কানাডার এক্সপ্রেস এন্ট্রি ইমিগ্রেশন সিস্টেমের নির্দেশনা
কানাডার অভিবাসন ব্যবস্থার নাটকীয় সংস্কার কর্মসূচির নির্দেশনা প্রকাশ করা হলো গত গত বছরের ৩০ নভেম্বর। এক্সপ্রেস এন্ট্রি নামের এই নতুন পদ্ধতি চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হচ্ছে। এক্সপ্রেস এন্ট্রি হবে কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য পাওয়া আবেদনগুলোর ব্যবস্থাপনার একটি ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতি।
টরন্টো থেকে প্রকাশিত পাক্ষিক প্রবাসী কণ্ঠ জানিয়েছে, স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আবেদন করতে হলে এখন থেকে দুই ধাপের প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। আবেদন করার জন্য যোগ্যতার শর্ত পূরণ করলেই আর আবেদনপত্র পেশ করা যাবে না। কানাডার নাগরিকত্ব ও অভিবাসন বিভাগের পক্ষ থেকে ‘‘আবেদন করার আমন্ত্রণ’’ পেলেই কেবল কেউ আবেদনপত্র জমা দিতে পারবেন। বিস্তারিত নিচে তুলে ধরা হলো। এক্সপ্রেস এন্ট্রি কিভাবে কাজ করবে? এক্সপ্রেস এন্ট্রির আওতায় দুই ধাপে আবেদনের প্রক্রিয়া নিন্মরূপ:
*প্রথম ধাপ: নিচে উল্লেখিত ইকোনোমিক ক্লাসের আওতায় সম্ভাব্য আবেদনকারীদেরকে অনলাইনে তাদের প্রোফাইল আপলোড করতে হবে এবং কানাডায় পারমানেন্ট রেসিডেন্সের জন্য আবেদন করার আগে সরকারের পক্ষ থেকে একটি আমন্ত্রণ পেতে হবে:
১) ফেডারেল স্কিলড ওয়ার্কার্স, ২) কানাডিয়ান এক্সপিরিয়েন্স ক্লাস, ৩) ফেডারেল স্কিলড ট্রেডস।
*দ্বিতীয় ধাপ: অনলাইনে প্রোফাইল জমা দেবার পর আবেদনকারীদেরকে অন্যান্য প্রার্থীদের সঙ্গে একটি তালিকায় একীভূত করা হবে এবং নিচে উল্লেখিত বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে তাদেরকে একেকটি র্যাংক দেয়া হবে। যারা সর্বোচ্চ র্যাংক পাবেন তাদেরকে আবেদন করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে। আর যাদেরকে মনোনীত করা হবে না তারা পরবর্তী ড্রয়ের জন্য পুলে থেকে যাবেন। লেবার মার্কেট ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট এবং প্রাদেশিক মনোনয়নসহ যারা আবেদন করবেন তাদেরকে সবার আগে মনোনীত করা হবে।
প্রাদেশিক নমিনি প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রদেশ ও টেরিটোরিগুলো তাদের স্থানীয় শ্রমবাজারের ঘাটতি পূরণের জন্য এক্সপ্রেস এন্ট্রির আওতায় বিদেশি নাগরিকদের মনোনীত করতে পারবে। এরপরও প্রতিটি প্রদেশ ও টেরিটোরি মনোনয়নের জন্য নিজস্ব মানদণ্ড নির্ধারণ করতে পারবে। এক্সপ্রেস এন্ট্রিতে আবেদনকারীরা প্রথমে অনলাইনে প্রোফাইল আপলোড করা এবং তারপর প্রদেশ বা টেরিটোরির মনোনয়ন গ্রহণ করতে কিংবা প্রথমে প্রদেশ/টেরিটোরির মনোনয়ন গ্রহণ এবং তারপর অনলাইনে প্রোফাইল আপলোড করে পুলে যোগ দিতে পারবেন।
প্রার্থীরা অনলাইন প্রোফাইল আপলোড করার দিন থেকে ১২ মাস পর্যন্ত পুলে থাকতে পারবেন। ওই সময়ের মধ্যে যদি তাদেরকে পারমানেন্ট রেসিডেন্সির জন্য আবেদন করার আমন্ত্রণ জানানো না হয় তাহলে তাদেরকে নতুন করে আরেকটি প্রোফাইল জমা দেবার সুযোগ দেয়া হবে যদি তখনও তারা সেই যোগ্যতার শর্ত পূরণ করেন।
এক্সপ্রেস এন্ট্রিতে মনোনয়নের মানদণ্ড হবে পয়েন্টভিত্তিক পদ্ধতি। এর ভিত্তি হবে নিচের বিষয়গুলি:
