গভীর সংকটে দেশ : প্রধান কারন ও উত্তরনের একমাত্র উপায়

Nazir Ahmedব্যারিষ্টার নাজির আহমদ: জাতীয়ভাবে আমাদের সাধারণ একটা অভ্যাস হচ্ছে আমরা কোন সমস্যার গভীরে যাই না। আমরা যা চোখে দেখি তা নিয়েই মাতা-মাতি, তর্কা-তর্কী ও গালা-গালি করি। এ যেন কঠিন এক রোগের কারন ও উপর্সগ নির্নয় না করে সাধারন প্যারাসিটামল দিয়ে তার প্রতিকারের চেষ্টা করা। এতে হিতে বিপরিত হয়। কঠিন রোগটি আরও মারাত্মক আকার ধারন করে রোগীর মৃত্যুর কারন হয়ে দাঁড়ায়। তখন আর কারো তেমন কিছুই করার থাকে না। তাই রোগ বা সমস্যার মূল কারনে বা গভীরে না গিয়ে যদি সুপারফিশিয়ালী সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হয় তাতে সমস্যা না কমে বরং তা প্রকট আকার ধারন করতে পারে। তখন তা সমাধান ক্ষমতার বাহিরে চলে যেতে পারে।
বাংলাদেশ আজ এক গভীর সংকটে। ষোল কোটি মানুষ আজ জিম্মী। তারা আজ দারুল উৎকন্ঠিত। কখন কার কি হবে তা কেউ বলতে পারবে না। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাহিরে যেতে চাচ্ছেন না। কে কখন পেট্রল বোমার শিকার হবে অথবা কে কখন পুলিশ বা সন্ত্রাসীদের দ্বারা গুলিবিদ্ধ হবেন অথবা কে কখন গুম বা মিথ্যা হয়রানীমূলক মামলার শিকার হবে কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবেনা। লাগাতার অবরোধের কারনে অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবােের ভেঙ্গে পড়েছে। বিভিন্ন জায়গায় খাবার ও জ্বালানীর সংকট দেখা দিয়েছে। চাহিদার তুলনায় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস অপ্রতুল থাকায় জিনিষ পত্রের দাম হু হু করে বেড়ে চলছে। মোট কথা দেশ আজ এক উৎকন্টিত জনপদে পরিনত হয়েছে।
আমরা যা চোখে দেখছি তাই নিয়ে সমালোচনা করছি। কিন্তু একবারও ভাল করে প্রশ্ন করে জানতে চাচ্ছিনা এই গভীর সংকটের মূল কারনটা কি? দেশ কেন আজ এ অবস্থায় পরিনত হল? এজন্য কে প্রধানত দায়ী? এই প্রশ্নগুলো দলীয় নেতাকর্মীদেরকে করলে তারা তাদের দলীয় চিন্তা-চেতনার ভিত্তিতে উত্তর দেবে। শুধু দলীয় নেতাকর্মীরা কেন মতলববাজ ও দলকানা বুদ্ধিজীবীদেরকে একই ধরনের প্রশ্নগুলো করলে তারাও তাদের নাড়ীর টান অনুযায়ী উত্তর দেবেন এবং টকশোগুলোতে একইভাবে উত্তর দিয়েই যাচ্ছেন। নি:স্বার্থ ও নিরপেক্ষভাবে দেশ আজ মহাসংকটে পড়ার কারনগুলো সাহস করে বলার লোকদের অভাব দেশে আজ বেশি। দুর্ভাগ্য জাতির।
তর্কবাজ ও দলকানারা যে যাই বলুক না কেন দেশের আজ এ মহাসংকটের প্রধান কারন হচ্ছে সংবিধান থেকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এককভাবে বাতিল এবং ক্ষমতাসীন দলের অধীনে গত বছরের ৫ই জানুয়ারির প্রার্থীবিহীন ও ভোটারবিহীন নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। আর এ জন্য প্রধানত দায়ী হচ্ছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তার নজিরবিহীন জেদ এবং ক্ষমতায় যেকোন উপায়ে থাকার প্রচন্ড আকাংখা। কেন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হল তাও আবার এক ব্যক্তির একক সিদ্ধান্তে?
