প্রতিশোধমূলক হামলার শিকার ইউরোপের মুসলিমরা

franceফ্রান্সের বিভিন্ন মসজিদে বোমা নিক্ষেপ করা এবং শূকরের মাথা ফেলে রাখা হচ্ছে। সড়কগুলোতে তিরস্কারের শিকার হচ্ছেন নেকাব বা হিজাব পরিহিত মুসলিম নারীরা। এ ছাড়া মুসলিমদের বিরুদ্ধে ইন্টারনেটে হুমকি দেয়া হচ্ছে ব্যাপকভাবে।
গত সপ্তাহে ফ্রান্সের সাপ্তাহিক ব্যাঙ্গ ম্যাগাজিন শার্লি এবদু অফিসে হামলার পর ইউরোপজুড়ে মুসলিমরা প্রচণ্ড বিরূপ প্রতিক্রিয়ার শিকার হচ্ছেন। ফ্রান্সে ইসলামভীতি হামলার খোঁজখবর রাখছেন এমন একজন কর্মকর্তা জানান, ওই ঘটনার পর গত এক সপ্তাহে দেশটিতে ৬০টি মুসলিমবিরোধী হামলা এবং হুমকির ঘটনা ঘটেছে।
কট্টর ডানপন্থীরা লাখ লাখ শান্তিপ্রিয় মুসলিমকে গুটিকয়েক হামলাকারীর সাথে মিলিয়ে ফেলায় ইউরোপে একটি ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
ইসলামভীতির বিরুদ্ধে জাতীয় পর্যবেক্ষণ কমিটির প্রধান আবদুল্লাহ জাকির জানান, শার্লি এবদুতে হামলার পর থেকে ফ্রান্সের ২৬টি মসজিদে বোমা মেরে, গুলি করে এবং শূকরের মাথা নিক্ষেপ করে হামলা চালানো হয়। লি মেনস এলাকার একটি মসজিদে চারটি গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় ৩৪টি তিরস্কার ও হুমকির খবর পাওয়া গেছে। রাজধানী প্যারিসে তিন দিনের হামলায় ১৭ জন নিহত হন। এতে গোটা মহাদেশ অস্থির হয়ে পড়ে এবং অভিবাসীবিরোধী মনোভাব চরম আকার ধারণ করে। ওই হামলায় সন্দেহভাজন শরিফ ভ্রাতৃদ্বয় এবং সাঈদ কৌচি ফ্রান্স পুলিশের গুলিতে নিহন হন। অন্য দিকে একটি ইহুদি বিপণিবিতানে অভিযানকালে আমেদি কুলিবেলি নিহত হন। তার হাতে চার পণবন্দী নিহত হয়। সন্ত্রাসীদের সাথে ফ্রান্সের মুসলিমদের সম্পর্কের বিরুদ্ধে দেশটির কর্তৃপক্ষগুলো দেশে সতর্কতা জারি করেছে।
গত সপ্তাহে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরাঁ ফেবিয়াস বলেন, ইসলাম কোনো সন্ত্রাসীর ধর্ম নয়। হামলাকারীরা এই ধর্মের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তারা যা করেছে তা পৈশাচিকতা। তিনি জোর দিয়ে বলেন, হত্যাকারীদের বোঝাতে যেন ইসলাম শব্দ ব্যবহার না করা হয়। যারা শান্তিপূর্ণ ধর্ম পালন করেন তাদের সাথে সন্ত্রাসীদের মেলাতে চান না বলেও উল্লেখ করেন ফেবিয়াস।
গত সোমবার ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সন্ত্রাস মোকাবেলা বিষয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় দেশটিতে বসবাসরত মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিরূপ মনোভাবের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। দেশটির পার্লামেন্টের সমাজতান্ত্রিক সদস্য প্যাট্রিক মেনুকি বলেন, প্যান্সে প্রায় ৬০ লাখ মুসলিম বাস করেন। আর সন্ত্রাসী ইস্যুর সাথে মাত্র এক হাজার লোকের সম্পর্ক রয়েছে। ফলে যে কাউকে আমাদের অপবাদ দেয়া উচিত নয়।
করিবেলির মা এবং মেয়েরা নিহতদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে জানান, এ ধরনের ঘৃণ্য কাজ এবং ইসলাম ধর্মকে একসাথে মিলিয়ে ফেলা যাবে না। ফ্রান্সের মুসলিম এবং বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই হামলা ঘটনার পর অনিবার্যভাবে ফ্রান্সজুড়ে মুসলিমরা সন্দেহের তীরে পরিণত হয়েছে। গত রোববার ওই হামলার নিন্দা জানিয়ে সংহতি সমাবেশ হয়েছে। এতে বিপুল মুসলিমও যোগ দেন। এ সমাবেশকে ফ্রান্সের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সমাবেশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ফ্রান্সসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশে অতি ডানপন্থীদের উত্থান অভিবাসী এবং মুসলিমবিরোধী বার্তাই দিচ্ছে। বহিরাগতরা তাদের স্থানীয় সংস্কৃতির মূলোৎপাটন করছে বলে ইউরোপে ভীতি ছড়িয়ে যাচ্ছে কট্টর ডানপন্থীরা।
ফ্রান্সের মুসলিম ফেইথ কাউন্সিলের প্রধান দলিল বোবেকেউর এক বিবৃতিতে বলেন, মসজিদগুলোতে হামলা হওয়ায় ফ্রান্সের মুসলিমরা শঙ্কার মধ্যে রয়েছে। শার্লি এবদুতে হামলার পর সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করে ফ্রান্সের বিভিন্ন রাস্তায় ১০ হাজার সৈন্য মোতায়েন করা হয়। এর ফলে মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে গভীরভাবে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। ফ্রান্সের বাইরেও মুসলিমবিরোধী হামলা অব্যাহত রয়েছে। নেদারল্যান্ডে গত শুক্রবার কয়েকটি মুসলিম গ্রুপ দেশটির সরকারের সাথে বৈঠক করে জানিয়েছে যে, মুসলিমবিরোধী ঘটনাগুলোর তালিকার পরিকল্পনা করছে সরকার।
নেদারল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর রটোরড্যামের বাইরে ভøারডিংজেন এলাকার একটি মসজিদে আগুন জ্বালিয়ে হামলা চালানো হয়। বেলজিয়ামের পার্লামেন্টের গ্রিন দলের সদস্য ইমেদ আনোরি বলেন, হুমকির কারণে মুসলিমরা একটি অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। কেননা তারাও হামলার শিকার হতে পারেন এমন শঙ্কা রয়েছে।
ব্রিটিশ মুসলিমদের অধিকারবিষয়ক সংস্থা টেলমামার পরিচালক ফায়াজ মুঘল জানিয়েছেন, এ সপ্তাহে অনলাইনে মুসলিমবিরোধী ৬০টি হুমকির প্রমাণ পেয়েছে তারা। ইউরোপিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো মোহাম্মদ আলি আদ্রায়ি বলেন, ফ্রানাসসহ অন্যান্য স্থানে ইসলামবিরোধী মনোভাবটি পরিবর্তন হয়ে এখন মসজিদে হামলায় রূপ নিয়েছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button