মিশরে যেভাবে চালানো হয় ‘অপারেশন রাবা’

Egyptস্থানীয় সময় ভোর চারটা। রাবা মসজিদের সামনে বালির বস্তা দিয়ে ব্যারিকেড দেয়া। অন্য পাশে রাইফেল ও টিয়ার গান নিয়ে প্রস্তুত কয়েক ডজন নিরাপত্তাকর্মী। এমন সময় লাঠি হাতে গ্যাসমাস্ক পরিহিত এক মুরসি সমর্থককে দেখা যায়। ফজরের নামাজের আগে দেখা যায় আরো কিছু সমর্থককে। জায়গা ছেড়ে যাওয়ার লক্ষণ নেই কারো মধ্যে।
ভোর পাঁচটা। আলো ফুটতে শুরু করেছে। তখন আওয়াজ পাওয়া যায় গুলি ও বিস্ফোরণের। জ্যাকেট ও গ্যাসমাস্ক পরা নিরাপত্তাকর্মীদের গাড়ি থেকে নামতে দেখা যায়। বোঝা যাচ্ছে মুরসির সমর্থকদের হটাতে শুরু হয়েছে ‘অপারেশন রাবা’।
এভাবেই মিশরে চলমান অভিযানের ঘটনা বর্ণনা করেন বিবিসির সাংবাদিক জেমস রেনল্ডস।
কায়রোতে মূলত দুই স্থানে বিক্ষোভ ক্যাম্প করেছিল মুরসির সমর্থক ও ব্রাদারহুড। একটি হলো কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নাহদা ক্যাম্প যেখান থেকে ইতিমধ্যেই তাদের সরিয়ে দিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। ওই অভিযানে শতাধিক মুরসি-সমর্থক নিহত হয়েছেন।
অন্য ক্যাম্পটি রয়েছে কয়েক কিলোমিটার দুরে নসর সিটির রাবা আল আদাবিয়া মসজিদের কাছে, যেটি পরিচিত ক্যাম্প রাবা নামে। এখান থেকে বিক্ষোভকারীদের হটাতেই চালানো হচ্ছে ‘অপারেশন রাবা’।
রেনল্ডস তার বিশেষ প্রতিবেদনে বলেন, “সকাল ছয়টা ৪০ মিনিট। রাবা ক্যাম্পের সামনে অস্ত্র হাতে কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মীকে একটি গাড়ি থেকে নামতে দেখা যায়। বিক্ষোভকারীরা সামনে এগোনোর চেষ্টা করলে গুলি করে তাদের থামিয়ে দেয়া হয়। এমন সময় সেখানে প্রবেশ করে একটি সামরিক বুলডোজার।বিক্ষোভকারীদের ক্যাম্পের দিকে এগোতে থাকে সেটি। রাস্তায় পোড়ানো টায়ার ও বালির বস্তা সরাতে সরাতে নিরাপত্তাকর্মীদের সামনে এগোনোর রাস্তা করে দেয় বুলডোজারটি।”
হামলার প্রসঙ্গে রেনল্ডস বলেন, “এই পর্যায়ে ঘটনাস্থলে হাজির হয় একটি সাঁজোয়া গাড়ি। এরপর অন্তত দুই ঘণ্টা ধরে গুলি চালাতে থাকে নিরাপত্তা বাহিনী। থেমে থেমে গ্রেনেড ও গ্যাস ক্যানিস্টার বিস্ফোরণের আওয়াজও পাওয়া যায়।”
সেই মুহূর্তে গ্যাসমাস্ক ছাড়া নিঃশ্বাস নেয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছিল বলে জানান সাংবাদিকরা।
রেনল্ডস জানান, ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ২০০ মিটার সামনে এগোনোর পর একজন মুরসি-সমর্থক বিবিসিকে বলেন, “ওরা আমাদের মেরে ফেলছে। আমাদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছে।” ওই মুরসি-সমর্থকের শরীর রক্তাক্ত আর চোখ কান্নাভেজা ছিল বলে জানান রেনল্ডস।
ওই মুহূর্তে রাবা মসজিদ থেকে বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া হচ্ছিল। তবে গুলি, বিস্ফোরণ ও বাতাসের কারণে কী ঘোষণা দেয়া হচ্ছিল তা শুনতে পাননি রেনল্ড।
রাবা ক্যাম্পের মূল অংশ থেকে ২০০ মিটার দূরে থাকতেই সাংবাদিকদের পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয় বলে জানান রেনল্ডস। তিনি বলেন, “পিস্তল উঁচিয়ে এক পুলিশ কর্মকর্তা আমাদের থামতে বাধ্য করেন। এরপর তিনি আমাদের কাছ থেকে ক্যামেরা ফুটেজ কেড়ে নেন।”
এরপর সেনাপ্রহরায় সাংবাদিকদের সেখান থেকে সরিয়ে নেয়া হয় বলে জানান জেমস রেনল্ডস।
সামরিক অভিযানে ব্রাদারহুড ও মুরসি-সমর্থকদের ১৪৯ জন নিহত হয়েছে। মিশরের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button