গণহত্যার বিষয়ে সরকারের প্রেসনোট প্রত্যাখ্যান
ইসলামী দলসমূহের নেতৃবৃন্দ গতকাল মঙ্গলবার এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, ৫ মে কালো রাতের গণহত্যার ব্যাপারে দীর্ঘ ৪ মাসাধিকাল পর সরকারের কাল্পনিক, সাজানো প্রেসনোট আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। তারা বলেন, হেফাজতে ইসলামসহ দেশের সকল ইসলামী সংগঠন ও সর্বস্তরের সচেনতন মহল উক্ত কালো রাতের পৈশাচিক গণহত্যার বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করলেও আজ পর্যন্ত তার কোন ব্যবস্থা হয়নি।
তারা বলেন, দুনিয়ার ইতিহাসে বর্বোরচিত এ নৃশংস গণহত্যা বিশ্ব বিবেককে হতভম্ব করেছিল। গভীর রাতে বাতি নিভিয়ে, মিডিয়া তাড়িয়ে দিয়ে বিজিবি, র্যাব, পুলিশকে জোরপূর্বক ব্যবহার করে উচ্ছৃংখল সাদা পোষাকধারী অস্ত্রধারীর সম্বনয়ে যে বর্বর নৃশংস, বিভৎস গণহত্যা চলেছে বিদেশী মিডিয়ায় সেই করুণ চিত্র দেখে ডুকরে ডুকরে কেঁদেছে বিশ্ববাসী। যা দুনিয়ার সভ্যতার ইতিহাসকে চিরতরে কলঙ্কিত করেছে। যা ’৭১ এর পাক হানাদার বাহিনীর বর্বর হামলা ও ফ্যাসিবাদী, ন্যাৎসিবাদীর বর্বরতাকেও হারমানিয়েছে। হেফাজতে ইসলামের পূর্বঘোষিত সুশৃংখল অবরোধ ঢাকার ৬টি প্রবেশদ্বারে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান চলতে থাকলেও কতিপয় সুবিধাবাদীদেরকে ম্যানেজ করে প্রশাসন থেকে তড়িঘড়ি করে শাপলা চত্বরে একত্রিত করার ব্যবস্থা করা হয়। পুলিশ প্রসাশনও শাপলা চত্বরে একত্রিত হওয়ার অনুমতিও সহজে দিয়ে দিল। অথচ শাপলা চত্বরে একত্রিত হওয়ার পরিকল্পনা হেফাজতের নেতৃবৃন্দের ছিল না। সুষ্ঠ তদন্ত হলে অবশ্যই বেরিয়ে আসবে ঢাকা অবরোধ চলাকালিন সময়ে কোন কোন সুবিধাভোগী, ষড়যন্ত্রকারী, মুখোশধারী নেতারা পুলিশ ও প্রশাসনের সাথে গোপন আতাত করে ৬টি প্রবেশ দ্বারের সকল নেতা-কর্মীদেরকে শাপলা চত্বরে একত্রিত করে গণহত্যার দিকে ঠেলে দিল! দুপুর থেকেই বিভিন্ন স্পট থেকে আগত সহজ সরল আলেম ওলামাদের উপরে কারা নৃশংস হামলা চালিয়েছে, বায়তুল মোকাররমের দোকানপাটে কারা আগুন দিয়েছে, পবিত্র কুরআন মজিদে কোন নরপশু আগুন ধরিয়েছে, আওয়ামী মহা জোটের অন্তর্ভূক্ত কোন দলের নেতা-কর্মীরা সেগুনবাগিচায় গাছ কাটা ও গণতা-বের নেতৃত্ব দিয়েছে তা ঐ দিন রাত দুইটা পর্যন্ত প্রায় সকল টিভি চ্যানেল সরাসরি সম্প্রচার করেছে এবং ৬ মে দৈনিক ইনকিলাবসহ অনেক জাতীয় দৈনিকে কুরআন শরীফে আগুন লাগানোর নরপশুর ছবিও প্রকাশ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ভিডিও চিত্র দেখে দেখে সকলকে ধরা হবে। অথচ কাদের খুশি করার জন্য আজ পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি- তা আমাদের বোধগম্য নয়।
ইসলামী নেতৃবৃন্দ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, উক্ত কালো রাত্রের গণহত্যার প্রকৃত তথ্য সরকারের কাছেই রয়েছে বলে আমরা বিশ্বাস করি। সরকারি ভাষ্যমতে দেড় লক্ষাধিক গুলী ছোড়া হয়েছে বলে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আগত সারা দিনের পরিশ্রান্ত, ক্লান্ত, ক্ষুর্ধাত, পিপাসার্ত, ঘুমন্ত আলেম ও হাফিজদের উপরে যৌথবাহিনী ও সন্ত্রাসীদের এ বর্বর হামলায় কত নিরহ মানুষ শহীদ হতে পারে তা সহজেই বিবেকবানগণ অনুধাবন করতে পারবেন।
