মিসরে জরুরি অবস্থা জারি
মিসরে বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর হামলায় অন্তত সাড়ে চার শ’ লোক নিহত হয়েছে। মুসলিম ব্রাদারহুড নিহতের সংখ্যা দুই হাজারের বেশি বলে দাবি করেছে। তারা দেশজুড়ে নতুন বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। সামরিক বাহিনী কায়রোর নাহদা স্কয়ার বিক্ষোভকারী মুক্ত করার ঘোষণা দিলেও নাসের সিটিতে বরখাস্তকৃত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির সমর্থকেরা তাদের অবস্থান ধরে রেখেছে। নিরাপত্তা বাহিনী যেকোনো সময় আরো শক্তি নিয়ে সেখানে হামলা চালাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশটিতে এক মাসের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। খবর আল জাজিরা, বিবিসি, সিএনএন ও অন্যান্য সূত্রের।
মিসরের প্রেসিডেন্ট দেশজুড়ে এক মাসের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। এছাড়া নিরাপত্তা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীকে সহায়তা করার নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বরখাস্তকৃত প্রেসিডেন্ট মুরসিকে পুনর্বহালের জন্য ৩ জুলাই থেকে রাজধানী কায়রোর দুটি স্থানসহ মিসরজুড়ে বিক্ষোভ করছিল। গতকাল বুধবার কায়রোর নাহদা স্কয়ারে হামলা চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। এই হামলায় কতজন নিহত হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। আল জাজিরা নিহতের সংখ্যা তিন শতাধিক বলে উল্লেখ করেছে। তবে আল জাজিরার সংবাদদাতা রাবা আল আদাবিয়ার অস্থায়ী হাসপাতালে ৯৪টি লাশ দেখেছেন বলে জানিয়েছেন। আর মুসলিম ব্রাদারহুডের কোনো কোনো সদস্য বলছেন, নিহতের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার ২০০। এছাড়া আহত হয়েছে ১০ হাজার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পাঁচজন নিরাপত্তা সদস্যসহ নিহত হয়েছে ১৩ জন। নিহতদের মধ্যে কারাবদ্ধ মুসলিম ব্রাদারহুড ভাইস প্রেসিডেন্ট খাইরাত আল সাতেরের মেয়ে ও জামাই, ফ্রিডম এন্ড জাষ্টিজ দলের মহাসচিব ড, মুহাম্মাদ বেলতাগীর সতের বছরের মেয়ে আসমা রয়েছেন। রাজধানীর বাইরেও বিভিন্ন হামলায় বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছে।
জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে প্রথমে হেলিকপ্টার ও বিমানযোগে কাঁদানে গ্যাস ও বুলেট নিক্ষেপ করা হয়। তারপর ট্যাংক, সজোয়া যান, স্বয়ক্রিয় অস্ত্র, স্নাইপার দিয়ে একযোগে হামলা চালানো হয়। আর বুলডোজার দিয়ে তাঁবুগুলো মাটির সাথে মিশিয়ে ফেলা হতে থাকে। অনেক তাঁবুতে আগুন জ্বালিয়ে দেয় সেনারা। হামলায় ২৫টি হেলিকপ্টার অংশ নেয়। মুরসির সমর্থকেরা ইট বালু আর টায়ার জ্বালিয়ে প্রাথমিকভাবে প্রতিহত করলেও ট্যাংকের সামনে তারা টিকে থাকতে পারেনি। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায়, কাঁদানে গ্যাসের সাদা মেঘের মধ্যে শটগান আর স্বয়ংক্রিয় রাইফেলের গুলি ছোড়া হয়। অনেকের ঘাড়ে ও বুকে গুলি লেগেছে। নিরাপত্তা বাহিনীর হামলার মুখেও অনেক বিক্ষোভকারী স্থান ত্যাগ করতে অস্বীকার করে। সিএনএনের রেজা সায়াহ কায়রো থেকে জানান, ‘তারা মৃত্যুবরণ করতে প্রস্তুত।’ তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে আর কখনো এত রক্তপাত দেখিনি।’ তিনি বলেন, অস্থায়ী হাসপাতাল পরিদর্শনের সময় সিএনএনের এক ক্রু ‘আক্ষরিকভাবেই হতাহতদের রক্তের ওপর দিয়ে হেঁটেছেন।’ কায়রো থেকে লাইফ ফুটেজে দেখা যায়, বুধবার সকালে কায়রো বিশ্ববিদ্যায়ের নাহদা স্কয়ার ধোয়ায় ছেয়ে গেছে। একটু বেলা হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, নিরাপত্তা বাহিনী নাহদা স্কয়ারের ‘সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ’ গ্রহণ করেছে এবং পুলিশ ওই এলাকার ‘বেশির ভাগ তাঁবু সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে।’ নিরাপত্তা বাহিনী ওই এলাকায় প্রবেশের সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। সাংবাদিকদেরও সেখানে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে কেবিনেট মিডিয়া উপদেষ্টা ‘আত্মসংযম এবং উচ্চ মাত্রার পেশাদারিত্ব প্রদর্শনের জন্য’ নিরাপত্তা বাহিনীকে ধন্যবাদ দেন। তিনি বলেন, ‘সহিংসতা বিস্তারের জন্য’ মুসলিম ব্রাদারহুড দায়ী। কায়রো থেকে আল জাজিরার রাবিয়া রেগেহ বলেন, ‘ছবিতে যে ধরনের দৃশ্য দেখা গেছে, যুদ্ধ ছিল তার চেয়েও অনেক বড়। হতাহতও হয়েছে অনেক বেশি। এটা দেশটির ভবিষ্যতের জন্য যুদ্ধ। আর এই যুদ্ধই নির্ধারণ করবে মিসরীয় বিপ্লব কোন দিকে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘কেউই আশা করছে না যে এটা সহজ কোনো অপরাশেন হতে যাচ্ছে। সবার কাছে পরিষ্কার, উভয় পক্ষ ইচ্ছাশক্তির লড়াই চালাচ্ছে। আর বিপজ্জনক খেলা দ্বারপ্রান্তে।’ রাস্তায় নামার আহ্বান ব্রাদারহুডের নিরাপত্তা অভিযানের প্রতিক্রিয়ায় মোহাম্মদ মুরসির ব্রাদারহুড ‘গণহত্যা বন্ধ’ করতে রাস্তায় নেমে আসার জন্য মিসরীয়দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে থানাসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা মুরসিপন্থীদের হামলার শিকার হচ্ছে বলে আল জাজিরা জানিয়েছে। তারা বেশ কয়েকটি সামরিক যান জ্বালিয়ে দিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, পুলিশকে সর্বোচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছে। নাহদা স্কয়ারে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের পর মিসরজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। আলেক্সান্দ্রিয়া, সুয়েজ, আসিয়ুতসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ চলছে।