বিবাদমান সকল পক্ষকে সংলাপে বসার আহ্বান হেফাজতে ইসলামের
দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট, খুন-খারাবি, অর্থনৈতিক স্থবিরতা এবং মানুষের জান-মালের চরম নিরাপত্তাহীনতায় গভীর উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করে এ ব্যাপারে বিবাদমান রাজনৈতিক দলসমূহকে অবিলম্বে সংলাপের মাধ্যমে সংকট উত্তরণের উপায় বের করার আহ্বান জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। পাশাপাশি চলমান সংকট নিরসনে আগামী শুক্রবার নফল রোযা পালন ও বাদ জুমা মসজিদে মসজিদে বিশেষ মুনাজাত পরিচালনারও আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। আজ মঙ্গলবার বিকেলে সংবাদপত্রে প্রেরিত এক যৌথ বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ঈমান-আক্বিদা ভিত্তিক একটি অরাজনৈতিক বড় সংগঠন হিসেবে হেফাজতে ইসলাম কোনভাবেই দেশে দমন-পীড়ন ও জ্বালাও-পোড়াও চায় না, শান্তি চায়। সরকারী দল ও বিরোধী দলের বর্তমান দ্বন্দ্ব-সংঘাতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি দেশের আলেম সমাজও উদ্বিগ্ন বলে তারা জানান। বিবৃতিদাতারা হলেন, হেফাজতে ইসলামের আমীর ও দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক দেশের শীর্ষ আলেম আল্লামা শাহ আহমদ শফী, সিনিয়র নায়েবে আমীর আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, মহাসচিব প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী, নায়েবে আমীর মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী, মাওলানা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধূপুর, মাওলানা মুফতী ওয়াক্কাস, মাওলানা সালাহ উদ্দীন নানুপুরী, মাওলানা মুহাম্মদ ইদরিস, মাওলানা জাফরুল্লাহ খান, মাওলানা তাজুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ফতেপুর মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা মাহমুদুল হাসান, বাথুয়া মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা মুহাম্মদ শফি, আমীরের প্রেস সচিব মাওলানা মুনির আহমদ, আমীরের একান্ত সচিব মাওলানা শফিউল আলম, কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মীর ইদরিস, মাওলানা শফিউল্লাহ প্রমুখ।
বিবৃতিতে হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বন্দ্ব-সংঘাতের কারণে বর্তমানে দেশে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি চলছে, তাতে দেশবাসী আতংকিত। দেশব্যাপী সহিংসতা, হানাহানি, ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড ভয়াবহ রূপে বেড়ে যাওয়ায় মানুষের স্বাভাবিক চলাচল ও আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। দ্রব্যমূল্য ধরাছোঁয়ার বাইরে। খেটে খাওয়া শ্রমিক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, শিল্পপতিসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ কর্মহীন ও নিঃস্ব হয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক মামলা ও গ্রেফতার আতংকে নাগরিক জীবনে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। এ নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের পাশাপাশি দেশের আলেম সমাজও উদ্বিগ্ন।
বিবৃতিতে বলা হয়, রাজনৈতিক দলগুলো যেহেতু সাধারণ মানুষ ও দেশের স্বার্থে রাজনীতি করছে, তাই তাদের উচিত অবিলম্বে হানাহানি বন্ধ করে শান্তির পথে ফিরে আসা এবং আলোচনার টেবিলে বসে সংকট সমাধানের পথ খুঁজে বের করা। আলোচনায় বসার প্রশ্নে কোন ধরণের শর্তারোপ ও সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই। তারা বলেন, পবিত্র ইসলাম ধর্ম হচ্ছে শান্তির ধর্ম। ইসলামে সন্ত্রাস ও জোর-জুলুমের যেমন স্থান নেই, তেমনি অপকৌশলের আশ্রয় নিয়ে কোন ধরণের ছলচাতুরি ও মানুষের অধিকার হরণেরও সুযোগ নেই। ইসলাম সব সময় ন্যায়, ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় অন্যায়-অবিচার, জুলূম-অত্যাচার ও অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর। দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটের কারণে যে ভয়ংকর সংঘাতময় পরিস্থিতি চলছে, তাতে ইসলামের খাদেম ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে দেশের আলেম সমাজের চুপ থাকার সুযোগ নেই। বৃটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত দেশ ও জাতির যে কোন সংকটে আলেম সমাজ দায়িত্বশীল ভূমিকা রেখে আসছে।
বিবৃতিতে হেফাজত নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে উল্লেখ করে থাকেন যে, তিনি দেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নতি চান, মানুষের স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও ভোটাধিকার সুনিশ্চিত করতে চান এবং বিরোধী দলও বলে থাকে, তারা সংঘাত ভাংচুরের রাজনীতি করে না। সুতরাং দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আলোচনায় বসতে বাধা থাকার কথা নয়।
বিবৃতিতে হেফাজত নেতৃবৃন্দ চলমান সংকট কাটিয়ে দেশে শান্তি ফিরে আসার জন্য আগামী ২৩ জানুয়ারী শুক্রবার সকল মুসলমানের প্রতি নফল রোযা পালন এবং বাদ জুমা দেশের সকল মসজিদে তৌহিদী জনতাকে নিয়ে মহান আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানিয়ে প্রার্থনা করার জন্য উলামা-মাশায়েখ ও মসজিদের খতীব সাহেবগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদেরকে যে কোন সমস্যায় আল্লাহর সাহায্য কামনা করতে হবে। আল্লাহই উত্তম সাহায্যকারী এবং উত্তম ফায়সালাকারী।