সাদ্দাম হোসেনের মেয়ে রাঘাদ হুসেন এখন গয়না-শিল্পী !
ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন তার পিতা। উপসাগরীয় যুদ্ধের ভয়াবহ স্মৃতি এখনও পিছু তাড়া করে। বাবার হাতে স্বামীর খুন হওয়ার কথাও ভোলেননি তিনি। জর্ডনে নির্বাসিত রাঘাদ হুসেন তবু শিল্প সৃষ্টিতে মগ্ন।
আইএসআইএস যোদ্ধাদের প্রকাশ্যে সমর্থন করতে দ্বিধা বোধ করেন না সাদ্দামে মেয়ে রাঘাদ। কয়েক মাস আগে সাদ্দামের জন্মস্থান তিকরিত দখল করার পর মুক্তকণ্ঠে ইরাক ও সিরিয়ায় সক্রিয় আইসিসি সংগঠনের প্রশংসায় মুখর হয়েছিলেন তিনি। আসলে ইরাক থেকে পালিয়ে আসতে বাধ্য হলেও জন্মভূমির প্রতি তীব্র ভালোবাসা রয়ে গিয়েছে রাঘাদের।
ইরাক বলতেই সাদ্দাম হোসন। বড় মেয়ে রাঘাদের যখন ১০ বছর বয়স, সাদ্দাম ততদিনে দেশের প্রেসিডেন্ট। ১৯৮৩ সালে সাদ্দামের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা রিপাবলিকান গার্ড প্রধান হোসেন কামেল আল-মজিদকে বিয়ে করে সংসার পাতেন রাঘাদ। মাত্র ১৬ বছর বয়সে প্রথম সন্তান আলির জন্ম দেন। ছাব্বিশ বছর বয়সে তিনি আরো চার সন্তান- দুই ছেলে সাদ্দাম ও ওয়াহেজ এবং দুই মেয়ে হারিস ও বানান-এর জন্ম দেন তিনি।
২০০৩ সালে ইরাকের পতন ও সাদ্দাম নিরুদ্দেশ হওয়ার পর বাগদাদের প্রাসাদ ছেড়ে জর্ডনে পালাতে বাধ্য হন রাঘাদ। তবে প্রবাসে মোটেই দুর্দশাগ্রস্ত হননি তিনি। বরং তার বিলাসবহুল জীবনযাপন দেখে জর্ডানবাসীর চোখ কপালে ওঠে। ফ্যাশনদুরস্ত পোশাক ও জুতো পরতে ভালোবাসেন রাঘাদ। শরীরের বাঁধন অটুট রাখতে অসংখ্য কসমেটিক সার্জারি করিয়েছেন। তাঁর গয়নার সম্ভার নিয়ে বিস্তর জল্পনা শোনা যায়। জানা গিয়েছে, সেই সব অলংকারের ডিজাইন নিজেই তৈরি করতে পছন্দ করেন তিনি। তবে শুধু নিজের জন্যই নয়, দস্তুরমতো গয়নার ব্যবসা ফেঁদে বসেছেন সাদ্দাম-কন্যা।
গয়নার নক্সাতে অবশ্য ফিরে ফিরে আসে ইরাক আর তার শৈশবের নানা মুহূর্ত। দোর্দণ্ডপ্রতাপ পিতার উপহার দেয়া বিশালাকৃতি ফিরোজা অপূর্ব সুন্দর এক নেকলেসে পরিণত করেছেন রাঘাদ। তেমনই স্বামী হোসেনের উপহার দেওয়া আংটি ভেঙে মেয়ের জন্য অপরূপ আংটিও গড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য, ষড়যন্ত্রের অভিযোগে জামাতা হোসেনকে মৃত্যুদণ্ড দিতে দ্বিধা বোধ করেননি নির্মম একনায়ক। কিন্তু মৃত্যুর পর দুজনের উপহারই সমান মর্যাদা দিয়ে রূপান্তর করেছেন রাঘাদ।
কিন্তু নির্বাসিত সাদ্দাম কন্যার বিলাস-ব্যসনের খরচ আসে কোথা থেকে? অনেকের মতে, আশ্রয়দাতা জর্ডনের রাজপরিবারই যাবতীয় ব্যয় করে থাকেন। এহেন ফ্যাশন-দুরস্ত সৌখিন মেজাজের রাঘাদ আচমকা আইসিস যোদ্ধা গোষ্ঠীকে সমর্থন করছেন বলে ঘোষণা করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। আসলে তার মতোই সাদ্দামের অধুনা বিলুপ্ত ‘বাথ পার্টি’র প্রাক্তন নেতারাও আইসিস-কে সমর্থন করছেন। শুধু তাই নয়, উত্তর ইরাক দখল করতে আইএস যোদ্ধাদের সাহায্য করছেন তাদের কেউ কেউ। সাদ্দামের সাধের তিকরিত আইসিস দখল করার পর উল্লাসে ফেটে পড়েন রাঘাদ। ইরাকি সংবাদপত্রে তিনি বিবৃতি দেন, ‘এই জয় আমার বাবার হাতে তৈরি যোদ্ধাদের জয়।’
আসলে প্রবাসে বসেও পিতৃ-স্মৃতিতে বিভোর রাঘাদ মননে-প্রাণে সাদ্দামেরই স্বপ্ন দেখেন।