সাহিত্যভুবন ২০১৪ : দেশ ও বিশ্ব
ড. ফজলুল হক সৈকত:
পেছনে ফিরে তাকাতে হয় মাঝে-মধ্যে। দেখে নিতে হয় পাওয়া-না-পাওয়ার কথা ও কল্পনাগুলো। হারানোর কষ্টও থাকে কিছু। সম্ভবত সামনে এগোনোর তাগিদ থেকেই পেছনে তাকানোর এই অভিপ্রায় মানুষকে নাড়িয়ে তোলে। আনন্দ আর কষ্টকে সাথী করে, নতুন করে নিজেকে, সমাজকে, সংস্কৃতিকে, সভ্যতাকে গড়ে তোলার প্রত্যয়ের পাঠ গ্রহণ করতে হয় প্রতিদিন প্রতিবছর। সাহিত্য যে মানুষকে সভ্যতার পথে পা রাখতে এবং অগ্রসর হতে নানানভাবে সহায়তা করছে, তা অস্বীকার করা যায় না। আর ভবিষত্যের আলোকময় জীবন ও সমাজ তৈরি করতেও শিল্প-সাহিত্য রসদ যোগান দিয়ে যাচ্ছে সব সময়।
বোধকরি, সাহিত্যের বাজারে সবচেয়ে আকর্ষণীয় খবর নোবেল পুরস্কার। যদিও বছরের সেরা সাহিত্যিকের নাম জানতে অপেক্ষা করতে হয় বছরের প্রায় শেষপাদ পর্যন্ত। অক্টোবরে আসে নোবেল বিজয়ীর নাম। ২০১৪ সালে নোবেল পেয়েছেন ফরাসি কথানির্মাতা প্যাত্রিক মোদিয়ানো। ইতিহাসকে সাহিত্যে কিভাবে স্থান দিয়ে সৌন্দর্য, প্রেরণা আর সাফল্যের সন্ধান করা যায়, সেই বার্তা দিয়েছেন মোদিয়ানো। তিনি সমকালে ফ্রান্সে এবং জার্মানিতে বেশ গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় কথাশিল্পী। নিজ দেশ ফ্রান্সের চেয়ে বরং জার্মানিতেই তার পরিচিতি ও সমাদর বেশি। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রায় শেষপ্রান্তে ১৯৪৫ সালে জন্মগ্রহণ করেছেন। উপন্যাসে তুলে ধরেছেন অধিকৃতদের জীবনেতিহাস। কাজেই তিনি ফরাসিদের প্রাণের মানুষ।
সাহিত্যের খবরাখবর, প্রকাশ-চর্চা-পর্যালোচনার প্রায় প্রধান জায়গা সাহিত্য-সাময়িকী। শিল্পকলা-সাহিত্য-দর্শন-রাজনীতি-সমাজচিন্তা ও নিরীক্ষামূলক লেখালেখি স্থাপন পায় সাহিত্য পাতায়। গতবছরে সাহিত্য সাময়িকীর জন্য বিপুল সাড়া জাগানো খবর ছিল বাংলাদেশি বংশোদভূত আমেরিকার নাগরিক ব্যাংকার জিয়া হায়দার রহমানের উপন্যাস ‘ইন লাইট অব হোয়াট উই নো’ (‘আমাদের জানাশোনার আলোয়’ অথবা ‘আমরা যদ্দুর জানি তার আলোয়’)। পিকাডো থেকে প্রকাশ হয়েছে বইটি। আর প্রকাশের পরপরই রিভিউ এবং লেখকের সাক্ষাৎকার ছেপেছে ‘নিউইয়র্ক টাইমস’।
দেশে কয়েকটি গ্রন্থ নানান কারণে আলোচনার টেবিলে জায়গা করে নেয় ‘অবসর’ থেকে প্রকাশিত জগলুল আলমের ‘বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান (১৯৬৯-৭৫): মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের গোপন দলিল’, ‘বাংলাপ্রকাশ’-এর মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান রচিত ‘দেশভাবনা’, ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ থেকে প্রকাশিত হাসান আজিজুল হকের আত্মজীবনীর ৩য় পর্ব ‘এই পুরাতন আখরগুলি’, মোহাম্মদ আবদুল হাই সম্পাদিত ‘বাঙালির ধর্মচিন্তা’ (সূচীপত্র), আহমদ রফিকের ‘দেশবিভাগ: ফিরে দেখা’ (অনিন্দ্য) শারমিন আহমদ রচিত ‘তাজউদ্দীন: নেতা ও পিতা’ (ঐতিহ্য), এ কে খন্দকারের ‘১৯৭১: ভেতরে বাইরে’ (প্রথমা প্রকাশন), ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের লেখা ‘বাংলাদেশ: ইমার্জেন্সি অ্যান্ড দি আফটারম্যাথ: ২০০৭-২০০৮’ (ইউপিএল)
