সিলেটে এবার আন্তর্জাতিক ফুটবলের উৎসব
আহবাব মোস্তফা খান: গত বছর বিশ্ব ক্রিকেটের উৎসবে মেতেছিলো সিলেট। হয়েছিলো কোটি মানুষের স্বপ্ন পূরণ। সেই উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও নয়া উৎসবের হাতছানি। তবে এটা ক্রিকেট নয়, উৎসব হবে ফুটবলের। নতুন বছরের সূচনা লগ্নে এই উৎসবের জন্য অপেক্ষা দীর্ঘ নয়, আর মাত্র ক’টা দিন।
আগামী ২৯ জানুয়ারি সিলেটে পর্দা উঠছে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্ণামেন্টের। এতে অংশ নিচ্ছে পাঁচ ফুটবল প্রিয় দেশ। সিলেট মাতাতে আসছে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, বাহরাইন ও বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল টিম। টুর্ণামেন্টের ফাইনাল হবে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। সিলেটে হবে একটি সেমিফাইনালসহ চারটি হাই ভোল্টেজ ম্যাচ।
ফুটবলের মেগা এই টুর্ণামেন্টের জন্য নবরুপে সাজছে সিলেট জেলা স্টেডিয়াম। নেয়া হচ্ছে নানা প্রস্তুতি। স্টেডিয়াম আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাতে নেয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। এ লক্ষ্যে গত কয়েকদিন ধরে ঘাম ঝরাচ্ছেন সিলেটের ফুটবল সংশ্লিষ্টরা।
স্টেডিয়াম সংস্কারে ইতোমধ্যে ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। এই বরাদ্দ দিয়ে আধুনিকায়ন হচ্ছে ড্রেসিং রুম, মিডিয়া বক্স, প্রবেশ গেট ও ভিআইপি বক্সের। নতুন করে সংস্কারের ফলে অনেকটা পাল্টে যাচ্ছে স্টেডিয়ামের অবকাঠামোর চিত্র। ফিরছে নতুন রুপে। এসব সংস্কার দেশীয় ফুটবলের গাইডলাইন দিয়ে হচ্ছে না। সম্পূর্ণ বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার গাইড লাইন অনুসরণ করেই হচ্ছে স্টেডিয়ামের আধুনিকায়নের কাজ। এক্ষেত্রে যাতে কোন ব্যত্যয় না ঘটে সেজন্য তৎপর ক্রীড়া সংশ্লিষ্টরা। এ লক্ষ্যে গত ২৩ ডিসেম্বর সিলেট জেলা স্টেডিয়াম পর্যবেক্ষণ করেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের প্রকৌশলীরা।
ফিফার গাইডলাইন অনুযায়ী ড্রেসিং রুমের উপর তলা থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে মিডিয়া বক্স। ক্রীড়া ভবনের চতুর্থ তলায় স্থানান্তর করে আন্তর্জাতিক মানের গড়ে তোলা হচ্ছে মিডিয়া বক্স। দু’তলায় ভিআইপি বক্সে লাগানো হচ্ছে অত্যাধুনিক গ্লাস আর টাইলস। গত আগষ্টে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-নেপালের ম্যাচের মত যাতে প্রবেশ গেট দর্শকরা ভাঙতে না পারেন, সেজন্য নেয়া হচ্ছে বিশেষ পদক্ষেপ। প্রবেশ গেটগুলো সুরক্ষিত করে নির্মাণ করা হচ্ছে নতুন করে।
এদিকে, স্থাপিত ফ্লাড লাইটও নতুন করে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য আলাদা দেড় কোটি টাকার প্রস্তাব জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে পাঠানো হয়েছে। আজ ও কালের মধ্যে এই বরাদ্দও চলে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে দু’এক দিনের মধ্যে ফ্লাড লাইট সংস্কারের কাজও শুরু হবে। জানা গেছে, টুর্ণামেন্টের সবগুলো ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করবে চ্যানেল নাইন। বর্তমান ফ্লাড লাইটের আলো সরাসরি সম্প্রচার উপযোগী না হওয়ায় কর্তৃপক্ষের পরামর্শেই সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এদিকে, সিলেটে আন্তর্জাতিক ফুটবলের আসর বসার খবরে উচ্ছ্বসিত সিলেটের ক্রীড়া সংশ্লিষ্টরা। এজন্য তাদের প্রস্তুতিরও অন্ত নেই। আন্তর্জাতিক ফুটবল আয়োজনের যথার্থতা প্রমাণ করতে স্টেডিয়াম ও এর আশপাশ এলাকা সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একজনের তথ্যমতে খেলাকে সামনে রেখে সিলেটকে নববধুর সাজে সাজানো হবে।
সার্বিক বিষয়ে সিলেট ডিস্ট্রিক্ট ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিম বলেন, এরকম আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্ণামেন্ট আয়োজন সিলেটের ক্রীড়াঙ্গণে ঐতিহাসিক ঘটনা। তাই যেকোন মূল্যে টুর্ণামেন্ট সফল করতে অব্যাহতভাবে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে স্টেডিয়ামের আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে ড্রেসিং রুম, মিডিয়া বক্স, ভিআইপি বক্স। ফ্লাড লাইট সংস্কারেও দেড় কোটি টাকার কাজ শুরু হবে। এক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রীকে কৃতিত্ব দিতে চান তিনি। সেলিম বলেন, গত বছর থেকে সিলেটের ক্রীড়াঙ্গণে জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত রাখতে সকলের সহযোগিতা চান তিনি।
উল্লেখ্য, আগামী ২৯ জানুয়ারি উদ্বোধনী ম্যাচ হবে সিলেটে। এতে মুখোমুখি হবে স্বাগতিক বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া। টুর্ণামেন্টের ফাইনাল হবে ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে।