দেশী-বিদেশী পণ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা
সাবিরা সুলতানা: শীতের পড়ন্ত বিকেলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা যেন প্রাণ পায় হাজারো মানুষের পদচারণায়। অবরোধের বিরূপ পরিবেশের মধ্যেও মেলায় যাওয়ার আগ্রহের কমতি থাকে না কারোর মধ্যেই। যদিও রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এবারের মেলা শুরু থেকে তেমন জমে উঠতে পারেনি। মেলায় লোকসমাগম ছিল খুবই কম। মেলায় আসা স্টল মালিকদের মধ্যে দেখা গেছে হতাশা। তারপরও মাঝামাঝি সময়ে এসে মেলায় যেন অনেকটা প্রাণ ফিরে এসেছে। অন্তত কয়েক দিনের চিত্র তাই বলে।
কোলাহলমুখর সদা ব্যস্ত নগরবাসীর জীবনে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা প্রতি বছর যেন কিছুটা বিনোদনের মাধ্যম হয়ে হাজির হয়। কেনাকাটা, দেশী ও বিদেশী পণ্যের সাথে পরিচিত হওয়ার পাশাপাশি পরিবার-পরিজন নিয়ে কিছুটা সময় কাটানোর এই সুযোগ নগরবাসী হাতছাড়া করতে চান না।
গত ১ জানুয়ারি ২০১৫ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার উদ্বোধন করেন। অর্থনৈতিক দিক থেকেও এই মেলার অবদান উল্লেখ করার মতো।
ভারত, ইরান, তুরস্ক, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি বিদেশী প্রতিষ্ঠান এবারের মেলায় তাদের পণ্যের পসরা নিয়ে এসেছে। এসব মেলায় পাওয়া যাচ্ছে সেসব দেশের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন পণ্য। তুরস্কের ল্যাম্পশেড ও হাতে বানানো সিরামিকের নানা তৈজসপত্র দর্শকদের দারুণভাবে আকর্ষণ করেছে। নানা ধরনের পাথর ও অলঙ্কার পাওয়া যাচ্ছে ইরান, ভারত ও পাকিস্তানের স্টলে। সব বয়সী নারীদের ভিড় দেখা গেছে এসব স্টলে। পছন্দ হলে অনেকেই কিনে নিচ্ছেন এসব পণ্য। শাড়ি, থ্রিপিস, শাল ও স্যান্ডেলের বিশাল সম্ভারও রয়েছে এসব স্টলে। গত শুক্র ও শনিবারের ছুটির দিনে এসব স্টলে ছিল ক্রেতাদের ভিড়।
গৃহস্থালীর নানা সরঞ্জাম কেনায় ব্যস্ত দেখা গেছে গৃহিণীদের। মেলামাইনের পাশাপাশি অ্যালুমিনিয়ামের আকর্ষণীয় বিভিন্ন পণ্য ক্রেতারা কিনেছে বেশ আগ্রহ নিয়ে। বিশেষ করে দিল্লি অ্যালুমিনিয়াম ও কিয়ামের স্টলে ছিল ক্রেতাদের লম্বা লাইন।
আরএফএল, হাইকোসহ প্লাস্টিকের সামগ্রী তৈরিকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতেও ছিল বেশ ভিড়। ক্রেতার সংখ্যাও ছিল উল্লেখ করার মতো। ধানমন্ডি থেকে আগত এক গৃহিণী জানান, মেলার সুবিধা হলো এখানে একসাথে অনেক কোম্পানির পণ্য দেখার সুযোগ পাওয়া যায়, যাচাই করে দেখার সুযোগও পাওয়া যায়। তাই এখান থেকে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস কিনে নিতে চেষ্টা করি।
নেকটার কোম্পানির শোরুম ঘুরে সাজ্জাদ নামে এক দর্শনার্থী বললেন, এই নামে যে দেশীয় কোনো ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানি আছে মেলায় না এলে সেটা জানতামই না।
এসবের পাশাপাশি রয়েছে ফার্নিচার, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, ফেব্রিক্স, পাটজাত পণ্য, শতরঞ্জি, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, সিরামিক, কার্পেট, অটমোবাইল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানসহ ৫০০ স্টল।
আইসক্রিমের স্টলগুলোর সামনে গিয়ে দেখা গেল শীতের মধ্যেও অনেকেই স্বাদ নিচ্ছেন নতুন নানা ফেবারের আইসক্রিমের। ঘোরা, খাওয়া আর কেনাকাটা তিনটি কাজ একসাথে করার সুযোগ নিচ্ছেন মেলায় আসা সবাই।
মেলায় আসা দর্শনার্থীদের প্রায় সবাই কিছুটা সাশ্রয়ী মূল্য প্রত্যাশা করেন। এবারের মেলায় তারা খুব একটা হতাশ হবেন না। কারণ অনেক স্টল দিচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ছাড় ও বিভিন্ন অফার। আকতার ফার্নিচার তার পণ্যের ওপর দিচ্ছে ১৫ শতাংশ ছাড়। নাভানা ফার্নিচার ছাড় দিচ্ছে ১৭ শতাংশ। আরএফএলের সব পণ্যে দিচ্ছে ৮ শতাংশ ছাড়। এভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ৫ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় অফার করেছে মেলা উপলক্ষে। এ ছাড়া রয়েছে উপহার। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নানা প্যাকেজ রয়েছে। যেমন প্রাণ ফুডের রয়েছে সাশ্রয়ী মূল্যে ৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন প্যাকেজ। এন মোহাম্মদ প্লাস্টিক বিভিন্ন মূল্যমানের কেনাকাটার সাথে দিচ্ছে নানা উপহার ফ্রি। তুরস্ক এম্পোরিয়ামে হাতে তৈরি দু’টি সিরামিক বোলের সাথে দিচ্ছে একটি বোল ফ্রি।
তাই কেনাকাটা করে কেউই অখুশি হবে না। দেশীয় পণ্যের বিশাল সমাহারও রয়েছে মেলায়। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্প, গার্মেন্ট, গজ কাপড়, খাবারসহ বহু কিছু।
মেলা খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। মেলায় প্রবেশমূূল্য বড়দের ৩০ ও ছোটদের ২০ টাকা। জানুয়ারি মাসজুড়ে এই মেলা চলবে।