বহুল আলোচিত ম্যান বুকার পুরস্কার ২০১৪ লাভ করেছেন অস্ট্রেলীয় লেখক রিচার্ড ফ্যানাগান। ‘দ্য ন্যারো রোড টু দ্য ডিপ নর্থ’ উপন্যাসের জন্য তাকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। উপন্যাসটির ক্যানভাসে আঁকা হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আর নর-নারীর প্রেম-ভালোবাসা। কেউ কেউ এটিকে বলেছেন ‘প্রেম ও মৃত্যুর আখ্যান’। ছোটগল্পের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে দামি পুরস্কার হিসেবে খ্যাত ফ্রাঙ্ক ও’কনর সাহিত্য পুরস্কারটি পেয়েছেন আইরিশ লেখক কলিন ব্যারেট। তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘ইয়াং স্কিনস’-এর জন্য দেয়া হয় পুরস্কারটি। বিচারকদের মতে, একটি সুনির্দিষ্ট ধ্রুপদী সাহিত্যের সবগুলো বৈশিষ্ট্য এই বইটির মধ্যে রয়েছে। ব্রিটেনের সবচেয়ে পুরনো ‘জেমস টেইট ব্ল্যাক মেমোরিয়াল সাহিত্য পুরস্কার-২০১৪’ জিতেছে ইংল্যান্ডের প্রত্যন্ত এলাকার একটি জনগোষ্ঠীর ধীরে ধীরে খণ্ড খণ্ড হয়ে যাওয়ার কাহিনি-নির্ভর উপন্যাস ‘হারভেস্ট’ এবং একজন বুকার পুরস্কারজয়ী ঔপন্যাসিকের জীবনীগ্রন্থ ‘পেনেলোপ ফিটজেরাল্ড’। ‘হারভেস্ট’ লিখেছেন ব্রিটেনের প্রখ্যাত কথানির্মাতা জিম ক্রেস আর ‘পেনেলোপ ফিটজেরাল্ড’-এর লেখক ডেম হারমিওন লি। প্রয়াত প্রকাশক জেমস টেইট ব্ল্যাকের নামে ১৯১৯ সালে এই পুরস্কার প্রবর্তিত হয়। স্কটল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব এডিনবরার লিটারেচার বিভাগের শিক্ষক ও পোস্ট গ্র্যাজেুয়েট শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত বিচারক প্যানেল প্রতি বছর প্রায় ৪০০ বইয়ের ভেতর থেকে সেরা বইগুলো নির্বাচন করে থাকেন। পিছনে ফেলে আসা বছরে ‘ইন্টারন্যাশনাল ডিলান থমাস প্রাইজ’ লাভ করেছেন ৩৯ বছর বয়সী আমেরিকান লেখক জোসুয়া ফেরিস। তার ৩য় উপন্যাস ‘টু রাইস এগেইন অ্যাট অ্যা ডিসেন্ট আওয়ার’-এর জন্য দেয়া হয় পুরস্কারটি। ভারতের প্রয়াত প্রখ্যাত লেখক ও সাংবাদিক খুশবন্ত সিং-এর নামে ২০১৪ সালে একটি সাহিত্য পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়েছে। দেশব্যাপী কাব্যচর্চাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে কাব্যগ্রন্থের জন্য এ পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। পুরস্কারের অর্থমূল্য ২ লাখ রুপি। যুক্তরাষ্ট্রের