নতুন নির্বাচনের দাবিতে ৭ দফা প্রস্তাব
দ্রুত নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়ে সাত দফা প্রস্তাব দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। একই সাথে তিনি দাবি মানা না হলে কঠোর আন্দোলনেরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ৫ জানুয়ারির পর দ্রুত নির্বাচন দেয়ার অঙ্গীকার করে তা রক্ষা করেনি সরকার। তারা এক বছর সময় দিয়েছেন, এখন আর সময় নেই। দ্রুত নির্বাচন না দিলে তারা আন্দোলনে নামবেন। আন্দোলনে অবৈধ সরকারের পতন অনিবার্য।
নতুন বছর জনগণের ‘বিজয়ের বছর’ হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বুধবার সন্ধ্যায় গুলশান কার্যালয়ে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি ও বিশ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
খালেদা জিয়া লিখিত বক্তব্যে বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ও গত বছরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে নতুন নির্বাচনের দাবিতে সাত দফা প্রস্তাব দেন।
তিনি বলেন, দেশে আজ যে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সে অবস্থার অবসান ঘটানো না গেলে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। এই সঙ্কট উত্তরণে অবিলম্বে একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, অবাধ, নিরপেক্ষ, ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে সরকার গঠনের কোনো বিকল্প নেই। সেই লক্ষ্যে আমরা প্রস্তাব করছি:-
১. জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবশ্যই একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে। যেন সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করতে পারে এবং সব পক্ষের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সুযোগের সমতা নিশ্চিত হয়।
২. নির্বাচন ঘোষণার আগেই প্রতিদ্বন্দ্বী সব পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ, দক্ষ, যোগ্য ও সৎ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। যাতে, জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) প্রয়োজনীয় সংশোধন করা যায়। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও মাঠ পর্যায় থেকে পক্ষপাতদুষ্ট কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করা যায়। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্তব্যে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করা যায়। সব পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী আইন ও বিধিমালার সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা যায় এবং ভোটার তালিকার ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করা সম্ভব হয়।
৩. নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার সাথে সাথে জাতীয় সংসদ ও মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত হবে এবং প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলোর সম্মতিক্রমে গঠিত নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করবে।
৪. নির্বাচনের উপযোগী শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি এবং সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে তারিখ ঘোষণার পরপরই বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সারা দেশে সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করতে হবে।
৫. নির্বাচনী প্রচারাভিযান শুরুর আগেই চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষপাতদুষ্ট ও বিতর্কিত হিসেবে চিহ্নিত সদস্যদের সব গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে প্রত্যাহার এবং কর্তব্য পালন থেকে বিরত রাখতে হবে।
৬. সব রাজবন্দীকে মুক্তি দিতে হবে। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
৭. বর্তমান সরকারের আমলে বন্ধ করে দেয়া সব সংবাদপত্র ও স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল খুলে দিতে হবে। মাহমুদুর রহমানসহ আটক সব সাংবাদিককে মুক্তি দিতে হবে।
খালেদা জিয়া প্রস্তাবনাগুলো মেনে নিয়ে জাতীয় সঙ্কট নিরসনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা জনমত গঠনের মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ঘোষণা করছি এবং ঐক্যবদ্ধভাবে একটি জাতীয় আন্দোলন গড়ে তুলতে সব গণতান্ত্রিক দল, শক্তি ও ব্যক্তির প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, বিগত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করে জনগণের ভোটাধিকার হরণের দিন। আগামী ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র হত্যার বিরুদ্ধে জনমত গঠনের লক্ষ্যে ওই দিন সারা দেশে সভা-সমাবেশ, কালো পতাকা ও বিক্ষোভ মিছিল হবে। এ উপলক্ষে ঢাকায় আমরা একটি কেন্দ্রীয় সমাবেশ করতে চেয়েছি। আশা করি আমাদেরকে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে দেয়া হবে। আমরা জনগণকে সাথে নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামের কর্মসূচিকে অগ্রসর করে নিতে চাই। পর্যায়ক্রমে ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি আসবে। বাধা দিয়ে, আক্রমণ করে জনগণের আন্দোলনকে কেউ কখনো দমাতে পারেনি। এবারো পারবে না ইনশাআল্লাহ।’
