হাদিসে প্রতিবেশীর হক
১. প্রতিবেশীর ক্ষতি করা নিষিদ্ধ : রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আল্লাহর শপথ সে ঈমানদার নয়। আল্লাহর কসম সে ঈমানদার নয়। আল্লাহর কসম সে ঈমানদার নয়।’ তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ, কে ঈমানদার নয়?’ তিনি বললেন, ‘ওই ব্যক্তি যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিজেকে নিরাপদ মনে করে না’ (সহিহ বোখারি)।
২. প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ করার সুপারিশ : রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘জিব্রাইল আ: আমাকে বারবার প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ করার নসিহত করেছেন, যাতে আমার মনে হয়েছে তিনি হয়তো তাকে আমার একজন উত্তরাধিকারী বানাতে বলবেন’ (বোখারি : ৬০১৪)।
৩. প্রতিবেশীদের দেখাশোনা করা : আবু জার রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন : রাসূলুল্লাহ সা: আমাকে এভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘হে আবু জার! যখন তুমি তরকারি রান্নার প্রস্তুতি নেবে তখন তাতে বেশি করে পানি দিয়ো, যাতে তুমি তা থেকে কিছুটা তোমার প্রতিবেশীদেরকে দিতে পারো’ (সহিহ মুসলিম)।
৪. প্রতিবেশীদের সাথে সহযোগিতা : আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘কারো দেয়ালে তার প্রতিবেশীকে কাঠের পেরেক লাগাতে বাধা দেয়া উচিত হবে না।’ আবু হুরায়রা (তার সঙ্গীদের) বলেন, ‘কেন আপনারা এটি করতে অনীহা পোষণ করেন?’ আল্লাহর শপথ আমি অবশ্যই আপনাদের সামনে এ হাদিস বর্ণনা করব। (সহিহ বোখারি)।
৫. প্রতিবেশীকে ুধার্ত রেখে নিজে পেটপুরে খেয়ো না : রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘সে ব্যক্তি ঈমানদার নয়, যে তার বাড়ির পাশের প্রতিবেশীকে ুধার্ত অবস্থায় রেখে নিজে পেটপুরে খায়’ (বোখারি)।
৬. প্রতিবেশীর দেয়া জিনিস কখনো অবজ্ঞাভরে ফিরিয়ে দেবে না : আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘হে মুসলিম নারীগণ! প্রতিবেশীর দেয়া উপহারকে, যদি তা মেষের একটি পায়াও হয়, অবজ্ঞা করা কারো উচিত হবে না’ (বোখারি ৬০১৭)।
৭. প্রতিবেশীর ক্ষতি করলে দোজখের আগুনে জ্বলতে হতে পারে : আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, এক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ সা: এমন একজন মহিলা ছিল যে নামায আদায় করত, দানদিহান করত এবং বেশি বেশি রোজা রাখত, কিন্তু তার (অবমাননাকর) কথায় প্রতিবেশীরা কষ্ট পেতো।
রাসূল বললেন, ‘সে দোজখে যাবে।’ লোকটি বলল, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ সা:, আরেকজন মহিলা ছিল সে কম রোজা রাখত ও নামাজ পড়ত বলে সবাই জানত। তবে সে দান-সদকা তার তৈরি করা পনির প্রদান করত এবং প্রতিবেশীদের কোনো কষ্ট দিতো না। আহমদ, খণ্ড, ৪ পৃষ্ঠা, ১৬৬, ইবনে হিব্বন, হাদিস নম্বর ২০৫৪)।
৮. প্রতিবেশীদের সাথে ব্যবহারের সময় সংযম প্রদর্শন : মুতারিফ বলেছেন : ‘আমি শুনেছি যে আপনি (আবু জার রাদিআল্লাহু আনহু) বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আল্লাহ তিন ব্যক্তিকে ভালোবাসেন এবং তিন ব্যক্তিকে ঘৃণা করেন।’ আবু জার বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা বলার কথা চিন্তা করতে পারিনি।’ মুতারিফ বলেন, ‘তাহলে আল্লাহ ভালোবাসেন এমন তিন ব্যক্তি কারা?’ আবু জার রাসূলুল্লাহ সা:-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘যে আল্লাহর পুরস্কারের আশায় ধৈর্যের সাথে আল্লাহর পথে লড়াই করে, শাহাদৎ বরণ না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যায়। আল্লাহর কিতাবে তুমি এটি দেখতে পাবে।’ এর পর তিনি তেলওয়াত করলেন, ‘তারা সিসাঢালা প্রাচীরের মতো ঐক্যবদ্ধ হয়ে আল্লাহর পথে লড়াই করে’ (সূরা সফ : ৪)। মুতারিফ প্রশ্ন করে, ‘এর পর কে?’
রাসূলুল্লাহ বলেন, ‘এমন ব্যক্তি যার প্রতি একজন খারাপ লোক যে তাকে বিব্রত ও বিরক্ত করত; কিন্তু তাদের কোনো একজনের মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত সে অত্যন্ত ধৈর্য ও সংযমের সাথে তা সহ্য করত’ (সহিহ সনদসহ আহমদ ও আল-তাবরানি হাদিসটি বর্ণনা করেন। দেখুন, মুজআ’ আল-জাওয়াইদ, ৮/১৭১)।