উইল ইজনার কমিক ইন্ডাস্ট্রি অ্যাওয়ার্ড বা সংক্ষেপে ইজনার অ্যাওয়ার্ড হচ্ছে গ্রাফিক নভেলের সবচেয়ে বড় পুরস্কার। একে কমিকসের অস্কারও বলা হয়। ২৪টিরও বেশি ক্যাটাগরিতে দেওয়া হয় এই পুরস্কার। ২০১৪ সালে সর্বোচ্চ ৩টি ক্যাটাগরিতে পুস্কোর জিতেছে ব্রায়ান কে ভন ও ফিওনা স্ট্যাপলসের মহাকাশ অপেরা সিরিজ ‘সাগা’। ২০০৫ সালে প্রবর্তিত ব্রিটেনে রহস্যোপন্যাসের (ক্রাইম নভেল) জন্য পুরস্কার ‘থিকস্টোনস ওল্ড পিকুলিয়ার’ ২০১৪ সালে লাভ করেছেন ব্রিটিশ লেখক বেলিন্ডা বাওয়ার। গত বছর ভারতের সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পেয়েছেন ৮জন কবি। বাংলা ভাষার উৎপলকুমার বসু, দিল্লির আদিল জুসাওয়াল, বোড়ো কবি উরখাও গৌড়া, কাশ্মিরি কবি শাদ রমজান, ওড়িয়া কবি গোপাল ক্রুষ্ণা, পাঞ্জাবি কবি যশবিন্দর, সিন্ধি কবি গোপ কামাল, ও উর্দু কবি মুনাওয়ার রানা। স্পেনের ‘প্রিন্স অব আস্তুরিয়াস লিটারেচার অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন আইরিশ লেখক জন ব্যানভাইল। জ্যামাইকার কবি কেই মিলার পেয়েছেন ২০১৪ সালের ‘ফরওয়ার্ড পোয়েট্রি প্রাইজ’। সিঙ্গাপুরের শিল্প-সাহিত্যের সবচেয়ে বড় পুরস্কার ‘কালচারাল মিড্যালিয়ান’ পেয়েছেন তামিল কবি, গীতিকার ও গদ্যশিল্পী কে টি এম ইকবাল। বিবিসি ‘ন্যাশনাল শর্টস্টোরি অ্যাওয়ার্ড’ জয় করেছে মার্কিন লেখক লিওনেল শ্রিভার। ২০০৬ সাল থেকে এই পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। স্পেনের গৃহযুদ্ধের (১৯৩৯-১৯৩৯) ওপরে লেখা লিদি স্যালভেরের ‘পাস প্লুরে’ (কান্না করো না) নামের উপন্যাস গত বছর ফ্রান্সের শীর্ষস্থানীয় সাহিত্য পুরস্কার ‘প্রি গঁক্যুর’ লাভ করেছে। যুক্তরাজ্যে নন-ফিকশনের সবচেয়ে দামি ‘স্যামুয়েল জনসন’ পুরস্কারটি জিতেছে হেলেন ম্যাকডোনাল্ডের ‘এইচ ইজ ফর হৌক’ গ্রন্থটি। ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বেসরকারি সম্মাননা ‘প্রেসিডেন্সিয়াল ফ্রিডম মেডেল’ পেয়েছেন ১৯ জন। তাদের মধ্যে চিলিয়ান-আমেরিকান বেস্টসেলিং লেখক ইসাবেলের নাম সবার আগে আলোচনায় আসে। ইবাবেলের ২১টি বই এ পর্যন্ত প্রায় ৬ কোটি কপি বিক্রি হয়েছে। আর তার লেখা অনূদিত হয়েছে ৩৫টিরও বেশি ভাষায়। গত বছর ব্যাক ব্যাংক সমকাল সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছে ৩টি গ্রন্থÑ কথাসাহিত্য শাখায় মঈনুল আহসান সাবেরের ‘এখন পরিমল’ (প্রকাশক: অনিন্দ্য); প্রবন্ধ-আত্মজীবনী-অনুবাদ শাখায় মাসরুর আরেফিন-এর ‘ফ্রানৎস কাফকা গল্পসমগ্র-১’ (প্রকাশক: পাঠক সমাবেশ) আর ‘হুমায়ূন আহমেদ তরুণ সাহিত্যিক পুরস্কার’ পর্বে পুরস্কৃত হয়েছে বদরুন নাহারের গল্পগ্রন্থ ‘বৃহস্পতিবার’ (প্রকাশক: শুদ্ধস্বর)।