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সবাইকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, আমাদের জাতীয় জীবনে বিদায়ী সালটি ছিল একটি দুঃসহ বছর। আমি দেশবাসীকে নতুন ইংরেজি বছরের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। শুভ নববর্ষ।
বিএনপি চেয়ারপারসন মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে বলেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সীমাহীন আত্মত্যাগের বিনিময়ে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। তারা এ দেশের মানুষের স্বাধীনতার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করেছিলেন। গণতন্ত্র, সাম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমাদের ভাইবোনেরা জীবন দিয়েছিলেন। আজ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার দখলদারেরা সেসব লক্ষ্যের কবর রচনা করেছে। আমরা মনে করি, লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন এ বাংলাদেশের মালিকানা এখন আর জনগণের হাতে নেই।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বহুল বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী পাস এবং জাতীয় নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করেছে। এর মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের খেয়ালখুশি ও সুবিধা মতো একতরফাভাবে সংবিধান পরিবর্তন করে দেশে সাংবিধানিক সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। কষ্টার্জিত গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে এবং কার্যত একদলীয় শাসনব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছে। ধূর্ত অপকৌশলের মাধ্যমে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে গিয়ে তারা জনমতের কোনো তোওয়াক্কা করেনি। এতে জনগণের ওপর স্বৈরশাসন চেপে বসেছে।
খালেদা জিয়া বলেন, নির্বাচনীব্যবস্থা প্রহসনে পরিণত এবং জাতীয় সংসদ কার্যত বিরোধী দলশূন্য হয়ে পড়েছে। গত ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদের তথাকথিত নির্বাচন ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রহসনে পরিণত হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ক্ষমতার দখলদারেরা আমাদের কণ্ঠ স্তব্ধ করতে চায়। দেশবাসী দেখেছে, কী ফ্যাসিবাদী কায়দায় গাজীপুরে সমাবেশ করতে দেয়া হলো না। সেখানে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে একটি পাল্টা সমাবেশের ঘোষণা তারা দেয়। আর প্রশাসন সেই বেআইনি সমাবেশ আহ্বানকারীদের নিরস্ত না করে ১৪৪ ধারা জারি করে। আমাদের সমাবেশ বন্ধ করে দেয়। গাজীপুরে আমাদের নেতাকর্মীরা মিছিল করতে চাইলে পুলিশ তাদের ওপর আক্রমণ করে। অথচ পুলিশি ছত্রছায়ায় ক্ষমতাসীনদের সমর্থক সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্যে মহড়া দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়।
খালেদা জিয়া বলেন, মিথ্যা মামলায় অস্থায়ী আদালতে আমি হাজিরা দিতে যাওয়ার সময় আমাদের নেতাকর্মী, সাধারণ মানুষ ও আমার গাড়িবহরের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছত্রছায়ায় সশস্ত্র হামলার দৃশ্য সবাই দেখেছেন। সশস্ত্র হামলাকারীদের নাম-পরিচয় ও ছবিসহ সংবাদমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রচারিত হয়েছে। সেই সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার দূরে থাকুক তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়নি। অথচ আমাদের দলের অসংখ্য নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের গ্রেফতার ও হয়রানি করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, এক বছর ধরে আমরা সর্বোচ্চ সংযম বজায় রেখে সঙ্ঘাত এড়িয়ে চলছি। অথচ প্রতিনিয়ত আমাদের কুৎসিত ও আক্রমণাত্মক ভাষায় হুমকি দেয়া হচ্ছে। আমাকে নাকি তারা মাইনাস করে দেবে। আমি মনে করি, চূড়ান্ত বিচারে মাইনাস করার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের।
অতীতে যারা মাইনাস করতে চেয়েছেন, তারাই মাইনাস হয়ে গেছেন। আর রাজনীতি থেকে আমাকে মাইনাস করার সিদ্ধান্ত একমাত্র দেশবাসী নিতে পারেন। অন্য কেউ নন। যারা হুমকি দিচ্ছে তারা তাদের ফ্যাসিবাদী চেহারাই সবার সামনে তুলে ধরছে। দেশবাসীই যথাসময়ে তাদের উপযুক্ত জবাব দেবে।
সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, বর্তমান জবরদখলকারী সরকার ক্ষমতায় আসার পর জনগণের সব মৌলিক অধিকার হরণ করেছে। বাক-ব্যক্তি-মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই। সমাবেশ ও প্রতিবাদের অধিকার রহিত করা হয়েছে। জনগণ ন্যায়বিচারের অধিকার থেকে বঞ্চিত। এ অবস্থা চরমে পৌঁছেছে গত ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনী প্রহসনের মাধ্যমে ক্ষমতা জবরদখল করার পর থেকেই। তারা জনগণের সমস্যা, আশা-আকাক্সক্ষা দাবি-দাওয়া, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, অবনতিশীল অর্থনীতি, জনগণের জীবন-জীবিকা কোনো কিছুর প্রতি ভ্রƒক্ষেপ করছে না। ছলে-বলে-কৌশলে জবরদখল করা ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করাই তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। সেই লক্ষ্যেই তারা সম্প্রচার নীতিমালা তৈরি করেছে বেসরকারি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলোকে পুরোপুরি কব্জায় নিতে। দলীয়করণ ও প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে ইতোমধ্যেই দুর্বল হয়ে পড়া বিচার বিভাগকে পূর্ণনিয়ন্ত্রণ করার হীন লক্ষ্যে বিচারপতিদের অভিশংসনের জন্য আইন পাস করেছে।