– প্রধান মানবিক পুঁজির বিষয়গুলি (বিশেষ করে বয়স, শিক্ষার স্তর, রাষ্ট্রীয় ভাষার ওপর দখল এবং কানাডীয় কর্ম অভিজ্ঞতা)
– সঙ্গে থাকা স্বামী/স্ত্রী বা আইনগত
– অংশীদার সম্পর্কিত বিষয়গুলি (বিশেষ করে স্বামী বা স্ত্রীর শিক্ষার স্তর এবং রাষ্ট্রীয় ভাষার ওপর দখল এবং কানাডীয় কর্ম অভিজ্ঞতা)
– দক্ষতা হস্তান্তরযোগ্যতার বিষয়গুলি (বিশেষ করে শিক্ষার স্তর, বিদেশের কর্ম অভিজ্ঞতা এবং কোন বাণিজ্যিক পেশায় যোগ্যতার সার্টিফিকেট)
– প্রাদেশিক মনোনয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলি অথবা আলোচনার মাধ্যমে জোগাড় করা কোন চাকরিতে কোয়ালিফাই করার প্রস্তাব।
আবেদন করার জন্য আমন্ত্রণ পাবার পর প্রার্থীদেরকে ৬০ দিনের মধ্যে অনলাইনে সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন কানাডার দফতরে আবেদন পেশ করতে হবে। সব আবেদনপত্র জমা পড়ার দিন থেকে পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে সেগুলো প্রক্রিয়াকরণ করা হবে এবং আবেদনপত্র জমে থাকার মত ঘটনা নাটকীয়ভাবে কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এক্সপ্রেস এন্ট্রিতে একটি ম্যাচিং টুলসও থাকবে যেটি বছরের কোনও এক সময় চালু করা হবে। এর ফলে চাকরিদাতারা তাদের কর্মীর চাহিদা পূরণের জন্য কোন কানাডীয় নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা না পেলে এমপ্লয়ার্স লিয়াজোঁ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এক্সপ্রেস এন্ট্রির প্রার্থীদের মধ্য থেকে শূন্যপদ পূরণ করতে পারবেন।
নতুন কর্মসূচি চালু হবার পর মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আবেদনের জন্য প্রথম আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর পর থেকে সারা বছর ধরে নিয়মিতভাবেই আমন্ত্রণ জানানো হবে।
দক্ষ অভিবাসীদের র্যাংক নির্ধারণ করা কীভাবে হবে?
সরকার চলতি সপ্তাহে প্রথমবারের মত র্যাংক নির্ধারণের পদ্ধতির বিস্তারিত প্রকাশ করেছে। ১ জানুয়ারি থেকে শুরু করে পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে দক্ষ অভিবাসীদেরকে কানাডায় এক্সপ্রেস এন্ট্রি দেয়ার জন্য র্যাংকিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে।
নতুন পদ্ধতিতে প্রার্থীদের মধ্যে মোট ১২০০ পয়েন্ট বণ্টন করা হবে। তবে কোয়ালিফাই করার জন্য কোন নিম্নস্তরের পয়েন্ট পাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। কেবল সর্বোচ্চ-র্যাংকধারী প্রার্থীদেরকে স্থায়ী বাসিন্দা হিসাবে ‘‘আবেদন করার আমন্ত্রণ’’ জানানো হবে।
যেসব প্রার্থী কোন কানাডীয় নিয়োগদাতার কাছ থেকে স্থায়ী চাকরির প্রস্তাব পাবেন অথবা যারা কোন প্রদেশ বা টেরিটোরির পক্ষ থেকে অভিবাসনের জন্য মনোনীত হবেন তাদেরকে সর্বোচ্চ ৬০০ পয়েন্ট দেয়া হবে। অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী ক্রিস আলেক্সন্ডার সোমবার এক লিখিত বিবৃতিতে বলেন, এরাই হবেন সেইসব প্রার্থী যাদেরকে ‘‘প্রথম বাছাই’’ হিসাবে তুলে নেয়া হবে।
