লন্ডনে ‘গো হোম বিলবোর্ড’ নিয়ে বেকায়দায় হোম অফিস

UKতানজির আহমেদ রাসেল: বৃটেন থেকে অবৈধ ইমিগ্র্যান্ট তাড়াতে বিশাল ভ্যানে ‘গো হোম অর ফেইস এরেস্ট’ লেখা বিলবোর্ড লাগিয়ে পরিচালিত প্রকল্পের বিষয়ে তদন্ত শুরু করতে যাচ্ছে বিজ্ঞাপন সম্পর্কিত দেশের সর্বোচ্চ স্বাধীন নীতিনির্ধারক সংস্থা এডভার্টাইজিং স্ট্যান্ডার্স অথরিটি (এএসএ)। ফলে বেকায়দায় পড়েছে হোম অফিস। ৬০টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে এডভার্টাইজিং স্ট্যান্ডার্স অথরিটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। লিবারেল ডেমোক্রেটস ও মানবাধিকার বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘লিবার্টি’ সরকারের এই প্রকল্পের সমালোচনা করে অবৈধ ইমিগ্র্যান্ট তাড়াতে হোম অফিসের বিতর্কিত প্রচারণার বিরুদ্ধে পাল্টা প্রচারাভিযানে নেমেছে। তারা ‘স্টিয়ারিং আপ টেনশন অ্যান্ড ডিভিশন ইন দ্য ইউকে ইল্লিগ্যালি? হোম অফিস থিঙ্ক এগেইন’ লেখা ভ্যান রাস্তায় নামিয়েছে।
অবৈধ ইমিগ্র্যান্ট পাকড়াও করতে কেনসাল গ্রীন এবং ওয়ালথামস্টোতে স্পট চেক করে হোম অফিস নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। শুধু অশ্বেতাঙ্গকে টার্গেট করে এসব স্পট চেকে বিব্রতকর আচরণের ভিডিওচিত্র ফেসবুক ও টুইটারে দেখে বিতর্কের ঝড় ওঠে। বৃটেনের শান্তি বিনষ্টকারী এ উদ্যোগ বন্ধের দাবি বিভিন্ন সংগঠন। এছাড়া ইক্যুলিটি অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস কমিশন এই স্পট চেকের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। বৃটেনের সবচেয়ে বড় ট্রেড ইউনিয়ন- ইউনাইট- এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে। লিবার্টির প্রচারণার অংশ হিসেবে তাদের ভ্যান হোম অফিস, ওয়েস্টমিনস্টার, কেনসাল গ্রীন ও ওয়ালথামস্টো এলাকায় যাবে।
এদিকে, সরকার তাদের ‘গো হোম’ বিজ্ঞাপনটি বর্ণবাদী নয় বলে উল্লেখ করেছে। হোম অফিস জানায়, সময়মতো তারা তাদের অবস্থান জনগণের সামনে উপস্থাপন করবে। এডভার্টাইজিং স্ট্যান্ডার্স অথরিটি বলেছে, সরকারের গৃহীত প্রকল্পের তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর তারা অসংখ্য টেলিফোন কল পাচ্ছে। কমিউনিটিজ সেক্রেটারি এরিক পিকল্‌স বলেছেন, এ সপ্তাহব্যাপী লন্ডনের ছ’টি বারায় পরিচালিত এই প্রকল্পটি কার্যকর হলে তা সারা দেশে পরিচালনা করা হবে।
এডভার্টাইজিং স্ট্যান্ডার্স অথরিটি বলেছে, এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে পাওয়া অভিযোগগুলোতে বলা হয়েছে, ওই বিজ্ঞাপনের ‘গো হোম’ শব্দটি ‘আক্রমণাত্মক’ ও ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’। এসব শব্দ ব্যবহার ইমিগ্র্যান্টদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী গ্রুপগুলোর অতীতের স্লোগানের কথা মনে করিয়ে দেয়। তারা বলেন, এই প্রকল্প বৃটেনে বর্ণবাদী উত্তেজনা ছড়িয়ে দিতে পারে। পাশাপাশি বিলবোর্ডে লেখা ১০৬ জন অবৈধ ইমিগ্র্যান্ট আটক হওয়ার তথ্যের সত্যতাকেও চ্যালেঞ্জ করেছেন অনেক অভিযোগকারী।
লন্ডনের ছয়টি কাউন্সিল হেনসলো, বার্কিং অ্যান্ড ডেগেনহাম, ইলিং, বার্নেট, ব্রেন্ট এবং রেডব্রিজ বারায় ভ্যানে বিলবোর্ড বসিয়ে গত ২২শে জুলাই থেকে শুরু করে এক সপ্তাহব্যাপী চলেছে অবৈধ ইমিগ্র্যান্ট-বিরোধী প্রচার চালিয়েছে হোম অফিস। বিলবোর্ডের বিজ্ঞাপনে লেখা ছিল: ‘গো হোম অর ফেইস এরেস্ট’। তাতে দেশে ফিরে যেতে সরকারের পক্ষ থেকে থেকে সাহায্যের জন্য একটি নাম্বারে টেক্সট মেসেজ পাঠানোর আহ্বান জানানো হয়। প্রচারাভিযানে স্থানীয়ভাবে লিফলেট, পোস্টার ও স্থানীয় সংবাদপত্রগুলোকেও ব্যবহার করা হয়। এদিকে, হোম অফিস জানিয়েছে, তাদের পাইলট প্রকল্পটি ফলপ্রসূ হয়েছে; তবে কত জন অবৈধ ইমিগ্র্যান্টকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে সে সম্পর্কে কোন তথ্য দেননি তারা। সরকারের মন্ত্রীরা এই উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে দেখলেও অনেকেই এই উদ্যোগের কড়া সমালোচনা করে বলেছেন, এই ধরনের ক্যাম্পেইন চালিয়ে সরকার সরাসরি ভীতি প্রদর্শন করছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button