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তো কোন একক ব্যক্তির বা একক দলীয় সিদ্ধান্তে আসেনি। আসেনি কোন কোর্টের রায়ের মাধ্যমে। এই স্বতন্ত্র ব্যবস্থার বিধান সংবিধানে আনতে গোটা জাতি ছিল ঐক্যবদ্ধ। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও ছিলেন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায় সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত দাবী আদায়ে একাট্ট। তিনি জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় পার্টিকে সাথে নিয়ে ১৭৩ দিনের উপর হরতাল করেছেন। পুরো দেশকে অচল করে দিয়েছেন। দেশের লাইফ লাইন খ্যাত চট্রগ্রাম বন্দর ছিল মাসের পর মাস অচল। তখনকার বিএনপি সরকার প্রথম দিকে এই দাবী মানতে না চাইলেও প্রচন্ড চাপ ও ধ্বংশাত্মক গন আন্দোলনের কাছে নথি শিকার করতে বাধ্য হয়। তার মানে সরকার ও বিরোধীদল তার সাথে গোটা জাতি ছিল ঐক্যবদ্ধ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে প্রবর্তন করতে।
কি এমন অবস্থা ঘটলো যে ২০১১ সালে হঠাৎ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রধানমন্ত্রী একক সিদ্ধান্তে বাতিল করতে হলো? যে কারনে শেখ হাসিনা বিএনপি এবং বেগম খালেদা জিয়াকে নববই দশকে বিশ্বাস করতে পারেননি, ঠিক একই কারনে বিএনপি এবং বেগম খালেদা জিয়া তো এখন শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। বরং অবিশ্বাসের যে যে কারনগুলো নববই দশকে ছিলো, এখনতো সেগুলো আরও প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিভাবে বিএনপি ও বেগম খালেদা জিয়া মনে করবেন যে শেখ হাসিনার অধিনে একটা অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন হবে? বিগত ছয় বছরে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বাসের একটি জায়গাওতো সৃষ্টি করতে পারেননি। আজ যদি বিএনপি ও তার জোট ক্ষমতায় থাকতো, তাহলে কি শেখ হাসিনা ও তাঁর দল তাদের অধিনে নির্বাচনে যেতেন? প্রশ্নই আসেনা, এমনটি হলফ করে বলা যায়। তাই নিজে যেটা কখনই করবেন না বা করতে চাইবে না, অপরকে সেটা করতে বা চাইতে বাধ্য করার ব্যর্থ চেষ্টা কেন?
প্রধানমন্ত্রী যখন তাঁর অধীনে নির্বাচন করার জন্য সংবিধানের দোহাই দেন তখন খুব হাসি পায়। নিজের একক সিদ্ধান্তে ও ইচ্ছামত সংবিধান পরিবর্তন করে সেটির দোহাই দেয়া সত্যিই তো বেমানান ও হাস্যকর। তাইতো সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার প্রশ্ন তুলেছিলেন “কিসের সংবিধান? কার সংবিধান?” ড. কামাল হোসেনকে বলতে হয়েছিল ‘‘প্রাইম মিনিষ্টার হেজ ডান ফ্রড উইথ দ্যা কনষ্টিটিউশন’’ অর্থাৎ “প্রধানমন্ত্রী সংবিধানের সাথে প্রতারনা করেছেন।”
পাঠক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান ও সংবিধানকে নিয়ে যে কি তামাসা করা হয়েছে তা বুঝার জন্য আমাদেরকে একটু পিচনে যেতে হবে। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামীলীগ যে মেনিফেষ্টু জাতিকে দিয়েছিলো তাতে সংবিধান সংশোধন বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের ব্যাপারে কোন কথা ছিল না। শুধু তাই নয়, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পূর্বে সাজেদা চৌধুরী ও সুরঞ্চিত সেন গুপ্তের যৌথ নেতৃত্বে যে সংবিধান সংশোধনী সম্পর্কি সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছিল সেই সাব-কমিটিতে যেসব দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মতামত দিয়েছিলেন তাদের মোটামুটি সবাই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রাখার পক্ষে মত দিয়েছিলেন, এমনকি আওয়ামীলীগ দল হিসেবে যখন সাব-কমিটিতে তাদের মতামত দিতে গিয়েছিল তখনও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিধান রাখার পক্ষেই মতামত দিয়েছিলেন। কিন্তু পরিশেষে