পুঞ্জীভূত সমস্যা নিয়েই নতুন বছরে প্রবেশ করছে বিশ্ববাসী
২০১৫ সমাসন্ন। সবাই আশা করছেন ২০১৫ আমাদের জন্য সুবছর হয়ে উঠবে। কোনো যাদুর কাঠি হাতে নিয়ে আসছে না নতুন বছর সবাই জানেন। জানুয়ারি বছরের বহু দুর্লংঘ্য সমস্যার আমাদের সম্মুখীন হতে হয়েছে- দেখতে হয়েছে মতাদর্শের দ্বন্দ্ব। পারস্পরিক ঘৃণার শ্রীবৃদ্ধি যুদ্ধ ও প্রাণহানি। নতুন বছর সব অমানবিকতার সমাপ্তি ঘটবে- এমন আসম্ভব আশা আমরা করতে পারি না।
২০১৪-এর দিকে ফিরে তাকানো যাক। প্রথমেই আসে সিরীয় গৃহযুদ্ধ। সংঘাত সেখানে শুরু হয় ২০১১ সালে। আজো চলছে। এ পর্যন্ত ২ লাখের বেশি প্রাণ সেখানে ঝরে গেছে। স্বঘোষিত ইসলামিক স্টেট জন্ম নিয়েছে সিরীয় সংঘাতের মধ্য থেকে। তারা স্থাপন করেছে তাদের নিজেদের একটি রাষ্ট্র।
সিরিয়া ও ইরাকের কিছু কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা আজ আইএস’র নিয়ন্ত্রণে। সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা পেয়েছে আইএস পশ্চিমা মহল থেকে। ন্যাটো, জাতিসংঘ ও পরাশক্তিগুলো সবাই মিলে আইএস’র বিরুদ্ধে তাদের করণীয় এখনো পর্যন্ত সুনিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। একটি কথা কিন্তু বিশ্বের বিশেষজ্ঞমহল স্পষ্ট বলতে শুরু করেছেন- আইএস হচ্ছে পশ্চিমের ভ্রান্ত মধ্যপ্রাচ্য নীতিরই ফসল। বিভীষিকা পূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি পেলো ইউক্রেনে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলের অপরিণামদর্শী লোভী মনোভাবের কারণে। তিন হাজারের মতো মানুষের জীবন সেখানে নিশ্চিহ্ন হলো। মার্কিন মদদে ইইউ ইউক্রেনে প্রভাব বিস্তার করতে গিয়ে সেখানে রাশিয়ার সাথে সংঘাতের পথে ইউক্রেনকে উসকে দিলো। যার পরিণতিতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ দেশটিকে রাশিয়ার ও রুশপন্থীদের হাতে খোয়াতে হয়েছে। পাশ্চাত্য ও রাশিয়ার মধ্যে বাক ও কূটনীতিক যুদ্ধের ইউক্রেনকে ঘিরে আজো শেষ হয়নি।
ইবোলার আকস্মিক প্রাদুর্ভাবে আতঙ্কিত বিশ্ব আজো কিন্তু ঘাতক ব্যাধিটির কোনো প্রতিষেধক বের করতে ব্যর্থ হয়েছে। সাড়ে সাত হাজারের বেশি আদম সন্তান এ পর্যন্ত ইবোলার খোরাকে পরিণত হয়েছে। ক্রাইমিয়া রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। স্কটল্যান্ড স্বাধীন হতে চেয়েছিল পারেনি। মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে মুসলিম হত্যার বীভৎস দৃশ্য বিশ্ববাসী চেয়ে চেয়ে দেখলেন। প্রতিবিধানে লক্ষ্যে কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হতে দেখা যায়নি। সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতার আগুন সেখানে আজো ফুঁসছে। পেকে হারামের একতরফা তান্ডব নাইজেরিয়ায় আজো অব্যাহত রয়েছে। ৭৪৮ ব্যক্তি শুধু মার্চ মাসেই ইরাকে নিহত হওয়ার ঘটনা উল্লেখনীয় খবর হয়ে দেখা দিয়েছে।
গাজায় ফিলিস্তিনী নিধনে ইসরাইলী বর্বরতায় বিশ্ববিবেকের স্বেচ্ছাকৃত ঔদাসীন্য বিশ্বের মুসলিম জনমন্ডলী কঠিন মর্মপীড়ায় চেয়ে চেয়ে দেখতে বাধ্য হলেন। ইউক্রেনে মালয়েশিয়ার বিমান ধ্বংসে ২৮৯ আরোহীর অকাল মর্মান্তিক মৃত্যুর হদিস আজো এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তর যুগেও খুঁজে পাওয়া গেলো না। দক্ষিণ কোরিয়ায় মূলত স্কুলশিশু মরলো জাহাজ ডুবিতে ৩০১ জন। অসংখ্য শ্রমিক নিহত হলো তুরস্কের খনি দুর্ঘটনায়। সবচেয়ে বেশি মানুষের শরণার্থীতে রূপান্তরিক হওয়ার ঘটনা ঘটে ২০১৪ সালে। জীবিকার সন্ধানে ভিনদেশে পাড়ি দিতে গিয়ে মরলেন গুনাগুনতিবিহীন মানুষ। না খেয়ে মরেন অসংখ্য শরণার্থী ২০১৫ সালেই।
দারিদ্র্যের থাবা বিস্তার লক্ষ্য করা গেছে ২০১৪ সালে আবার নতুন করে। লক্ষ্যণীয়ভাবে দারিদ্র্যের অক্টোপাশ এবার জড়িয়ে ধরতে চলেছে ইউক্রেনকে। অভিবাসীর আগমন ঠেকাতে তারা বদ্ধপরিকর। উগ্র ডানপন্থী সংকীর্নতার ইউক্রেনের বিভিন্ন দেশের সংসদীয় নির্বাচনে জয়জয়কার দেখা যাচ্ছে। গ্রীস, আইসল্যান্ড, গ্রীক-সাইপ্রাস, বেলজিয়াম ও ইটালি দারিদ্র্য মোকাবিলায় হিমশিম খচ্ছে। পুরো ইউরো জোনই আজ ভুগছে দারিদ্র্যের আতঙ্কে। তেলের মূল্য হ্রাসমান বিধায় রাশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য কাটাচ্ছে উদ্বেগের দিন।
সন্দেহভাজন বন্দীদের ওপর (অধিকাংশ মুসলিম) সিআই’র অকথ্য পাশবিক নিপীড়নের খবর ফাঁসে বিবেকবান বিশ্বে উৎণ্ঠার লহর বয়ে গেছে। খুবই উৎপীড়ক বছর ২০১৪ অবশেষে বিদায় নিতে চলেছে। কিন্তু দুশ্চিন্তার সঙ্গে বিশ্ববাসী লক্ষ্য করে গেছেন- যাবতীয় সংঘাত, উৎপীড়ন, মৃত্যু ও মর্মান্তিক দুর্দশা। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের দুর্বলেরা নিরূপায় ভোগ করেছেন নিেেদর দোষে নয়, কিছু উচ্চাকাক্সক্ষী উচ্চলোভী ও আধিপত্য লোভী ক্ষমতাবান মানুষের আত্মম্ভরীতার কারণে কোনো দৈব-দুর্বিপাকে নয়।
বিশ্ব ২০১৫ সালে প্রবেশ করতে চলেছে পুঞ্জীভূত বহু বকেয়া সমস্যা সঙ্গে নিয়ে। আগেই বলা হয়েছে কোনো যাদুদন্ড হাতে নিয়ে আসতে যাচ্ছে না নতুন বছর আমাদের জন্য।