বয়স, শিক্ষার স্তর, ভাষাগত দক্ষতা এবং কানাডায় কাজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ৫০০ পর্যন্ত পয়েন্ট বণ্টন করা হবে। এছাড়া শিক্ষাস্তর, বিদেশে কাজের অভিজ্ঞতা এবং পেশার ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট থাকা ইত্যাদি সম্মিলিতভাবে বিবেচনা করে সর্বোচ্চ ১০০ পয়েন্ট দেয়া হবে।
স্টেটিস্টিকস কানাডার ২০১১ সালের হাউসহোল্ড সার্ভে অনুযায়ী কানাডায় অভিবাসীদের মধ্যে তরুণতর, অধিকতর শিক্ষিত এবং বেশি ভাষা জানা লোকদের সংখ্যা বাড়ছে।
২০১১ সালে কানাডায় নবাগতদের গড় বয়স ছিলো ৩১.৭ বছর, যেখানে সব অভিবাসীর গড় বয়স হলো ৪৭.৪ বছর। ২০০৬ সালের আগে আসা অভিবাসীদের তুলনায় ২০০৬ সাল থেকে ২০১১ সালের মধ্যে কানাডায় আসা নবাগতদের একটি বড় অংশই ছিলো আন্ডারগ্রাজুয়েট ডিগ্রিধারী। সাম্প্রতিককালের অভিবাসীদের ৬৬.৮ শতাংশই ইংরেজি অথবা ফরাসী এবং সেইসঙ্গে অন্য একটি বা দু’টি ভাষা বলতে পারে, যেটা সব অভিবাসীর ক্ষেত্রে ৬১.২ শতাংশ।
নতুন পদ্ধতিতে সম্ভাবনাময় প্রার্থীদেরকে কীভাবে র্যাংক দেয়া হবে তার তিনটি উদাহরণ এখানে দেয়া হলো:
২৭ বছর বয়সী একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ও ডিজাইনার যার স্ত্রী বা স্বামী নেই
– বয়স: ১১০ পয়েন্ট।
– মাস্টার্স ডিগ্রির সমমানের ডিগ্রি: ১৩৫ পয়েন্ট।
– ইংরেজি অথবা ফরাসী ভাষায় দখল: ১৩৬ পয়েন্ট পর্যন্ত।
– দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় ভাষায় দখল: ২৪ পয়েন্ট পর্যন্ত।
– কানাডায় কাজ করার অভিজ্ঞতা: ৮০ পয়েন্ট পর্যন্ত
– বদলীযোগ্য দক্ষতা: ১০০ পয়েন্ট পর্যন্ত।
– উপমোট: ৬০০ পয়েন্টের মধ্যে ৫৮৫ পয়েন্ট পর্যন্ত।
– স্থায়ী চাকরির প্রস্তাব নেই কিংবা কোন প্রদেশ বা টেরিটোরির মনোনীত নন: ০ পয়েন্ট
– সর্বমোট: ৫৮৫ পয়েন্ট পর্যন্ত।
৩২ বছর বয়সী কমপিউটার প্রোগ্রামার এবং ইন্টারঅ্যাকটিভ মিডিয়া ডেভেলপার যার সঙ্গে স্বামী বা স্ত্রী নেই
– বয়স: ৯৪ পয়েন্ট।
– মাধ্যমিক-উত্তর পর্যায়ে লেখাপড়ার তিন বছর বা তার বেশি সময়ের ক্রেডেনশিয়াল: ১২০ পয়েন্ট।
– ইংরেজিতে পূর্ণ দখল: ১৩৬ পয়েন্ট পর্যন্ত।
– ফরাসী ভাষা জানেন না: ০ পয়েন্ট।
– আগে কখনই কানাডায় কাজ করেননি: ০ পয়েন্ট।
– বদলীযোগ্য দক্ষতা: ১০০ পয়েন্ট পর্যন্ত।
– উপমোট: ৬০০ পয়েন্টের মধ্যে ৪৫০ পয়েন্ট পর্যন্ত।
– স্থায়ী চাকরির প্রস্তাব বা কোন প্রদেশ বা টেরিটোরির মনোনয়ন থাকলে যোগ হবে ৬০০ পয়েন্ট পর্যন্ত।
– সর্বমোট: ১০৫০ পয়েন্ট পর্যন্ত।
৪৫ বছর বয়সী ফাইনান্সিয়াল ও ইনভেস্টমেন্ট অ্যানালিস্ট যার সঙ্গে স্ত্রী বা স্বামী রয়েছেন
– বয়স: ০ পয়েন্ট।
– বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারগ্রাজুয়েটের সমমানের ডিগ্রি: ১২০ পয়েন্ট।
– ইংরেজি বা ফরাসীর যেকোন একটিতে দক্ষ: ১২৮ পয়েন্ট পর্যন্ত।
– দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষায় দক্ষতা: ২২ পয়েন্ট পর্যন্ত।
– কানাডায় কাজের অভিজ্ঞতা: ৭০ পয়েন্ট পর্যন্ত।
– স্বামী বা স্ত্রী থাকার বিষয়ে: ৪০ পয়েন্ট পর্যন্ত।
– বদলীযোগ্য দক্ষতা: ১০০ পয়েন্ট পর্যন্ত।
– উপমোট: ৬০০ পয়েন্টের মধ্যে ৪৮০ পয়েন্ট পর্যন্ত।
– স্থায়ী চাকরির প্রস্তাব বা কোন প্রদেশ বা টেরিটোরির মনোনয়ন থাকলে যোগ হবে ৬০০ পয়েন্ট পর্যন্ত।
– সর্বমোট: ১০৮০ পয়েন্ট পর্যন্ত।
তথ্যসূত্রঃ সিবিসি