রাজা জন কি আসলেই ম্যাগনা কার্টায় স্বার করেছিলেন ?
ব্রিটেনে দুই পাউন্ড মূল্যের যে কয়েন সেখানে দেখা যায় কিং জন তার এক হাতে ধরে আছেন ম্যাগনা কার্টা এবং আরেক হাতে পালক দিয়ে তৈরি বড়ো আকারের একটি কলম। এই ছবি দেখে সবাই মনে করবেন রাজা জন এই ম্যাগনা কার্টায় স্বার করেছেন।
তবে প্রকৃত তথ্য হলো – তিনি সেটা করেন নি।
তবে মধ্যযুগীয় অন্যান্য শাসকদের মতো তিনিও ওই দলিলে তার নাম রেখে দেওয়ার জন্যে গ্রেট সীল ব্যবহার করেছিলেন।
ম্যাগনা কার্টা স্বারের ৮০০তম বর্ষপূর্তিতে ওই কয়েনটি তৈরি করেছিলো ব্রিটিশ মুদ্রা তৈরির প্রতিষ্ঠান রয়্যাল মিন্ট, এবং এই ত্রুটির জন্যে পরে প্রতিষ্ঠানটির প্রচুর সমালোচনা হয়েছে।
রয়্যাল মিন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে প্রতিষ্ঠানটি স্কুলের একজন ছাত্রের মতো ভুল করেছে।
ইতিহাসবিদ মার্ক মরিস বলছেন, মধ্যযুগীয় শাসকরা কোনো দলিলে সই করে সেটাকে চূড়ান্ত করতেন না, বরং তারা সেটা করতেন ওটাতে সীল মারার মাধ্যমে।
সমালোচনার জবাবে রয়্যাল মিন্ট বলেছে, কয়েনটিতে যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে সেটার আরিক অর্থ তুলে ধরা ঠিক নয়।
তাহলে আসলেই কি ম্যাগনা কার্টাতে স্বার করা হয়েছিলো?
অক্সফোর্ড ইংলিশ অভিধানে স্বার করা এই ক্রিয়াবাচক শব্দটির অর্থ করা হয়েছে এভাবে: কোনো একটি চিঠি বা দলিলে সীল বসানো, তার শনাক্তকরণ বা প্রমাণীকরণের জন্যে, সীলমোহর দিয়ে স্ট্যাম্প বসানো।
রাজা জনের ছেলে তৃতীয় হেনরি অক্সফোর্ড অভিধানে এই শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন এই অর্থে: আমাদের সীলমোহর দিয়ে স্বারিত।
কিন্তু প্রকৃতপে এটা এরকম ছিলো না। তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে রয়্যাল মিন্টের সমালোচনা কি যৌক্তিক?
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক ইতিহাসের শিক জেন কাপলান বলছেন, এই সমালোচনা নিষ্ঠুর। কারণ এই কাহিনি অত্যন্ত জটিল।
ম্যাগনা কার্টায় রাজা এবং তার ধনী ও অভিজাত ব্যারনদের সাথে একটি মৌখিক সমঝোতা হয়েছিলো যা পরে লিখিত আকারে তৈরি করা হয় এবং কর্মকর্তারা তাতে সীলমোহর বসিয়েছিলেন। তার অর্থ হলো তিনি নিজে সেই সীল মারেন নি।
এই চুক্তিটির বিষয়বস্তু জনসমে পড়ে শোনানোর জন্যেই তৈরি করা হয়েছিলো।
ইতিহাসবিদরা বলছেন, বর্তমান আধুনিক পৃথিবীতে যেভাবে চুক্তিপত্র স্বারিত হয় ম্যাগনা কার্টা সেভাবে স্বারিত হয়নি। কারণ ১২১৫ সালের পৃথিবী আজকের মতো আধুনিক ছিলো না।