সাব-কমিটি প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের পরপরই ইউটার্ন নিয়ে সব মতামতকে কোন আমলে না নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের সুপারিশ করে। সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতকে যদি তোয়াক্কাই করা হবে না, তাহলে তথাকতিথ সাব কমিটি করে জাতির সাথে তামাসা ও নাটক করার কি দরকার ছিল? এক ব্যক্তির জেদ ও ইচ্ছাই যেন সব কিছু! তাঁর আশা-আকাংখা ও ইশারাতে সংবিধান থেকে জাতির ঐক্যমতের ভিত্তিতে সন্নিবেশিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিধানটি বাতিল করে জাতিকে এক গভীর সংকটে ফেলে দেয়া হলো।
প্রায় সময় বলা হয়ে থাকে উচ্চ আদালতের রায়ের কারনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করতে হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও মতলববাজ কথা। যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয় সংবিধান থেকে, তখনও সুপ্রীর্ম কোর্ট থেকে পূর্ণাঙ্গ রায় দেয়া হয়নি। তাছাড়া সংক্ষিপ্ত রায়ে পরবর্তী দুটি জাতীয় নির্বাচন জাতির বৃহত্তর স্বার্থে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যেতে পারে বলে উচ্চ আদালত মতও দিয়েছিলো। তারপরও সরকার প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর দল কিভাবে বলেন, আদালতের রায়ের কারনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করতে হয়েছে। এটা জাতিকে ধোঁকা দেয়ার শামিল।
তাছাড়া বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক যিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের ব্যাপার মূখ্য ভূমিকা পালন করেন তাঁর ব্যাপারেও অনেক কথা বাজারে আছে। তাকে দুইজন সিনিয়র ও দক্ষ বিচারপতিকে ডিঙ্গিয়ে কেন প্রধান বিচারপ্রতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হলো? বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ের সংক্ষিপ্ত তথা অপারেটিভ পার্টে পরবর্তী দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হওয়ার ব্যাপারে অভিমত থাকলেও পূর্ণাঙ্গ রায়ে তা ছিলনা কেন? কোন অধিকতর শুনানী ছাড়া তিনি কিভাবে মূল রায় থেকে ঐ গুরুত্বপূর্ণ পার্টি বাদ দিয়েছেন? কেউ কি তাকে চাপ দিয়েছিল? বা কারো সাথে কোন যোগসাজসে তেমনটি করা হয়েছিল? শুনানীর পর ১৬ মাস সময় কেন নিলেন তিনি রায় দিতে? অবসর গ্রহনের পর তিনি আর শপথের আলোকে বা অধীনে ছিলেন না। আর এমতাবস্থায় তিনি কিভাবে রায় লিখে স্বাক্ষর করলেন, কারন তখন তো তিনি শপথের ভিত্তিতে বিচারপতি ছিলেন না। শুনা গেছে বিচারপতি খায়রুল হক অবসরের পর রায় লিখে জমা দেয়ার পর আবার নিয়ে সংশোধন করে লিখে আবার জমা দিয়েছিলেন। এমনটি কি তিনি করতে পারেন? তাঁর রায় দেয়ার সমসাময়িক কালে প্রধানমন্ত্রীর ত্রান তহবিল থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়েছেন বলে পত্র-পত্রিকায় এসেছে। এটা কি কাকতালীয় না অন্য কিছু? প্রধান বিচারপতি থেকে অবসর গ্রহনেরর পরপরই তাঁকে প্রধান বিচারপতির র‌্যাংক ও স্ট্যাটাসসহ বাংলাদেশ আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। সেটা নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলে থাকে। আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে অনেক সুপারিশ সরকারকে তিনি করেছেন যা তাঁর বিচারপতি হিসেবে দেয়া রায়ের সম্পূর্ণ উল্টো। কেন এই বৈপরিত্য? এই প্রশ্নগুলোর কারনে বিচারপতি খায়রুল হকের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত রায়ের গ্রহনযোগ্যতার ব্যাপারে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। অনেকে বলেন প্রধানমন্ত্রী কি আদালত ও তার সর্বোচ্চ বিচারপতিকে তাঁর একান্ত ইচ্ছা ও রাজনৈতিক আকাংখার স্বার্থে ব্যবহার করেছেন?
