উগ্রপন্থীদের হামলা বৃদ্ধি পাওয়ায় ফ্রান্সের মুসলমানরা আতঙ্কিত

Franceসম্প্রতি মুসলিমবিরোধী হামলা ও গুলীর ঘটনায় ফ্রান্সের মুসলমানদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মসজিদ ও মুসলমানদের ওপর এ ধরনের হামলার ঘটনা ব্যাপকভাবে বাড়তে পারে বলে তাদের আশঙ্কা। লিয়ন গ্র্যান্ড মসজিদের রেক্টর কামাল কাবতানি গত সোমবার রয়টার্সকে বলেন, এ হামলার ঘটনায় মুসলিম সমাজ মর্মাহত হয়েছে। এটা আজ আর কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এ ধরনের ঘটনা চলতে থাকবে বলে তাদের মধ্যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি ফ্রান্সের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে গত শনিবার দু’টি মসজিদে হামলার ঘটনার কথা উল্লেখ করেন। লিয়নে মুসলিম নেতারা যখন বৈঠক করছিলেন তখন কাবতানি এসব মন্তব্য করেন।
বৈঠকে কাবতানি শহরতলীর মিংগুয়েটেস মসজিদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করার জন্য স্থানীয় মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানান। পুলিশ জানিয়েছে, মুসলমানদের ঈদুল ফিতরের ছুটির সময় হামলা চালানোর পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে সেনাবাহিনীর এক সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, স্থানীয় একটি মসজিদে হামলার পরিকল্পনা করার সন্দেহে ২৩ বছর বয়সী এক সৈন্য সদস্যকে লিয়নের নিকটবর্তী বিমান বাহিনীর ঘাঁটি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত করার  জন্য গত সোমবার তাকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সন্ত্রাসী কর্মকা- করার জন্য ক্যাটাগরি-৪ গুলী সে তার কাছে রেখেছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছে। বোরডেক্স মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার অংশ হিসেবে সে উক্ত মসজিদের নামাজের স্থানকে অপবিত্র করার পরিকল্পনা করেছিল বলেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। একটি আইনী সূত্র এ তথ্য জানায়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, গ্রেফতারকৃত সৈন্যটি চরম দক্ষিণপন্থীদের মতোই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। সে ইতিমধ্যেই বরডেক্স অঞ্চলের একটি মসজিদে হামলা চালিয়েছিল তবে ক্ষয়ক্ষতি তেমন একটা হয়নি। তবে মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে বিস্তারিত আর কিছু জানায়নি।
ফ্রান্সে চরম দক্ষিণপন্থীদের তৎপরতা সাম্প্রতিক সময়ে অনেক বেড়ে গেছে। নিরাপত্তা বাহিনী চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে।
উপদলীয় সংঘাতে বামপন্থী এক ছাত্র নিহত হওয়ার পর গত জুলাইয়ে সরকার চরম দক্ষিণপন্থী ৬টির মতো গ্রুপের কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করেছে।
সরকারের গঠিত ফ্রান্সে ইসলামবিরোধী তৎপরতা সংক্রান্ত কমিটি (সিসিআইএফ) গত জুলাইয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, ফ্রান্সে মুসলমানদের ওপর মৌখিক ও শারীরিক হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে। কমিটির বার্ষিক রিপোর্টে দেখানো হয়, গত বছর মুসলমানদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে ৪শ’ ৬৯টি। অথচ ২০১১ সালে এ ধরনের হামলা ঘটেছিল ২শ’ ৯৮টি এবং ২০১০ সালে ঘটেছিল ১শ’ ৮৮টি। ২০১১ সালের তুলনায় ২০১২ সালে মসজিদে হামলার ঘটনা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৪০টিতে উন্নীত হয়েছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।
ডানপন্থীদের মতে, অতি চরম দক্ষিণপন্থী গ্রুপগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং এককভাবে কিছু হিং¯্র ব্যক্তির আবির্ভাবের ফলে মুসলিম বিরোধী হামলার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
সম্প্রতি নিষিদ্ধ ঘোষিত রেভ্যুলিউশনারী ইয়ুথস নামের একটি চরম দক্ষিণপন্থী গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা আলেকজান্ডার গ্যাব্রিয়াক বলেন, জাতীয়তাবাদী আন্দোলনসমূহ নিষিদ্ধ করায় মানুষ একন বিচ্ছিন্ন ও বেপরোয়া কর্মকা- শুরু করেছে। আমাদের গ্রুপগুলো মানুষের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভকে আয়ত্তাধীনে রেখে একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি সক্ষম হয়েছিল। এখন যেসব বিচ্ছিন্ন কর্মকা- শুরু হয়েছে তা আরো বাড়তে থাকবে এবং বার বার ঘটতে থাকবে।
ইউরোপে সবচেয়ে বেশি মুসলমানের বসবাস ফ্রান্সে। এখানে ৬০ লাখের মত মুসলিম বসবাস করে। অনেকদিন ধরেই অভিযোগ করা হচ্ছে দেশটিতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক ও বৈরী মনোভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ফ্রান্স সরকার ২০১১ সালে মহিলাদের নিকাব পরা নিষিদ্ধ করে একটি আইন পাস করে। এই আইন লংঘনকারীকে ১৫০ ইউরো জরিমানা করার বিধান করা হয়েছে। ইউরোপের আরো কয়েকটি দেশে হিযাব নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এদেশগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, স্পেন ও সুইজারলান্ড। এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করেছে। ল-নভিত্তিক সংস্থাটি হিযাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করে বলেছে, ইউরোপের কয়েকটি দেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মুসলিম নাগরিকদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক নীতি অনুসরনের নীতি গ্রহণ করেছে। এটি মারাত্মক ধ্বংসাত্মক একটি পদক্ষেপ।
সম্প্রতি আইএফওপি পরিচালিত এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, ফ্রান্সের প্রায় অর্ধেক নাগরিক মনে করে মুসলমানরা তাদের নাগরিক সত্তার প্রতি হুমকির সৃষ্টি করছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button