অপরদিকে দুপুর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত শহীদের লাশের চিত্র সমূহ মিডিয়ার মাধ্যমে বিশ্ববাসী সরাসরি অবলোকনই করেছে। কিন্তু আফসোসের বিষয় প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাাঁড়িয়ে একবার বললেন ৫ মে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। হেফাজত কর্মীরা রং মেখে শুয়ে ছিল। আবার বললেন, ৪ জনের লাশ পাওয়া গেছে। পুলিশ কমিশনার ও বিজিবি মহাপরিচালক প্রথমে বলেছিলেন ঐ রাতে মাত্র ৪টি লাশ পাওয়া গেছে পরে ১১টি লাশের কথা মিডিয়াতে স্বীকার করেছেন। কালো বিড়ালের মালিক খ্যাত একজন মন্ত্রী বললেন, হেফাজত কর্মীরা পুলিশের উচ্ছেদ অভিযানে সুবহানাল্লাহ পড়তে পড়তে পালিয়েছে। আলেম, ওলামা, পীর, মাশায়েখ, হাফেজদের রক্তের সাথে এ কিধরনের উপহাস তা বিশ্ব বিবেক জানতে চায়? ওলামাদের রক্তের বিচার কি এ জমিনে হবে না? দীর্ঘ ৪ মাস ১০দিন পর হঠাৎ করে ১২ আগস্ট সরকারের এ গণহত্যার বিষয়ে এক কাল্পনিক সাজানো প্রেসনোট আবারও অসংখ্য প্রশ্নের উদয় হচ্ছে। মিথ্যা সাজাতে গেলেতো সময় ক্ষেপন করা লাগেই বটে। আমরা সরকারকে স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই ওলামাদের রক্তের সাথে উপহাস করা বন্ধ করুন। দেশ থেকে ইসলাম নির্মূল নীতি পরিহার করুন। ইসলাম ধ্বংসের চক্রান্তাকারীদেরকে কঠোর হস্তে দমন করুন। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের আড়ালে ইসলামী রাজনীতি তথা জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ বন্ধের উদ্যোগ নিয়ে আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করবেন না। স্মরণ রাখতে হবে সরকার আসে- সরকার যায়, ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে কেউ কোন দিন ক্ষমতার মসনদে টিকে থাকতে পারেনি। আবু জেহেল আবু লাহাব, ফেরাউন, নমরুদ ও নিকট অতীতে সাদ্দাম-গাদ্দাফির করুণ পরিণতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন। ঈমানদারদের সাহায্য ও উদ্ধার করার দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালা নিজেই নিয়েছেন।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন শীর্ষ আলেমে দ্বীন, রাবেতা আলম আল ইসলামীর স্থায়ী সদস্য ও সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদের সভাপিত মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রধান আমীরে শরীয়ত ও ইসলামী দলসমূহের আহ্বায়ক ও হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর মাওলানা শাহ আহমাদুল্ল¬¬াহ আশরাফ, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের সভাপতি শাইখ মাওলানা আবদুল মোমিন, খেলাফত মজলিসের আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মাদ ইসহাক, ইসলামী ঐক্যজোটের আমীর মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী, হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী, সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীন, ইসলামী দলসমূহের সদস্যসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খান, সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা মহিউদ্দীন রব্বানী, সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদের যুগ্ম-মহাসচিব ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, ফরায়েজী আন্দোলনের আমীর মাওলানা আবদুল্লাহ মোহাম্মাদ হাসান, সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদের ঢাকা মহানগরী সভাপতি মাওলানা আহমাদ আলী কাসেমী, হক্কানী পীর মাশায়েখ পরিষদের সভাপতি শাহতলীর পীর মাওলানা আবুল বশর, তাহরিকে খতমে নুবয়াতের চেয়ারম্যান ড. মাওলানা সৈয়দ এনায়েত উল্লাহ আব্বাসী পীর সাহেব, মীরেরসরাইর পীর মাওলানা আঃ মোমেন নাছেরী, শর্ষীনার পীর মাওলানা শাহ আরিফ বিল্লাহ সিদ্দিকী, টেকেরহাটের মাওলানা কামরুল ইসলাম সাঈদ আনসারী, জাতীয় খতীব পরিষদের আমীর মুফতি মাওলানা মাসউদুর রহমান, ইসলাহুল উম্মাহ চেয়ারম্যান মাওলানা আবু হানিফ নেসারী, জাতীয় ফতোয়া বোর্ড সভাপতি প্রফেসর ড. মাওলানা ইহইয়ার রহমান, জমিয়াতে ওলামায়ে দেওবন্দ পরিষদের সভাপতি মাওলানা মুহাদ্দিস আবদুল্লাহ কাসেমী ও সেক্রেটারি মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক কাসেমী, ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান এডভোকেট আবদুল মোবিন, ইসলামিক পার্টির মহাসচিব এম.এ রশীদ প্রধান, খেলাফত যুব আন্দোলনের সভাপতি মুফতি ফখরুল ইসলাম, জমিয়তুল মুফাসসিরিন সভাপতি মাওলানা বেলাল হোসাইন ও সেক্রেটারি মাওলানা নুরুল আমীন, ইসলাহুল মুসলিমিন সভাপতি মুফতি আবুল বাশার, ইসলামের জনতা সভাপতি মুফতি আবদুল কুদ্দুস, ইসলামী সংগ্রাম পরিষদ সেক্রেটারি ড. মাওলানা আবদুর রহমান, হুফ্ফাজ পরিষদ সভাপতি হাফেজ লেয়াকত হোসাইন ও সেক্রেটারি মুফতি মাহবুবুর রহমান, ইসলামী অন লাইন এ্যাক্টিভিটস সভাপতি শায়খুল হাদীস মাওলানা আবদুস সামাদ ও মহাসচিব মুফতি আবু আনাস, নাস্তিক-মুরতাদ প্রতিরোধ কমিটির চেয়ারম্যান মুফতি আ ন ম আবদুল কুদ্দুস, আহকামে শরীয়াহ হেফাজত কমিটির চেয়ারম্যান মুফতি মাহবুবুর রহমান ও কো-চেয়ারম্যান মুফতি ড. আবু ইউসুফ, ইমাম কল্যাণ সমিতির সভাপতি পীর মাওলানা সালাহ উদ্দীন, জাতীয় ইমাম সোসাইটির মহাসচিব মুফতি জোবায়ের আহমদ কাসেমী, মাওলানা আবদুর রহমান চৌধুরী, মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা লুৎফর রহমান, মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল জাব্বার, মুফতি ঈসা, মুফতি কেফায়েত উল্লাহ, মাওলানা আবু দাউদ জাকারিয়া, মুফতি ডা. আবদুল কাউয়ূম আযহারী, মুহাদ্দিস মাওলানা রুহুল আমীন, মুফাসসির আবুল কাশেম গাজী, মুহাদ্দিস আবুল হাসান, মুফতি হোসাইন আহম্মাদ, অধ্যক্ষ মাওলানা মোশাররফ হোসাইন, মুফতি কাজী জালাল উদ্দীন, মুফতি নূর হোসাইন, ইমাম মুয়াজ্জিন পরিষদ সভাপতি মাওলানা সালেহ সিদ্দিকী ও সেক্রেটারি মুফতি জুবায়ের আহমদ, মাদরাসা কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মাওলানা মহিউদ্দীন মাসুম, তালিমুল কুরআন সোসাইটির মহাসচিব মুফতি আবদুল হালিম, আল কুরআন ফাউন্ডেশন সভাপতি মুফতি জামাল উদ্দীন ও সেক্রেটারি মুফতি নূর হোসাইন, জাতীয় ইমাম ওলামা পরিষদের সভাপতি শায়খুল হাদীস মাওলানা ফজলুর রহমান ও মহাসচিব মাওলানা এবিএম শরিফুল্ল¬াহ, মাদরাসা মসজিদ ও খানকা ঐক্যপরিষদ সভাপতি মাওলানা রফিকুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা গোলাম কিবরিয়া, ইসলামী সমাজ সভাপতি মুফতি মাহমুদুল হাসান ও সেক্রেটারি জেনারেল মুফতি জাকারিয়া ইসলাহী প্রমুখ।