২০১৪ সালে আমরা হারিয়েছি ‘সাদা বিশ্বের এক কালো শিখা’ মায়া এঞ্জেলোকে। পৃথিবী থেকে বর্ণবাদ এখনও মুছে যায়নি। বিদায় নিয়েছেন কালোদের সবচেয়ে বড় নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা। কিন্তু তার প্রেরণা আর ত্যাগতো শেষ হবার নয়। রাজনীতিতে যেমন নেলসন, তেমনি আফ্রিকার সাহিত্যে এক অনন্য নাম মায়া। কালো মানুষদের এই সোচ্চার কন্ঠস্বর নিজের জীবন, কৃষ্ণাঙ্গ সচেতনতা, তাদের হতাশা-প্রেম, নারীর কালো-সচেতনতা প্রভৃতি প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন তার লেখায়। মারা গেছেন ‘অ্যাট প্লে ইন দ্য ফিল্ডস অব দ্য লর্ড’ উপন্যাসখ্যাত মার্কিন সাহিত্যিক ও পরিবেশবাদী পিটার ম্যাটথিয়েসেন। মৃত্যুর একদিন পরই তাঁর প্রকাশিত হয় তার সর্বশেষ উপন্যাস ‘ইন প্যারাডাইস’। বিখ্যাত সাহিত্য সাময়িকী প্যারিস রিভিউয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাও ছিলেন ম্যাটথিয়েসেন।
পরলোকে গমন করেছেন ব্রাজিলিয়ান লেখক, দার্শনিক ও তাত্ত্বিক রুবেম আলভেস। শিক্ষা ও মনস্তত্ত্বের ওপর আলভেসের দেড় শতাধিক গ্রন্থ বিশ্ববাসীর জন্য বিরাট সম্পদ হয়ে রয়ে গেছে। ক্যাম্পিনাসে তিনি একটি ইনস্টিটিউট চালাতেন, যার লক্ষ্য শিক্ষার মধ্য দিয়ে সামাজিক সংশ্লিষ্টতা সৃষ্টি করা। আলভেস কবিতা, গল্প এবং নিয়মিত কলামও লিখতেন। বিশ্বসাহিত্যের একজন জনপ্রিয় লেখক, ‘নিঃসঙ্গতার একশো বছর’খ্যাত ঔপন্যাসিক গাব্রিয়েল গাসিয়া মার্কেজ মারা যান গত এপ্রিলে। দক্ষিণ আফ্রিকার লেখক নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক ও বর্ণবাদবিরোধী মানবধাকিার কর্মী নাদিন গার্ডিমার মারা যান ২৩ জুলাই। আমেরিকার কবি আমিরি বারাকাকেও আমরা হারিয়েছি গত বছর। বারাকা টুইন টাওয়ার হামলা নিয়ে একটি কবিতা লিখে খুব বিতর্কিত হয়েছিলেন। এ জন্য তাঁকে নিউ জার্সির ‘পোয়েট লরিয়েট’ পদবিও হারাতে হয়েছিল। প্রখ্যাত ভারতীয় লেখক খুশবন্ত সিং মৃত্যুবরণ করেন গত মার্চে। ইংরেজ ঔপন্যাসিক, অভিনেত্রী ও মডেল এলিজাবেথ হাওয়ার্ড মারা যান ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে। পুলিৎজার পুরস্কারজয়ী মার্কিন কবি, সম্পাদক, অনুবাদক ও ঔপন্যাসিক মার্ক স্ট্র্যান্ড ও তাঁর সমসাময়িক আমেরিকান ফিকশনের মাস্টার বলে খ্যাত কেন্ট হারুফও মারা গেছেন গত বছর। চলে গেছেন ব্রিটিশ লেখক ও সাহিত্য-সমালোচক বিশ্ববিখ্যাত সাহিত্য সাময়িকী ‘লন্ডন রিভিউ অব বুকস’-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক কার্ল মিলার। সম্পাদনা ও লেখালেখির পাশাপাশি মিলার ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন-এ আধুনিক সাহিত্য পড়াতেন।
