নিউইর্য়কে অবৈধ অভিবাসীদের জন্য সিটি আইডি চালু
কাগজপত্রহীন ও অবৈধ অভিবাসীদের জন্য সিটি আইডি দেয়ার পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রথম। গত ১৫ জানুয়ারি থেকে কাগজপত্রহীন অবৈধ অভিবাসীসহ নিউইয়র্কবাসী সবাই আইডি কার্ড বা পরিচয়পত্র দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এই পরিচয় পত্রের ফলে কাগজ পত্রহীন অভিবাসীরা নির্ভয়ে প্রকাশ্যে জীবিকা নির্বাহ করার সুযোগ পাবেন। বিল ডি ব্লাসিও মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর কাগজপত্রহীন অবৈধ অভিবাসীসহ নিউইয়র্কবাসীদের জন্য আইডি কার্ড বা পরিচয়পত্র দিতে গত জুনে আইন পাস করে নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল। সব বাসিন্দাকে পরিচয়পত্র দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে নগর কর্তৃপক্ষ। এর ফলে নাগরিক সেবা পাওয়ার দ্বার খুলেছে অবৈধ অভিবাসীদের। ফ্লাশিংয়ের কুইন্স লাইব্রেরিতে ঐতিহাসিক এই সিটি আইডি কার্যক্রমের উদ্বোধন করলেন নিউইয়র্ক সিটি মেয়র বিল ব্লাসিও।
সিটি আইডি কার্যক্রম উদ্বোধন করে ১৪ জানুয়ারি নিউইয়র্কের মেয়র ব্লাসিও। সিটি আইডি কার্যক্রমে প্রাথমিকভাবে মোট ১৭টি কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে বাংলাসহ মোট ২৫টি ভাষায় সিটি আইডি আবেদনপত্র পাওয়া যাবে। নিউইয়র্ক পুলিশ, স্কুল ভবনসহ নগর সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে এই আইডি গ্রহণযোগ্য হবে। এছাড়া নিউইয়র্কের ১৩৭টি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের বিনামূল্যে সদস্য হওয়া যাবে এই আইডি কার্ডের বদৌলতে। এই পরিচয়পত্র ৫০ হাজারের বেশি বাংলাদেশিসহ বৈধ কাগজপত্রবিহীন অভিবাসীরা ব্যাংক হিসাব খোলা ও সম্পদ ইজারা নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।
এছাড়া পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলতে বা বিশেষ কোনো ইস্যুতে দেন-দরবারেও তাদের আর প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে না।
আইনে স্বাক্ষরের আগে মেয়র বিল দে ব্লাসিয়ো বলেন, নিউইয়র্ক হচ্ছে অভিবাসীদের শহর। এ শহরে কঠোর পরিশ্রমী অভিবাসীরা নিগৃহীত হবেন- তা হতে পারে না।
মেয়র বক্তব্যে বলেন, অভিবাসীরাই এ শহর গড়েছেন, তাই তাদের সব কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করেই নিউ ইয়র্কের ঐতিহ্য সমুন্নত রাখতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের আদম-শুমারির তথ্য অনুযায়ী, নিউ ইয়র্কের ৮৪ লাখ বাসিন্দার এক তৃতীয়াংশই অন্য দেশে জন্মেছেন। শহরটিতে প্রায় ৫ লাখ অবৈধ অভিবাসী আছেন বলে জানায় মেয়র ব্লাসিয়ো। শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সেবা পেতে এই পরিচয়পত্র ব্যবহার করা যাবে বলে অভিবাসন বিষয়ক কমিশনার নিশা আগরওয়াল জানিয়েছেন। এজন্য পরিচয়পত্রে ফেডারেল ব্যাংকিংয়ের বিধিবিধান অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সনাক্তকরণ মান নিশ্চিত করতে চায় সিটি কাউন্সিল। সিটি কাউন্সিলের স্পিকার মেলিসা মার্ক- ভিভেরিটো বলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস যেখানে অভিবাসন সমস্যার সমাধানে নিশ্চুপ, সেখানে নিউ ইয়র্কের রাজনীতিকরা সঠিক একটি পদক্ষেপ নিলেন। সিটি কাউন্সিলে এই বিলের উদ্যোক্তা কাউন্সিলর কার্লোস মেনচেচা ও ডেনিয়েল ড্রোম। তারা জানান, এই আইনের ফলে শহরে বসবাসকারী সবাই সমান অধিকার পাবেন। অবৈধ অভিবাসীরা এখন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। বাড়ি ভাড়ার চুক্তিতেও স্বাক্ষর করতে পারবেন।
এছাড়া অভিবাসীদের মধ্যে যারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত তাদের সম্পর্কে পুলিশকে সহায়তা করতেও তারা ভয় পাবেন না। কারণ, কোনো কর্তৃপক্ষই এখন তাদের অভিবাসী মর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবে না। অভিবাসন সমস্যার স্থায়ী সমাধানে শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস ‘মানবিক’ একটি বিল পাশ করবে অথবা প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার নির্বাহী আদেশ দেবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রায় এক কোটি ১২ লাখের বেশি কাগজপত্রহীন অভিবাসীকে শর্তসাপেক্ষে গ্রিনকার্ড দেয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আহ্বানে এখনও সাড়া দেয়নি কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ তথা রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি পরিষদ। গত বছরের জুন মাসের শেষ দিকে ডেমোক্র্যাট নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্র সিনেটে ‘কমপ্রিহেনসিভ ইমিগ্রেশন রিফর্ম’ বিল পাশ হয়। বিলটির পরিপূরক একটি বিল প্রতিনিধি পরিষদে পাশ না হওয়ায় তা কার্যকার হচ্ছে না। চলতি গ্রীষ্মের মধ্যে (অগাস্টের মধ্যে) কংগ্রেস ‘কমপ্রিহেনসিভ ইমিগ্রেশন রিফর্ম’ বিল পাশ না করলে তিনি নিজের নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগে বাধ্য হবেন বলে এরইমধ্যে প্রেসিডেন্ট ওবামা ঘোষণা দিয়েছেন।