শার্লি এবদু দফতরে হামলাকে যেভাবে দেখছেন ফ্রান্সের মুসলমানেরা
দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টের সংবাদদাতা কিম সেনগুপ্ত ফ্রান্সের মুসলিম তরুণদের সাথে শার্লি এবদুর হামলা ও পরবর্তী প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ওয়ালিদ নামে একজন তাকে বলেন, ‘ওরা ঐক্যের কথা বলছে অথচ আবারো সেই একই ঘৃণ্য কাজ করল, তাহলে আমরা কিভাবে ওদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হবো। যেকোনো ঘটনায় কেউ আঘাতপ্রাপ্ত হলেই সে জন্য মুসলমানদেরকে দোষারোপ করা সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে।’ তার বন্ধুরা সমস্বরে তার প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, তাদের ধর্ম ও সম্প্রদায়কে অবমাননা করতে ও উসকানি দিতে পত্রিকাটি আবারো ভীতিকর পদক্ষেপ নিয়েছে। মুসলিম ছাত্ররা নিহতদের স্মরণে নীরবতা পালন করতে অস্বীকার করে। তারা বলেছে, শার্লি এবদুর স্টাফরা ‘উপযুক্ত শাস্তি’ পেয়েছেন।
তাদের তীব্র ক্ষোভের কারণ শার্লি এবদুর নতুন সংস্করণ প্রকাশ। ম্যাগাজিনটির দফতরে হামলায় ১২ জন নিহত হওয়ার ঘটনার পর গতকালই তা প্রথম প্রকাশ করা হয়। যার কভার বা প্রচ্ছদে একটি হেডলাইনসহ মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কার্টুন ছাপানো হয়েছে। হেডলাইনে বলা হয়েছে, ‘সবাইকে মাফ করে দেয়া হয়েছে।’ কয়েকটি গণমাধ্যমে ইতোমধ্যে প্রচ্ছদটি প্রকাশ করা হয়েছে।
অবশ্য ক্ষমা কথাটি এ তরুণদের কাছে যথেষ্ট নয়। আহমদ এ ব্যাপারে বলেন, ‘ওরা জানে তারা কী কাজটি করছে এবং তার পরিণাম তাদেরকে অবশ্যই ভোগ করতে হবে।’
পাঁচ তরুণের এ গ্রুপটির বয়স ১৭ থেকে ২১ বছরের মধ্যে। গত রোববার ফ্রান্সে সংহতি সমাবেশে যে লাখ লাখ মানুষ অংশ নেয় তাদের চেহারা তাদের থেকে ভিন্ন নয়। তবে তারা দারিদ্র্যকবলিত লা করনিভ এলাকার রাস্তার পাশে বড় হয়েছে। স্থানটি ফরাসি রাজধানীর থেকে মোটরযোগে যেতে মাত্র ১৫ মিনিট লাগে। এলাকাটির মানুষ দেশটির সেকুলার মতাদর্শ থেকে বহু যোজন দূরে রয়েছেন। নিহতদের কয়েকজনের শেষকৃত্যানুষ্ঠানের পর শিক্ষামন্ত্রী নাজাত বেলাদ বেলকাশেম অনেক মুসলিম এলাকার শিক্ষকদের সাথে বৈঠক করেন। সেখানকার অনেক ছেলেমেয়ে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করতে অস্বীকার করেছে।
সেইন সেইন্ট ডেনিসের এক মাধ্যমিক স্কুলের শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি ছাত্রছাত্রী শিক্ষকদের নীরবতা পালনের আদেশ মানতে অস্বীকার করে। তারা বলে, শার্লি এবদুর সাংবাদিক কর্মচারীরা ‘তাদের উপযুক্ত শাস্তি পেয়েছে।’ নিহতদের স্মরণে নীরবতা পালন করতে বলায় লিলের এক ছাত্র তার শিক্ষককে ‘কলাশনিকভ রাইফেল’ দিয়ে গুলি করার হুমকি দেয়।
এসব উদাহরণ কেবল শিশুদের বাহাদুরি বলা যাবে না বরং ফরাসি মুসলিম সম্প্রদায় বিশেষ করে মুসলিম তরুণদের মধ্যেও ফরাসি রাষ্ট্র ও সমাজ সম্পর্কে গভীর হতাশা, ক্ষোভ ও তিক্ততা বিরাজ করছে। ওয়ালিদ কেবল যারা ‘জে সুইস শার্লি” বা আমি শার্লি ব্যাজ ধারণ করছে তাদেরকেই ঘৃণা করেন না যারা ‘জে সুই আহমদ’ ব্যাজ ধারণ করছে তাদেরকে ঘৃণা করেন। পুলিশ অফিসার আহমদ মেরাবাতের স্মরণে এ ব্যাজ ধারণ করা হয়। শার্লি এবদুর অফিসের বাইরে হামলাকারীদের হাতে তিনি নিহত হন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোয়া ওলাঁদ যে তিনজন পুলিশ কর্মকর্তাকে মরণোত্তর লিজিওন দ্য অনার পুরস্কার দিয়েছেন তার একজন হলেন এ আহমদ মেরাবাত।
মহানবী সা:-এর প্রতি ব্যঙ্গাত্মক চিত্র প্রকাশের ঘটনায় মুসলমানরা মর্মাহত হয়েছেন। যারা মুসলমানদের ওপর নির্যাতন করেছে সেই শক্তির সাথে মেরাকতের হাত মেলানোকে লজ্জানক বলে মনে করেন ওয়ালিদ। ওয়ালিদ হচ্ছেন আলজেরীয় বংশোদ্ভূত তৃতীয় প্রজন্মের ফরাসি নাগরিক। সংলাপে যোগদানকারী অন্য তরুণদের অনেকে জিহাদের জন্য বিদেশে গমনকারী যুবকদের প্রশংসা করেন।
এসব তরুণ কেবল ফরাসি রাষ্ট্র ও সমাজের প্রতি ুব্ধ তা নয়, উপরন্তু তাদের কারোরই স্থায়ী কোনো চাকরি নেই। ১৯ বছর বয়সী করিম বলেন, ‘আমি একজন নির্মাতা হিসেবে কাজ করি। ভালোই আয় করছিলাম। কিন্তু তা আর এখন নেই। যখনই ওরা কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে চায়, তখন প্রথমে তাদেরকে ছাঁটাই করে যারা শ্বেতাঙ্গ নয়।’
৬৪ বছর বয়সী মাহমুদ হানাশি শার্লি এবদু আবারো রাসূল সা:-এর কার্টুন ছাপায় অত্যন্ত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অন্যান্য দেশে এ কার্টুন পুনঃপ্রকাশ করা হবে। ব্রিটেন, আমেরিকায় তা ছাপা হচ্ছে। ওরা কেন এটি করছে? এটি করা যে ইসলামে অপরাধ তা কি ইউরোপ-আমেরিকার লোকেরা জানে না?’ সূত্র : দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট।