মুম্বাইয়ে ১৮ নাবিকসহ সাবমেরিন বিস্ফোরিত
ভারতের মুম্বাইয়ে ১৮ নাবিকসহ একটি সাবমেরিন বিস্ফোরিত হয়েছে। বিস্ফোরণে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে, আশপাশে ক্ষেপণাস্ত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রীর ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে দেখা গেছে। ভারতীয় বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, মুম্বাইয়ের কেন্দ্রস্থলে নৌবাহিনীর ডকইয়ার্ডে সাবমেরিনের ব্যাটারিতে চার্জ দেয়ার সময় তাতে থাকা একটি টর্পেডো বিস্ফোরিত হয়। এতে সাবমেরিনটি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়। এটি এখন ডকইয়ার্ডের কাছে প্রায় ডুবন্ত অবস্থায় রয়েছে। বিস্ফোরণের পর পুরো এলাকার আকাশে অগ্নিগোলক দেখা যায়। মুম্বাইভিত্তিক মিডডে পত্রিকার নগর সম্পাদক বিনোদ কুমার জানিয়েছেন, মধ্যরাতে আগুন লাগে এবং তা ভোর ৬টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। আগুন নেভাতে দমকল বাহিনীর ডজন খানেক গাড়ি ছুটে আসে। আইএনএস সিন্ধুরক্ষক নামের ১৬ বছরের পুরনো সাবমেরিনটি রাশিয়ার কাছ থেকে ভাড়া নেয়া হয়েছিল। বিস্ফোরণের সময় তাতে পূর্ণাঙ্গভাবে অস্ত্রে সজ্জিত ছিল। খবরে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনা সময়ে আইএনএস সিন্ধুরতœ নামে আরেকটি সাবমেরিন ভেড়ানো ছিল। সিন্ধুরক্ষকের আগুন তাতেও ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তেমন ক্ষতি ছাড়াই সেটি সরে যেতে সক্ষম হয়। স্থানীয় টিভি টাইমস নাউ-এর উদ্ধৃতি দিয়ে সিনহুয়া জানিয়েছে, মুম্বাইয়ের ডকইয়ার্ডে কিছু বস্তু পাওয়া গেছে, যা ক্ষেপণাস্ত্র ও একটি বুস্টারের ধ্বংসাবশেষ বলে মনে করা হচ্ছে। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি দুর্ঘটনায় নৌবাহিনীর যেসব কর্মী নিহত হয়েছেন, তাদের জন্য তিনি শোক প্রকাশ করেন। তবে কতজন নিহত হয়েছেন, তা তিনি প্রকাশ করেননি। তিনি বলেন, এটা আমাদের সবার জন্যই বড় ধরনের ক্ষতি। একটি ট্র্যাজেডি। এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উল্লেখ্য, আইএনএস সিন্ধুরক্ষককে বিবেচনা করা হতো বিশ্বের অন্যতম অত্যাধুনিক অপারমাণবিক সাবমেরিন। সাবমেরিনটিতে জাহাজবিধ্বংসী ‘কাব’ ক্ষেপণাস্ত্রও বহন করতে সক্ষম ছিল। ১৯৭১ সালের পর ভারতের নৌবাহিনীর ইতিহাসে এটা সবচেয়ে মারাত্মক বিপর্যয়। পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের সময় ভারতের আইএনএস খুকরি ডুবে গিয়েছিল। দুর্ঘটনার সময় সাবমেরিনটিতে ১৫ জন নাবিক এবং সাবমেরিনটির দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাসহ তিনজন অফিসার ছিলেন। তাদের ভাগ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে নৌবাহিনী সূত্র বলেছে, এ ধরনের দুর্ঘটনার পর কারো বেঁচে থাকা বিরল ঘটনা। তাদের উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চলছে। কিলো শ্রেণীর দুই হাজার ৩০০ টনের সাবমেরিনটি চলত ডিজেল জেনারেটর ও বৈদ্যুতিক ব্যাটারিতে। অপারেশনে থাকার সময় এতে ৫৩ জন ক্রু থাকে। মাস তিনেক আগে ৮০০ কোটি ডলার ব্যয়ে সাবমেরিনটি রাশিয়া থেকে ব্যাপক সংস্কার করে আনা হয়েছিল। এই সাবমেরিনটিতে ২০১০ সালে আগুন লেগেছিল। তাতে এক নাবিক নিহত ও দুইজন আহত হয়েছিল। ভারত সাম্প্রতিককালে চীনের সাথে পাল্লা দিয়ে তাদের নৌবাহিনীর সামর্থ্য বাড়াচ্ছে। গত বছর ভারত প্রায় ১০০ কোটি ডলার ব্যয়ে রাশিয়া থেকে একটি পরমাণবিক সাবমেরিন ভাড়া নেয়। এই দুর্ঘটনার মাত্র দু’দিন আগে ভারতীয় নৌবাহিনী স্থানীয়ভাবে নির্মিত বিমানবাহী রণতরীর উদ্বোধন করেছিল। ভারতীয় নৌবাহিনীর হাতে এখন ১৪টি সাবমেরিন রয়েছে। এগুলোর একটি পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন। এটি রাশিয়ার কাছ থেকে ভাড়া নেয়া। অন্য দিকে চীনের রয়েছে দু’টি ব্যালাস্টিক সাবমেরিনসহ ৪৫টি সাবমেরিন।