মৃত্যুবরণ করেছেন বার্নার্ডোস বয় হিসেবে পরিচিত ব্রিটিশ লেখক টমাস, ফরাসি লেখক, সম্পাদক ও কার্টুনিস্ট ফ্রাঁসোয়া কাভানা, ব্রিটিস লেখক ফিলিপ ডরোথি জেমস, মার্কিন লেখক ও অধিকারকর্মী লেসলি ফিনবার্গ। মারা গেছেন জার্মান লেখক ও সাংবাদিক রাল্ফ জর্ডানো। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ সব ঘটনার সাক্ষী ছিলেন। না ফেরার দেশে পা বাড়িয়েছেন ২০০৫ সালে বাংলা না একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পাওয়া প্রখ্যাত অনুবাদক ফখরুজ্জামান চৌধুরী। ভিন্ন ভাষার সাহিত্য বাংলা ভাষায় রূপান্তরে তাঁর অবদান মুছে যাবার নয়। আমরা আরো যেসব সাহিত্যিককে হারিয়েছি, তারা হলেন চল্লিশের দশকের কবি ও বাংলাদেশের প্রথম আধুনিক কবি আবুল হোসেন, প্রখ্যাত দার্শনিক, শিক্ষাবিদ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সরদার ফজলুল করিম, গবেষক-আইনবিদ ও অভিধান-প্রণেতা বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, লেখক ও শিক্ষাবিদ জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, চিত্রশিল্পী, প্রচ্ছদশিল্পী ও কবি কাইয়ুম চৌধুরী, অনুবাদক আবু শাহরিয়ার, কবি ও সাহিত্য-সম্পাদক তিতাস চৌধুরী, লোকসাহিত্য সংগ্রাহক হারুন আকবর, ষাটের দশকের কবি নগরের বাউল বলে খ্যাত অরুনাভ সরকার এবং কবি-গবেষক-শিক্ষাবিদ আবু তাহের মজুমদার।
প্রকৃতির নিয়মে একটি বছরের সবগুলো দিন পার করে আমরা পা দিয়েছি আরেকটি বছরে। পুরনো হিসাবের খাতা বন্ধ হয়ে খুলে গেছে হালখাতা। নতুন বছরে শিল্প-সাহিত্যের ভুবন বয়ে আনবে নতুনতর আনন্দ-প্রণোদনা, তৈরি হবে নতুন নতুন লেখক ও শিল্প-কারিগর এই প্রত্যাশা। নোবেলজয়ী ব্রিটিশ লেখক ডোরিস লেসিং-এর একটি উপহারের খবর দিয়ে ২০১৪ সালের সাহিত্যভুবনের আলোচনার সমাপ্তি টানতে চাই। লেসিং মারা গেছেন মাত্র এক বছর আগে। তিনি বিশ্বাস করতেন বই-ই পারে একটি জাতিকে জ্ঞানের আলো দান করতে, সমৃদ্ধ করতে, মুক্তি দিতে। এই বোধ থেকেই আপাদমস্তক বইপ্রেমী এই মানুষটি তাঁর শৈশব-কৈশোরের স্মৃতি জড়িত জিম্বাবুয়েতে ৮০-র দশকে শুরু করেছিলেন লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে লোকজনকে উদ্বুদ্ধ করার কার্যক্রম।
জিম্বাবুয়ের প্রতি অফুরান ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে তিনি হারারের পাবলিক লাইব্রেরির জন্য ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে বাছাই করা তিন হাজার বই দান করে যান।
‘বুক এইড ইন্টারন্যাশনাল’ নামের একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বইগুলো ওই লাইব্রেরিতে পৌঁছে দেয়ার জন্য। এই উপহার প্রসঙ্গে হারারের মেয়র বারনার্ড মানিয়েনিয়েনি মন্তব্য করেছেন ‘এটি একজন মানুষের কাছ থেকে পাওয়া চমৎকার উপহার, যার মধ্য দিয়ে মৃত্যুর পরও এ দেশের প্রতি তাঁর ভালোবাসার প্রমাণ মিলল।’