আন্তর্জাতিক আদালতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা করবেন যুক্তরাজ্যের আইনজীবীরা

UK BNPআগামী ২৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালনের আগেই শেখ হাসিনার সরকারের পতন হবে বলে মনে করেন যুক্তরাজ্য জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতারা। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে ইস্ট লন্ডনে সোনারগাঁও রেস্টুরেন্টে এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাজ্য প্রবাসী এই আইনজীবীরা বাংলাদেশে চলমান আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এই আন্দোলনে রাজপথে যেসব হত্যাকান্ড ঘটছে, এর দায়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করা হবে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বিশ্বের প্রভাবশালী মহল আওয়ামী অবৈধ সরকারকে ‘না’ বলে দিয়েছে দাবি করে তারা বলেন, ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমান গণতন্ত্র হত্যা করেছিল। তার মেয়ে শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা করে। এ দুই দিনকে কালো দিন হিসেবে পালন করে বাংলার মানুষ। গত ৫ জানুয়ারি কালো দিবসে শুরু হওয়া গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই আগামী ২৫ জানুয়ারি কালো দিবসের আগেই সফল হবে বলে আশা প্রকাশ করেন আইনজীবী নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন যুক্তরাজ্য জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আহ্বায়ক ব্যারিস্টার তারিক বিন আজিজ। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সদস্য সচিব সলিসিটর বিপ্লব পোদ্দার, সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার তমিজ উদ্দিন, ব্যারিস্টার একেএম কামরুজ্জামান প্রমুখ। আরো উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুস, সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদ, সিনিয়র সহসভাপতি আবদুল হামিদ চৌধুরী, সহসভাপতি আখতার হোসেন, আবুল কালাম আজাদ, যুগ্ম সম্পাদক নাসিম আহমেদ চৌধুরী, শহিদুল ইসলাম মামুন, সহসাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন, আইনজীবী ফোরামের নেতা ব্যারিস্টার হামিদুল হক আফিন্দি লিটন, ব্যারিস্টার একরামুল হক মজুমদার, ব্যারিস্টার হাফিজুর রহমান, অ্যাডভোকেট আবুল হাসনাত, ব্যারিস্টার শাহজাহান, ব্যারিস্টার মুজিবুর রহমান, ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন, ব্যারিস্টার এম আশরাফুল আলম চৌধুরী, ব্যারিস্টার একেএম হাসনাত, ব্যারিস্টার আলিমুল হক লিটন, ব্যারিস্টার ওবায়দুর রহমান টিপু, ব্যারিস্টার বেলায়েত হোসেন, অ্যাডভোকেট আলী আকবর, ব্যারিস্টার ইকবাল, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, অ্যাডভোকেট নাসের খান অপু, অ্যাডভোকেট নয়ন মিঞা প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে বেগম খালেদা জিয়াকে ‘গণতন্ত্রের মা’ হিসেবে অভিহিত করে ব্যারিস্টার তারিক বিন আজিজ বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার কেড়ে নিয়েই নব্য বাকশালী দখলদার সরকার তাদের বিদায় নিশ্চিত করেছে।
তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার/প্রকাশে মিডিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার নিন্দা জানিয়ে তারা বলেন, বিশ্ব ইতিহাসে নজিরবিহীন আদালতের এই রুলিং বাংলাদেশের সংবিধানেরও স্পিরিট বিরোধী। এক্ষেত্রে আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। আদালতে রিট দায়েরের পর শুনানির প্রথম দিনেই যার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তাকে কোনো ধরণের আত্মপক্ষ সমর্থন বা যুক্তি তুলে ধরার সুযোগ দেয়ার আগেই তার বক্তব্য প্রচার/প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলো। এটি যথাযথ আইনী প্রকিয়ায় পরিচালিত হলে প্রথমেই কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু আদালত সম্পূর্ণভাবে সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে প্রথমে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার/প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শাতে বলেছেন। এ ধরণের আদেশ আইনের দৃষ্টিতেই উদ্দেশ্যমূলক হিসেবে বিবেচিত।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, সংবিধানের ৩৯ নং ধারায় প্রতিটি নাগরিকের ফ্রিডম অফ স্পীচ এন্ড এক্সপ্রেশন (কথা বলা এবং মত প্রকাশ) এবং ফ্রিডম অফ প্রেস (প্রচার) এর নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। আর এই আদেশের মাধ্যমে একজন নাগরিকের ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন লঙ্ঘণ করা হয়েছে। ফ্রিডম অব প্রেস-এর ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত। এই আদেশ জাতিসংঘের আর্টিকেল ১৯-এর ইউনিভার্সাল ডিক্লারেশন অব হিউম্যান রাইটস্-এ দেয়া ব্যক্তি অধিকারের বিরোধী। ইউরোপিয়ান কনভেনশনের হিউম্যান রাইটস্-এর আর্টিকেল-১০ এ স্বীকৃত মৌলিক অধিকারও আদালতের আদেশে ক্ষুন্ন হয়েছে।
আইনজীবী নেতারা আরো বলেন, আওয়ামী বাকশালী সরকার জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দেশনত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে যে গণলড়াই গড়ে উঠেছে – তা দমনে রাজপথে হত্যা, গুম এবং মামলা-হামলা অব্যাহত রেখেছে। গত ১২ দিনে ১৪ জন নাগরিককে হত্যা করে প্রমাণ করেছে রক্তখেকো শেখ হাসিনা খুব সহজে বিদায় নেবে না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহানসহ রাজপথের আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী জননেতাদের গণহারে গ্রেফতার করে চলেছে। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমানকে প্রকাশ্য রাজপথে পুলিশের সামনে গুলি করে হত্যা চেষ্টা করা হয়। গণদুশমন জাসদের নেতা মঈন উদ্দিন খান বাদলের ‘আন্দোলনকারীদের বুকে গুলি’ করার নির্দেশের কয়েকঘন্টার মধ্যে সাবেক এই পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে গুলি করা হলো। এসব প্রমাণ করে অবৈধ শেখ হাসিনার গদি নড়বড়ে হয়ে গেছে। জনতার লড়াইয়ের মুখেই তাকে বিদায় নিতে হবে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button