স্বাগত ২০১৫
দশ দিগন্ত আলো করে আজ ভোরে হলুদ সরষে স্রোতের আলো বেয়ে ছুটে চলা কিশোরীর চকিত চাহনির মতোই রহস্যাবৃত নতুন বছর ২০১৫ কে স্বাগতম। নিয়মমতো নতুন বছরে ভালো খবরের আশায় সবাইকে শুভ ইংরেজি নববর্ষ।
বদলে যাচ্ছে সময়, প্রযুক্তির স্পর্শ বাড়ছে, সেই সাথে বাড়ছে মানুষের এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা। এর ভেতরও সরকার দলীয়দের সীমাহীন অনিয়ম, আর অবিচারের কাছে নিশ্চল নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে গেছে সময়। দুঃসহ দুঃসময় যেন কাটে না। আসছে বছরে সব সামলে উঠে এগিয়ে যাবে প্রিয় স্বদেশ আর স্বদেশের মানুষ সে প্রত্যাশা সবার।
নতুন বছরে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা নিয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে সবাইর সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ। রাজনৈতিক অশনি সঙ্কেত, অর্থনৈতিক মন্দা, পরিবেশ দূষণ, সুন্দরবনের তেলবাহী ট্যাংকারডুবি, বিলুপ্ত প্রায় ইরাবতী ডলফিনের মৃত্যু, শীতল্যার পানিতে মাথায় আঘাত করে মেরে ফেলা সাতটি জীবন্ত মানুষের রক্তকান্না আর তাদের পরিবারের কষ্ট-আনন্দহীন দিনাতিপাতের সময়ে মতাসীনদের আস্ফালন-রক্তচু ঘিরে যে অনিশ্চয়তা সীমাহীন থেকে সীমাহীনতর হয়েছে, সে সময়েও আশা আছে।
আমরা আশাহীন নয়; এ রকম সময় স্থায়ীও হবে না বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিার্থী তারান্নুম। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ কখনো হারেনি; হারতে পারে না।
বিদায় বছরে কিছু ভালো খবরও ছিল। মানুষ নিজের চেষ্টায় এগিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর অন্যতম সেরা গবেষণাগার ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন ফর নিউকিয়ার রিসার্চে (সার্ন) বাংলাদেশের ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিার্থী মীর মেহেদী ফারুক ১৪ জুন থেকে ১৪ আগস্ট ইন্টার্নশিপ করে দেশে ফিরেছেন।
পার্বতারোহী বাংলাদেশী মেয়ে ওয়াশফিয়া ন্যাশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেলের অ্যাডভেঞ্চার অব দ্য ইয়ার ২০১৫ এর লড়াইয়ের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন।
বছরের শেষ সূর্য ডুবলেও তিস্তায় পানি গড়ায়নি, গড়াবে বলে শোনা যাচ্ছে। মোদি সরকারের সাথে সম্পর্কোন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে কবে নাগাদ সম্পর্ক সঠিক গতিতে চলবে, তা নিয়ে বিশ্লেষকদের নানা মত থাকলেও; উদার হস্তে ভারতকে সহায়তা করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার। দেশটি শুরুর দিকে বলেছিল বাংলাভাষীদের পুশব্যাক করবে। বছরের শেষ দিকে বলেছে ভারত হবে হিন্দুদের।
ভারতের জন্য টেলিট্রানজিটের বিষয়টি চূড়ান্ত, বিদ্যুৎ নির্ভরতা রয়েছে তাদের ওপর। করিডোর আছে স্বল্প পরিসরে। নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের মামলার আসামি নূর হোসেনের বিনিময়ে উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে ফেরত নেয়ার আয়োজনও চূড়ান্ত, আসামে জঙ্গি হামলার সাথে বাংলাদেশের জঙ্গিরা জড়িত এবং সন্ত্রাসী-জঙ্গিদের তালিকা বিনিময়ের পর কাজ করছে দুই দেশ এমন খবরও জানা।
ছিটমহল বিনিময়ের কথা জোরসে শোনা গেলেও আমরা হাল ছাড়িনি। মমতার মন গলেছে বলে খবরও এসেছে। সীমান্ত হত্যা বন্ধ হবে সে আশা করা হলেও এখনো তার প্রতিফলন মেলেনি।
মিয়ানমারের সাথে বান্দরবানের সীমান্ত সঙ্ঘাতে নিহত হয়েছেন বাংলাদেশী সীমান্তরী। চীনের কুনমিং পর্যন্ত সড়ক হবে বলে জানিয়েছে সরকার। সে জন্য সমঝোতাও হয়েছে। আকাশে উড়তে যাচ্ছে দেশের স্যাটেলাইট।
