দুর্নীতি অনিয়মে জর্জরিত বিমান
মুনিফ আম্মার: অতিরিক্ত জনবল, শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও অনিয়মিত কর্মচারী নিয়োগ ও টেন্ডারের চুক্তি স্বাক্ষর ব্যর্থতাসহ অন্যান্য অনিয়মে অর্ধশত কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। কেবল তাই নয়, অপ্রয়োজনীয় এয়ারক্রাফট কিনে অযথা বিমা প্রিমিয়াম পরিশোধ করা, কেবিন ক্রুদের অতিরিক্ত অ্যালাউন্স প্রদান ও অপ্রয়োজনে জরিমানা দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে বিমানে। একের পর এক অনিয়মে জর্জরিত হয়ে আছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এ সংস্থাটি।
২০০৮-০৯ অর্থবছরের অডিট প্রতিবেদন থেকে বেরিয়ে এসেছে এমন তথ্য। এ অডিটের বিপরীতে সন্তোষজনক বক্তব্যও দিতে পারেনি বিমান কর্তৃপক্ষ। ফলে বিষয়টি চরম হতাশা জানিয়েছে সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি।
অডিট রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ‘স্বেচ্ছায় অবসর নীতিমালা অনুযায়ী বিমানের লোকবল ৬৮৮৩ থেকে ৩৪০০ করার বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। বিমানের অপারেশনাল কর্মকাণ্ড ক্ষতির মুখে পড়বে, এমন দোহাই দিয়ে লোকবল কমানো হয়নি। ফলে প্রতিমাসেই বেতন বাবদ সংস্থাটিকে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ৪৯ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ১৬০ টাকা। ক্রমাগত এ ক্ষতির হার বেড়েই চলেছে।’
জনবলের পরিমাণ নির্দিষ্ট করা ও অনিয়মের বিষয়ে দায় দায়িত্ব নির্ধারণের জন্য নিরীক্ষা সুপারিশও করা হয়েছে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই বিমানে কর্মচারী নিয়োগ করা হয়েছে বলে অডিট রিপোর্টে পাওয়া যায়। এতে বলা হয়, সরকারি বা সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে কমপক্ষে দুটি জনবহুল জাতীয় পত্রিকাতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হয়। সেখানে থেকে যাচাই বাছাই করে পরীক্ষা থেকে নিয়োগ দিতে হয়। কিন্তু বিমানে এ প্রক্রিয়া অবলম্বন করেই অনিয়মিতভাবে কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে এ তালিকায় কতোজন কর্মচারী রয়েছে সে বিষয়টি জানানো হয়নি অডিট রিপোর্টে। এ নিয়োগের নেপথ্যে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নিরীক্ষা সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও বিমানের ইঞ্জিনবিহীন এয়ারক্রাফট কিনে তা হ্যাঙ্গারে ফেলে রাখার তথ্য পাওয়া গেছে এ রিপোর্টে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ইঞ্জিনবিহীন অবস্থায় এয়ারক্রাফট কিনে উড্ডয়নের ব্যবস্থা করা হয়নি। এটি হ্যাঙ্গারে ফেলে অযথা বিমানকে দুই অর্থবছরে ২ কোটি ২১ লাখ ৩ হাজার ৪৪৪ টাকা অযথা বিমা প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে হয়েছে।
একটি আন্তর্জাতিক দরপত্রে (টেন্ডারে) চুক্তিপত্র স্বাক্ষরে ব্যর্থ হওয়ায় বিমানকে ১ কোটি ৪ লাখ ২৫ টাকা অতিরিক্ত গুনতে হয়েছে।
ফ্লাইং আওয়ারের অতিরিক্ত ওভারসিজ অ্যালাউন্স পরিশোধ করায় ৪৫ লাখ ৪৯ হাজার ৭৪৯ টাকা ক্ষতি হয়েছে সংস্থাটির। ওভারসিজ অ্যালাউন্সের রেকর্ড পর্যালোচনা করে দেখা যায় কেবিন ক্রুর ফ্লাইং আওয়ারের কম হলেও ৬৫ ঘণ্টার পূর্ণ সুবিধা তাদেরকে দেয়া হয়েছে। এজন্য অযৌক্তিকভাবে ১৮৩ জন কেবিনক্রুকে বাড়তি এ টাকা দেয়া হয়েছে।
এছাড়া চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে বিমানের পক্ষ থেকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ২ কোটি ১৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা জরিমানা দেয়া হয়েছে, যা সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত।
এদিকে এসব অনিয়মের তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার সুপারিশ সরকারি হিসাব সম্পর্কিত কমিটি। কমিটির সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী এমপি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘বিমানের আগাগোড়া দুর্নীতিতে জর্জরিত। আমরা কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে জানতে গিয়ে এতো দুর্নীতির তথ্য পেয়েছি। এ সংস্থার শীর্ষ থেকে সবাই সমানতালে দুর্নীতি ও অনিয়ম করে যাচ্ছে। দোষীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ আমরা করেছি।’