহাসম্মেলনের উদ্বোধনী করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।