অস্ট্রিয়ায় শূকরের নাড়িভুঁড়ি দিয়ে মসজিদের পবিত্রতা ক্ষুণ্ন
অস্ট্রিয়ার মুসলিমবিরোধী সর্বশেষ হামলার ঘটনাটি ঘটে গত ২৫ ডিসেম্বর ক্রিসমাস ডে উদযাপনের দিন রাজধানী ভিয়েনার একটি মসজিদে খৃষ্টান সন্ত্রাসীরা ব্যাপক ভাংচুর চালায় এবং শূকরের গোশত ও নাড়িভুঁড়ি ছড়িয়ে রাখে। এর মাধ্যমে ইউরোপের ঐ দেশটিতে ক্রমবর্ধমান ইসলামবিদ্বেষী মানসিকতার স্বরূপ প্রকাশিত হয়েছে।
টার্কিশ-ইসলামিস্ট ইউনিয়ন ইন ভিয়েনার (এটিআইবি) প্রধান ফাতিহ কারাদাস বার্তা সংস্থা আনাদলুকে গত শনিবার বলেন, এটি শুধুমাত্র মুসলমানদের বিরুদ্ধে কোনো হামলা নয়, এ হামলা সমগ্র মানবতার বিরুদ্ধে। তিনি আরো বলেন, এ ঘটনার পরেও মুসলমান হিসেবে আমরা শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বজায় রাখবো এবং সমন্বিত মনোভাব পোষণ করবো। গত ২৫ ডিসেম্বর অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় অবস্থিত কোজাটেপ মসজিদে দরজায় শুকরের নাড়িভুঁড়ি এবং নাক ঝুলিয়ে রাখে খৃস্টান দুর্বৃত্তরা। কোজাটেপ মসজিদের ইমাম ঐ হামলাকে ঘৃণ্য এবং অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে এর নিন্দা জানিয়েছেন।
বিগত মাসগুলোতেও একইভাবে অস্ট্রিয়ার বিভিন্ন মসজিদ ও ইসলামিক স্কুলের ভিতরে শুকরের নাড়িভুঁড়ি, মাথাসহ বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছড়িয়ে রেখে মসজিদের পবিত্রতা ক্ষুণ্ন করে।
গত গৃষ্মে ভিয়েনার ইমাম হাতিফ স্কুল এবং অপর আরেকটি নতুন স্কুলে শুকরের মাথা ছড়িয়ে রেখে সেখানকার পবিত্রতা নষ্ট করার চেষ্টা চালানো হয়। চলতি মাসের গোড়ার দিকে অস্ট্রিয়ার এক বয়স্ক মহিলাকে অপমান এবং তার ওপর হামলা চালিয়ে তাকে গুরুতর আহত করা হয়। তাকে মেঝেতে ফেলা হয় এবং সজোরে মাথায় আঘাত পান। এতে তিনি মেরুদন্ডে বড় আঘাত পান এবং তার কটির হার ভেঙে যায়। যার কারণে তাকে ৭ দিনের বেশি হানুসেচ হাসপাতালে থাকতে হয়। সর্বশেষ মসজিদে হামলার ঘটনাটি বেশ কয়েকটি হামলার ঘটনার মধ্যে একটি। সম্প্রতি রাজধানী ভিয়েনায় মাথায় স্কার্ফ পরা মহিলাদের বিভিন্ন ভাবে নিগৃহীত করা হয় এবং তাদের ওপর হামলা চালানো হয়।
গত মাসে রাস্তার ওপর বন্ধুসহ এক মহিল কে তালিবান ও আইএসআইএল (ইসলামিক স্টেট) আখ্যায়িত করে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। কয়েক সপ্তাহ আগে পাতাল রেলে আরেক জন মুসলিম মহিলা আক্রমণের শিকার হন। চরম পন্থার বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং মুসলিম যুব সম্প্রদায়কে সহযোগিতার জন্য পরামর্শ দিতে গত ১ ডিসেম্বর সরকারের পক্ষ থেকে একটি হটলাইন ওপেন করার পর থেকে যেন এ ধরনের হামলার পরিমাণ দিনে দিনে বেড়ে চলছে। ইউরোপের এই দেশটির বর্তমান জনসংখ্য ৮০ লাখের মতো, যার প্রায় ৬ শতাংশ অর্থাৎ ৫ লাখের বেশি মুসলমান। রোমান ক্যাথলিকদের পরেই ভিয়েনায় ইসলাম হচ্ছে দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম।
ইসলামের ব্যাপারে অস্ট্রিয়ায় শতাব্দীকালেরও বেশি সময় ধরে যে আইন বলবৎ ছিল। গত অক্টোবরে সেটি পরিবর্তন করা হয়। যার কারণে মুসলমানদের মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বৃদ্ধি পেতে থাকে। গত দুই সপ্তাহ আগে মুসলিম নেতৃবৃন্দ নতুন আইনের বিরুদ্ধে ২ লাখ স্বাক্ষর সংগ্রহের কথা জানান। ঐ আইনে মুসলমানদের অধিকার লঙ্ঘন হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। এছাড়া মুসলমানদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকের মর্যাদা দেয়া হয়েছে।