প্যারিসের হামলা নিয়ে ভণ্ডামি করছে পাশ্চাত্য : এরদোগান
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান বলেছেন, পাশ্চাত্য প্যারিসে ব্যঙ্গাত্মক পত্রিকা শার্লি এবদু অফিসে হামলা ও ইহুদি সুপার মার্কেটে পণবন্দী আটকের ঘটনা নিয়ে ধোঁকাবাজি করছে। তারা এর নিন্দা জানালেও ইউরোপজুড়ে মুসলিমবিরোধী হামলা ও অন্যান্য কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে নীরব রয়েছে।
আংকারায় সফররত ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সাথে বক্তৃতাকালে তিনি প্যারিস হামলার পর সেখানে রোববারের সংহতি সমাবেশে বিশ্বের অন্যান্য নেতার সাথে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর অংশগ্রহণের নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘যে ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে গাজায় আড়াই হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে সে কিভাবে প্যারিসের যায়? তার পছন্দের নেতারা কি অনুরূপ হত্যাকাণ্ড চালাতে তাকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন? সে কিভাবে সেখানে যাওয়ার সাহস করল?’
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, ‘তার উচিত ছিল সে যেসব শিশু ও নারীকে হত্যা করেছে তার বিবরণ দেয়া।’ এরদোগান হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজায় ইসরাইলি হামলা ও বর্বর গণহত্যার কঠোর সমালোচনা করেন। ইসরাইলের সাথে তুরস্কের বেশ ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সম্পর্ক থাকলেও দেশটি ফিলিস্তিনের প্রতি ইসরাইলের আচরণের কঠোর সমালোচনা করে।
নেতানিয়াহুর শাসনামলে ইসরাইল গাজায় দুই দফা হামলা, গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। প্রথমে ২০১২ সালের নভেম্বরে এবং সর্বশেষ ২০১৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে। জাতিসঙ্ঘ হিসেবে ২০১২ সালে ১৭৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়। আর গত বছর দুই হাজার ১০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয় বলে ফিলিস্তিনি মেডিক্যাল কর্মকর্তারা জানান। নিহতদের বেশির ভাগই বেসামরিক মানুষ। উভয় লড়াইয়ে ইসরাইলে নিহত হয় ৭৯ জন, যাদের বেশির ভাগই সেনাসদস্য।
এরদোগান রোববারের সমাবেশে যোগদান করেননি, তবে তার প্রধানমন্ত্রী আহমদ দাউদ ওগলু তাতে অংশ নেন।
এরদোগান বলেন, ‘পাশ্চাত্যের ভণ্ডামির বিষয় স্পষ্ট। মুসলমান হিসেবে আমরা কখনোই সন্ত্রাসী গণহত্যায় অংশ নিইনি। এর পেছনে রয়েছে বর্ণবাদ, ঘৃণ্যবিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য বিবৃতি ও ইসলামভীতি ছড়ানো। যেসব দেশে আমাদের মসজিদে হামলা হচ্ছে সেখানকার প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ, দয়া করে তা রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন।’
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘ইসলামি বিশ্বকে নিয়ে নানা ধরনের খেলা শুরু হয়েছে, এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক হওয়া দরকার। ফ্রান্স, জার্মানি ও সুইডেনের বিভিন্ন মসজিদে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। প্যারিসে হামলার আগে ও পরে এসব হামলা চালানো হয়। একে তুরস্ক ও অন্যান্য দেশ ইউরোপজুড়ে ক্রমবর্ধমান মুসলিমবিরোধী মনোভাবের প্রকাশ বলে মনে করছে।
প্যারিসের হামলার জন্য ফরাসি নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যর্থতাকে দায়ী মনে করেন এরদোগান। ওই হামলায় ১৭ জন নিহত হয়। সন্দেহভাজন হামলাকারীরা সম্প্রতি দেশটিতে দণ্ড ভোগ করেছিল। তিনি বলেন, ‘ফরাসি নাগরিকরা হামলা চালাল আর মুসলমানদেরকে তার জন্য চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে। এটি বেশ অর্থবোধক… তাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কী করেছিল? জেল থেকে মুক্তির পর তাদেরকে তারা কেন নজরে রাখেনি?’
ইসলামভীতির কারণে চার বছর ধরে যুদ্ধকবলিত সিরিয়া থেকে আরো উদ্বাস্তুদের গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করছে পাশ্চাত্য। অথচ তুরস্ক ১৬ লাখেরও বেশি সিরীয় উদ্বাস্তুকে তার দেশে আশ্রয় প্রদান করেছে।
অন্য দিকে ইউরোপের সরকারগুলো প্রতিবেশী সিরিয়ায় যুদ্ধ করতে জঙ্গিদেরকে নিজ ভূখণ্ড দিয়ে দেশটিতে যেতে দেয়ার জন্য তুরস্কের সমালোচনা করেছে। প্যারিসে হামলায় অংশগ্রহণকারী বলে সন্দেহভাজন এক নারী সদস্য তুরস্ক হয়ে সিরিয়ায় গেছে বলে তুরস্কের কর্মকর্তারা জানান।