লন্ডনে নান্দনিকতার গল্প বললেন এক স্বাপ্নিক তরুন
জুয়েল রাজ: সাধারনত: দেশ থেকে নেতানেত্রীরা বৃটেনে এলে নিজ দলের সমর্থক বা এলাকাবাসীরা নেতানেত্রীর সম্মানে আয়োজন করেন সংবর্ধনার । সেখানে এই অনুষ্টান ছিলো ব্যতিক্রম। ব্যারিষ্টার ইমন নিজ উদ্দ্যেগে প্রবাসীদের সম্মানে আয়োজন করেন এই মত বিনিময় সভার। যা প্রবাসে এক নতুন নজির সৃষ্টি করলো। হল ভর্তি মানুষ! তন্ময় হয়ে শুনলেন নান্দনিক সুনামগঞ্জের কথা। একটি স্বপ্ন আস্তে আস্তে কিভাবে রুপান্তর হচ্ছে বাস্তবে সেটাই বলছিলেন সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রশাসক ব্যারিষ্টার এনামুল কবীর ইমন। তিনিই নান্দনিক সুনামগঞ্জের স্বপ্নদ্রষ্টা।
ইষ্ট লন্ডনে মঙ্গলবার জেগে উঠো নান্দনিক সুনামগঞ্জ শীর্ষক এক ব্যাতিক্রমধর্মী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন ব্যারিষ্টার এনামুল কবীর ইমন। পুরো ব্রিটেন থেকে ৪ শতাধিক সুনামগঞ্জবাসীর উপস্থিতিতে ব্যারিষ্টার ইমন বলতে থাকেন কিভাবে সুনামগঞ্জের জল জোছনা, সম্পদ, পর্যটন, বাউল গান, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে একটি সূতায় বেধেছেন। নিয়ে এসেছেন একটি ব্র্যান্ডে, নান্দনিক সুনামগঞ্জ।
নান্দনিক সুনামগঞ্জের আওতায় ইতিমধ্যে ১৩টি দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার নির্মান করা হয়েছে। করা হয়েছে রাধারমন স্মৃতি ফলক, হাতে নয়ো হয়েছে রাধারমন একাডেমীর কাজ। একইভাবে শাহ আব্দুল করিমের সমাধি ও ভাস্কর্য তৈরির কাজও নেয়া হয়েছে, দূর্বিন শাহসহ অন্যান্য মরমীদেও স্মৃতিকে জাগিয়ে রাখতে নেয়া হয়েছে একই ধরনের উদ্যোগ। এছাড়া সুনামগঞ্জের কিংবদন্তী রাজনীতিবিদরাও বেঁচে থাকবেন ভাস্কর্যে। তৈরি করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ম্যূরাল। অ-তে অপূর্ব বাংলাদেশ নামের একটি স্লোগান নিয়েও কাজ করছে নান্দনিক সুনামগঞ্জ। এছাড়াও সুনামগঞ্জের যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়নও করা হয়েছে এই প্রজেক্টেও আওতায়। অনুষ্ঠানে টেলিভিশন উপস্থাপিকা উর্মি মাযহারের উপস্থাপনায় শুরুতে বক্তব্য রাখেন বো-বেথনালগ্রীন এম পি রুশনারা আলী।
ব্যারিষ্টার ইমনের বক্তৃতার পর প্রদর্শিত হয় নান্দনিক সুনামগঞ্জের উপর নির্মিত একটি তথ্যচিত্র। গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে অনুষ্ঠানে বক্তৃতার ফুলঝুরি ছিলোনা। ছিলো প্রশ্ন-উত্তর পর্ব। আমন্ত্রিত সুনামগঞ্জবাসী নিজ আসনে বসে পরামর্শ ও দাবী দাওয়ার বিষয় তুলেন। ব্যারিষ্টার ইমন সেইসব প্রশ্নের উত্তর দেন। পরামর্শ নেন কিভাবে নান্দনিক সুনামগঞ্জ এগিয়ে যাবে।
ব্যারিষ্টার ইমন ব্যতিক্রমী এ অনুষ্টান প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বলেন, আমি সম্মান চাইনা কাজ চাই। আমি নেতা হতে চাই না, আমি সেবক হতে চাই। সকলের আশা আকাঙ্ক্ষা হয়তো পূরণ করতে পারবো না। সামর্থ অনুযায়ী চেষ্টা করতেতো পারি। তিনি বলেন, প্রবাসীরা শুধু বক্তিতা শুনেন। তাদের কথা কেউ শুনেনা। আমাদেরকে অতিথি হিসাবে তারা সম্মানদেন। আমরা নেতারা তাদের সে সম্মানের কতটুকু সম্মান করি? ব্যারিষ্টার ইমন বলেন, আমার প্রানপ্রিয় প্রবাসীদের আমি সম্মানিত করতে চেয়েছি। তাদের ক্ষোভ, চাওয়া পাওয়া, অধিকার বঞ্চনার কথা শুনতে চেয়েছি। মতবিনিময় সভা মূলতঃ সেই লক্ষ্যেই আয়োজন। আমি আমার প্রাপ্ত ক্ষমতা বলে প্রবাসীদের দিক নির্দেশনায় আমাদের সকলের সুনামগঞ্জকে সাজাতে চাই। তিনি বলেন, আমার জেলার প্রবাসীরা জেলার অন্য নাগরীকের মতো আমার কাছে সমান মূল্যের। কোন কোন ক্ষেত্রে প্রবাসীরা আমার আরও বেশী আপনজন। কেননা বিদেশের মাটিতে থেকেও দেশের মানুষের চেয়েও দেশের মঙ্গল, অমঙ্গলের কথা তারা বেশী ভাবেন। প্রবাসীদের অবদানের কথা তাই আমাদের বিস্মৃত হলে চলবে না।
বিশিষ্ট রেষ্টুরেন্টার ও পৃষ্টপোষক মৃদুল কান্তি দাশ বলেন, যে তরুন এমন স্বপ্ন নিয়ে রাজনীতির মাঠে নেমেছে সেই তরুনের পেছনে লক্ষ লক্ষ তরুন আলোর মশাল নিয়ে এগিয়ে যাবে সেটাই আশাবাদ । জয় হোক নান্দনিক সুনামগঞ্জের।
অনুষ্ঠানের সব শেষ ছিলো সংগীতানুষ্ঠান । লন্ডনের জনপ্রিয় শিল্পী গৌরী চৌধুরী ও সাজ্জাদেও পরিশেনায় সুনামগঞ্জের বাউল গানের আসরে গলা মিলিয়ে মধ্যরাতে বাড়ির পথ ধরেন সবাই।