তিনি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অনেক আগেই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। সীমিত আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে গ্যাস ও বিদ্যুতের আরেক দফা দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে। আমরা বলেছি, আজ আবারো বলছি, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ালে জনগণকে সাথে নিয়ে তীব্র লাগাতার আন্দোলন শুরু করা হবে।
সুন্দরবনের পরিবেশ সম্পর্কে খালেদা জিয়া বলেন, রামপালে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও সুন্দরবনে তেলদূষণে বিনষ্ট করা হয়েছে পরিবেশ। ওই এলাকার জীববৈচিত্র্য আজ গুরুতর হুমকির মুখে। শিক্ষাব্যবস্থা ও পাবলিক পরীক্ষাকে পরিকল্পিত উপায়ে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংস করা হচ্ছে মাদকের ভয়াবহ বিস্তার ঘটিয়ে।
সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, সর্বগ্রাসী দুর্নীতিতে দেশ ছেয়ে গেছে। অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে। ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো লুণ্ঠিত হয়েছে। হাজার হাজার কোটি কোটি ডলার বিদেশে পাচার করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনে দাখিলকৃত হলফনামায় মন্ত্রী ও এমপিদের সম্পদের পরিমাণ গত পাঁচ বছরে কত গুণ বেড়েছে। কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মা সেতু, শেয়ার মার্কেট, হলমার্ক, ডেসটিনি ইত্যাদির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠন হয়েছে। অস্ত্র ক্রয় কেলেঙ্কারি ও রেলের কালো বিড়ালসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এদের দুর্নীতির তালিকা অনেক দীর্ঘ। তাদের লোভ এত দূর পর্যন্ত গেছে, মুক্তিযুদ্ধের সম্মাননার মেডেলের স্বর্ণ পর্যন্ত তারা চুরি করেছে।
তিনি বলেন, দেশে এখন গণতন্ত্র নেই। জনগণ অধিকার হারিয়েছে। সবখানে অস্বাভাবিক অবস্থা। সবাই আজ জীবন, সম্পদ, সম্মান ও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। কাজেই এবারের সংগ্রাম কেবল বিএনপি বা ২০ দলের নয়, সব দেশপ্রেমিক ও গণতান্ত্রিক মানুষের। তাই আমি সবাইকে এ আন্দোলনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানাই।
তিনি আরো বলেন, আমাদের দলমতের পার্থক্য আছে। সবারই নিজস্ব রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পৃথক ভাবনা ও কর্মসূচি আছে। কিন্তু দেশ রক্ষায়, জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনতে এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সবাইকে আজ একমত হতে হবে। আমি সবাইকে এক প্লাটফরমে এসে কিংবা নিজ নিজ অবস্থানে থেকে বৃহত্তর জাতীয় আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি। জেল-জুলুম উপেক্ষা করে এ আন্দোলন করতে হবে। একজন গ্রেফতার হলে আরেকজনকে এগিয়ে এসে আন্দোলনকে অগ্রসর করে নিতে হবে।
খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীনদের হাত আলেম, সেনা অফিসার ও নাগরিকদের রক্তে রঞ্জিত। এদের পায়ের তলায় মাটি নেই। এরা জনসমর্থনহীন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে বিচ্ছিন্ন। এরা বলপ্রয়োগ ও ভয় দেখিয়ে টিকে থাকতে চায়। জনগণ সাহস নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ালে এ অগণতান্ত্রিক এবং অবৈধ সরকারের পতন অনিবার্য। আমি মনে করি জনগণের বিজয় আসন্ন। আমি বিশ্বাস করি, আগামী বছর হবে জনগণের বিজয়ের বছর।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্যের সাথে আপনি একমত কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারেক রহমান সরাসরি কিছু বলেননি। তথ্যউপাত্ত দিয়ে কথা বলেছেন, যা বলেছেন, তার কোনোটিই তার বক্তব্য নয়।
দাবি আদায়ে সরকারকে আলটিমেটাম দেয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বছর তো পার হয়ে গেছে। আর সময় কোথায়। যত দ্রুত সম্ভব সঙ্কটের সমাধান করতে হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রস্তাবনা দিয়েছি। তা মেনে আলোচনায় বসবে কি না সেই সিদ্ধান্ত সরকারকে দিতে হবে।
৫ জানুয়ারি জনসভায় অনুমতি না দেয়া হলে বিএনপি কী করবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা কর্মসূচি পালন করবেন।
দলের সিনিয়র নেতাদের রাজপথে না থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে খালেদা জিয়া বলেন, মাঠে না থাকলে বলতে হবে যেসব মামলা করা হচ্ছে, সেগুলো মিথ্যা। নেতারা মাঠে আছেন, সময় হলে তারা মাঠে নামবে। এর আগে একই এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নেতারা মাঠে থাকেন। কিছু গণমাধ্যম গোয়েন্দা সংস্থা থেকে পাঠানো সংবাদ প্রকাশ করে। ওই সংবাদের তথ্য হচ্ছে- বিএনপি নেতারা মাঠে থাকেন না।
জামায়াতে ইসলামীকে সাথে নিয়ে রাজনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগই তো জামায়াতকে সাথে নিয়ে আন্দোলন করেছে। ৮৬’ , ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগের সাথে ছিল জামায়াত। আমরাও তাদের সাথে নিয়ে আন্দোলন করছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা বলেছি, বিচার হতে হবে আন্তর্জাতিক মানের ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়।