পোশাকশিল্পের ৪০ শতাংশ অর্ডার বাতিল

Garmentsচলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিপর্যয় নেমেছে দেশের অন্যতম রপ্তানি পণ্য পোশাক খাতে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের টানা হরতাল-অবরোধে ইতোমধ্যেই পোশাকশিল্পের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ অর্ডার বাতিল হয়েছে বলে জানায় বাংলাদেশ নিট পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিকেএমইএ)।
বিকেএমইএ সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি বায়াররা অর্ডার দিতে শুরু করেছিলো। কিন্তু, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বায়াররা এদেশে আসছে না। এছাড়া অনেকে তাদের অর্ডার বাতিল করে দিয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতায় এ পর্যন্ত ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ অর্ডার বাতিল হয়েছে। এছাড়া চলমান অবরোধে পোশাক খাতের ৪’শ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলেও জানায়ায়।
এ বিষয়ে বিকেএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বায়াররা আমাদেরকে ডেকে নিয়ে যাচ্ছে। তারা এদেশে আসতে চাচ্ছে না। আমি বৃহস্পতিবার ব্যাংকক যাচ্ছি। এছাড়া কুয়ালালামপুরেও বায়ারদের সাথে একটি বৈঠক রয়েছে।
অর্ডার বাতিল হওয়ার কারণ জানতে চাইলে হাতেম বলেন, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তারা (বায়াররা) শঙ্কিত যে আমরা সময়মত শিপমেন্ট দিতে পারব কিনা। তাই তারা অর্ডার বাতিল করেছেন। যা আমাদের পোশাক শিল্পে বড় ধরনের ক্ষতি।
বিকেএমইএ জানায়, গত ২০১৩ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে বর্তমান রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা কারখানাগুলোতে ফায়ার সেফটি, বিল্ডিং সেফটি এবং কমপ্লায়েন্সসহ সকল নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ইতোমধ্যেই একটা অবস্থান তৈরি করেছে। ঠিক সেই মুহূর্তে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা পোশাক খাতকে দীর্ঘস্থায়ী বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিবে।
এ বিষয়ে হাতেম বলেন, গত ২ বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবং রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বাড়াতে আমরা যখন বেশি বেশি অর্ডারের প্রত্যাশায় ছিলাম। তখনই রাজনৈতিক অস্থিরতা নতুন করে শঙ্কা তৈরি করেছে।
অবরোধে এক্সেসরিজ, ফেব্রিক্স এবং অন্যান্য কাঁচামাল পরিবহন ব্যাহত হয়। ফলে উৎপাদনও বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে আমাদের হাতে যে অর্ডার থাকে সময়মত তার শিপমেন্ট দিতে পারি না। এ কারণেই এয়ারযোগে (বিমান) বিদেশে মাল পাঠাতে হয়। যাতে প্রতি কন্টেইনারে খরচ পড়ে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা। আর এ কারণেই উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। ফলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই।
পোশাক শিল্পের আরেক সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সমিতি (বিজিএমইএ) সূত্রে জানা যায়, একদিনের হরতাল বা অবরোধে পোশাকশিল্পের প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ কোটি টাকার লোকসান হয়।
সংগঠনের সহ-সভাপতি শহিদুল্লাহ আজীম বলেন, বর্তমানে পোশাক খাতে ক্রয়াদেশ আসার সময়। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ক্রয়াদেশ কমে যাচ্ছে। এরই মধ্যে ক্রেতারা এদেশে আসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তারা আমাদের থাইল্যান্ড, হংকং যেতে বলেছেন। ফলে আমাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, পোশাক শিল্প হরতালের আওতামুক্ত থাকলেও এ শিল্পে একটি অর্ডার সম্পন্ন করতে হলে সহযোগী বিভিন্ন শিল্প-প্রতিষ্ঠান যেমন, বস্ত্র কারখানা, এক্সেসরিজ, ওয়াশিং, ডাইং, প্রিন্টিং, প্যাকেজিং প্রভৃতির সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রক্ষা করতে হয়। তাই যেকোনো সামান্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী কার্যক্রমই এ শিল্পের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বিঘ্নিত করে, সাপ্লাই চেইন ব্যাহত হয়।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button