আসছে বছরটি সীমান্ত হত্যামুক্ত হোক; এমনটি চাইতেই পারেন বাংলাদেশের মানুষ।
কবি আল মাহমুদের কথায় আমরা আশায় বাঁচি। স্বপ্নে বাঁচি। স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি। কবিদের কাজ মানুষকে স্বপ্ন দেখানো। নিশ্চয় একদিন আমরা জিতব। সাধারণ মানুষ জিতবে।
কবি আল মাহমুদের মতো আমরাও ভাবছি আমরা জিতব, মানুষ হারে না। হারতে পারে না। তবুও শঙ্কা, উদ্বেগ, ভয় থেকেই যায়। সে ভয় কাটানোরও আয়োজন চলছে। জনগণকে সামনে রেখে; তাদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াইয়ের কথা বলছেন প্রধান দুটো রাজনৈতিক দল।
রেওয়াজ মতো নয়া বছরে দেশের মানুষকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় ছাড়াও থার্টিফার্স্ট পার্টি আর উৎসব-আনন্দ ও কনসার্টের মতো কিছু আনুষ্ঠানিকতা ছিল এবারো। গেল রাতে দুনিয়াজুড়ে ছিল নববর্ষকে স্বাগত জানানোর আয়োজন। রাত ১২টা ১ মিনিটে আনন্দ উদ্দামতায় মেতেছিল দুনিয়ার মানুষ। বিশেষ করে তরুণেরা এ উৎসব উপভোগ করেছেন নানা মাত্রায়। একে অন্যকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বিনিময় করেছেন উপহার। তবে রাজধানী ঢাকায় ছিল ব্যাপক কড়াকড়ি।
খ্রিষ্টিয় বর্ষ গণনার জনপ্রিয়তা থেকে দূরে ছিল না বাংলাদেশও। পুলিশের নিরাপত্তা সঙ্কেত উপোর চেষ্টা চোখে পড়েছে কম। আগে থেকে বলা ছিল বাইরে জটলা করা যাবে না। তাই হয়তো রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ দেশের অভিজাত এলাকাগুলোতে তরুণেরা ভিড় করতে পারেননি। বর্ষবরণ হয়েছে ইনডোরে। পাঁচ তারকা হোটেলগুলোতে ছিল পার্টি। কনসার্ট হয়েছে ঢাকার কাবগুলোতে। রেস্টুরেন্ট ও বাসাবাড়িতে পার্টির আয়োজন ছিল। ছিল ডিজে পার্টির আয়োজন, উদ্দাম নৃত্য আর সুরা সাকির আয়োজনও।
নিরাপত্তা বাহিনীর কড়াকড়ি আর শীতের কারণে আউটডোরে কোনো আয়োজন রাজধানীতে ছিল না। তবে গত রাত জিরো আওয়ারে রাজধানীর ইনডোরে নববর্ষবরণ উচ্ছ্বাসে ঘুম কাতুরে শীতকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে। পাঁচতারকা হোটেলের পানশালা আর পুল সাইডগুলো ছিল হ্যাপি নিউ ইয়ার পার্টিতে মুখর। তবে ভার্চুয়াল জগতে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময়ের উচ্ছ্বাস ছিল। সশরীরে উদযাপন আনন্দ উপভোগ করতে না পারায় মন খারাপ করেছেন অনেকে।
এদিকে বাংলাদেশের মতো রঙে রঙে বিশ্বজুড়ে পালন হয়েছে বর্ষবরণ। পৃথিবীর অনেক দেশ ও অঞ্চলের মানুষ ২০১৫ সালকে বরণ করে নিয়েছেন। সবচেয়ে আগে বর্ষবরণের ধুম পড়ে ফিজি ও নিউ জিল্যান্ডে। নিউ জিল্যান্ডের অকল্যান্ড টাওয়ার ও স্কাই টাওয়ারে বর্ণিল আলোকচ্ছটার বিস্ফোরণ দেখা যায়। এর কিছু সময় পরই ২০১৫ সালকে বরণ করে নেয় অস্ট্রেলিয়া। মনোহারি আলোর ফোয়ারায় আলোকিত হয়ে ওঠে সিডনির আকাশ। বর্ষবরণের উপলক্ষে বিশ্বে যত জমকালো অনুষ্ঠান হয়, তার মধ্যে সিডনি হারবার ব্রিজের আলোক-উৎসব অন্যতম। নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে আলোর খেলায় মেতে ওঠে সিডনি হারবারে জড়ো হওয়া প্রায় ১৬ লাখ মানুষ। বিশ্বের নানা প্রাপ্ত থেকে অসংখ্য মানুষ সিডনি হারবারে বর্ষবরণের উৎসবে যোগ দিয়েছে। বুধবার সকাল থেকেই খোলা আকাশের নিচে, কেউ ছাতা নিয়ে অবস্থান নেয় হারবার ব্রিজের পাশে। সন্ধ্যা হতেই তারা আনন্দে মেতে ওঠে। সেখানে সাতটন আতশবাজি দিয়ে আলোর ফোয়ারা করা হয়েছে। লেজার শোর চোখ-ধাঁধানো উৎসব, আলো নিয়ে আরো কত কী আয়োজন সিডনিতে।