প্রতিশোধমূলক হামলার আশঙ্কায় প্যারিসের মুসলমানরা
প্যারিসের ব্যঙ্গ কার্টুন পত্রিকা শার্লি হেবদোর কার্যালয়ে সন্ত্রাসী হামলায় ১২ জন নিহত হওয়ার দুই দিন পরে ফ্রান্সের দক্ষিনাঞ্চলের মুসলমানরা দেখতে পান তাদের মসজিদের দেয়ালে বিভিন্ন ধরনের বর্ণবাদী স্লোগান লিখে রাখা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তারা বড় ধরনের প্রতিশোধমূলক হামলার আশঙ্কাও করছেন।
রিজিওনাল মুসলিম এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আব্দুর রহিম ওয়াজউ বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, আমাদের আশঙ্কা এ ধরনের ঘটনা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। তিনি আরো বলেন, আমরা প্রত্যেককে ভালোবাসি, শার্লি হেবদো কার্যালয়ে যা ঘটেছে, তা সম্পূর্ণরূপে অনৈতিক এবং ঘৃণ্য কাজ, আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। কিন্তু এটাকে পুঁজি করে যে ধরনের আক্রমণ ও অপমানের ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে তা কেবল আমাদের মধ্যে সংশয় ও অনৈক্যের বীজ বপন করবে।
বাইওন্নি মসজিদের দরজায় সবুজ রঙের কালি দিয়ে বিভিন্ন বর্নবাদি স্লোগান লিখে রেখেছে এবং বাইরে একটি নোটিশ বোর্ড ঝুলিয়ে দিয়ে সেখনে পরিত্যক্ত আবর্জনার কৌটা ছড়িয়ে রাখা হয়েছে। ওয়াজউ আরো বলেন, একটি লেখায় বলা হয়েছে, “শার্লি স্বাধীন” অপর আরেক লেখায় বলা হয়েছে, “আরবরা ঘাতক এবং নোংরা”।
গত বুধবার একে-৪৭ রাইফেল নিয়ে মুখোশপরা সশস্ত্র দুই সন্ত্রাসী শার্লি হেবদো কার্যালয়ে ঢুকে হামলা চালায়। ফরাসী সরকারী সূত্র জানায়, নিহতদের মধ্যে দুজন পুলিশ এবং ১০ জন সাংবাদিক। শার্লি হেবদো কার্যালয়ে হামলার ঘটনাকে দেখা হচ্ছে ইসলামের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে। বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন ও মুসলিম বিশ্বের নেতৃবৃন্দ ঐ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং বলেন, ঐ হামলাকারীরা কখনই ইসলামের বন্ধু হতে পারে না।
গত শুক্রবার জুমার খুতবায ফ্রান্সের বিভিন্ন মসজিদের ইমামরা শার্লি হেবদো কার্যালয় হামলার নিন্দা জানান এবং ইসলাম যে একটি শান্তিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থার নাম সে কথাটি দৃঢ়তার সাথে তুলে ধরেন। এছাড়া সুইডেনের গোথেনবার্গে প্রধান মসজিদে শুক্রবার রাতে বোমা হামলা চালানোর হুমকি দেয়ার পর সেখান থেকে সব মুসল্লিকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়। অপরদিকে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে রোববার প্যারিসে একটি র্যালি হওয়ার কথা যেখানে যোগ দিচ্ছেন বিশ্ব নেতারা। তিন দিনের সন্ত্রাসী হামলায় ২৭ জন নিহত হওয়ার প্রতিবাদে এ র্যালির আয়োজন করা হয়েছে দেশটির রাজধানী প্যারিসে। এতে ৪০টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান একাত্মতা প্রকাশ করবেন বলে জানা গেছে।
র্যালিটি গত শনিবারের র্যালিকেও ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শনিবারের র্যালিতে দেশটির ৭ লাখ মানুষ অংশ নেয়। র্যালি উপলক্ষে রাজধানী প্যারিসে ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে ২ হাজার পুলিশ ও ১ হাজার ৩৫০ সেনাসদস্য। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বার্নাড কেজিনুয়েবে বলেছেন, “সামনের সপ্তাহগুলোতেও ফ্রান্স সতর্ক থাকবে।” রোববার সকালে ইউরোপের দেশগুলোর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা তার। রোববারের র্যালিতে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল, ফিলিস্তিন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।