দেশে যে আজ গভীর সংকট চলছে তার মূলে না গিয়ে ভাসাভাসা কথাবার্তায় কোন সমাধান হবেনা। ষোল কোটি মানুষকে নিপিড়ন, নির্যাতন করে আর হত্যা ও গুম এর ভয় দেখিয়ে কোন টেকসই সমাধান করা যাবে না। সমাধান দিতে পারেন একজন ব্যক্তি তাঁর একটি দ্ব্যর্থহীন ঘোষনা দ্বারা। সেই ব্যক্তিটি হচ্ছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আর সেই দ্ব্যথহীন ঘোষনাটি হচ্ছে তার অধিনে নয় বরং নির্দলীয়/ নিরপেক্ষ অথবা বড় দুই দলের কাছে গ্রহনযোগ্য কোন ব্যক্তির অধিনে অধিনে সকল দলের অংশ গ্রহনের ভিত্তিতে অচিরেই একটি অবাধ, সুষ্ট, নিরপেক্ষ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। হলফ করে বলা যায় এই ঘোষনা দিলে মুহুর্তের মধ্যে দেশের মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে। মানুষ স্বাস্তি ফিরে পাবে। প্রধানমন্ত্রী কি জাতির প্রয়োজনে ও দেশের স্বার্থে এই সাহস দেখাতে পারবেন? গভীর সংকট থেকে উত্তরনের এটিই একমাত্র উপায়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রায় সময় বক্তৃতায় বলেন, বিএনপি জামায়াতকে রেখে নির্বাচনে আসতে চায়নি বলে গত নির্বাচনে তারা আসেনি। বিএনপি একবারও তো এ কথাটি বলেনি। তাহলে আপনি এটা পেলেন কোথা থেকে? তারা বরং বারবার বলেছে আপনার অধীনে কোন নির্বাচনে যাবে না, কেননা তারা মনে করে আপনার অধীনে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ট ও নিরপেক্ষ হবে না। আপনি কেন পলিটিকেল ষ্টান্ড বাজি করেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী? আপনি কেন ঘোষনা দিয়ে বললেননা যে আপনি প্রধানমন্ত্রী থাকবেন না, অন্য নিরপেক্ষ বা নির্দলীয় ব্যক্তির অধিনে নির্বাচন হবে। তারপরও যদি বিএনপি নির্বাচনে না আসতো, আপনি যা ইচ্ছে তাই বলতে পারতেন। আমরা তখন বিশ্বাস করতাম আপনার কথা।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি ও আপনার দলের নেতারা প্রায়ই বলে থাকেন, স্থানীয় নির্বাচন কয়েক হাজার যেহেতু নিরপেক্ষভাবে হয়েছে সেহেতু জাতীয় নির্বাচন ও অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। ফালতু কথা, কোথায় লিভারপুল আর কোথায় ফকিরাপুল। আপনি তো ভাল করেই জানেন স্থানীয় নির্বাচনে ক্ষমতার পালাবদল হয় না। স্থানীয় নির্বাচনে সবকটি আসনও যদি বিএনপি পেয়ে যায় তারপরও কি আপনার ক্ষমতার একটু এদিক সেদিক হবে? নববই দশকে অনেক স্থানীয় নির্বাচনে আপনারা জিতিছেন। ঢাকা ও চট্রগ্রামে আপনার দলের মেয়র প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন, তারপরও কেন ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারীর নির্বাচনে বিএনপি সরকারের অধিনে আপনারা অংশগ্রহন করলেন না? তাছাড়া গত বছর উপজেলা নির্বাচনে ২য় ও ৩য় তফা নির্বাচনে আপনাদের স্বরূপতো জাতি ভাল করে দেখেছে। তারপরও কি জাতিকে বোকা মনে করবেন?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, প্রায় সময় বক্তৃতায় আপনি বলে থাকেন আপনি প্রধানমন্ত্রীত্ব চান না, আপনি চান দেশে শান্তি। আপনি কাজ দিয়ে আপনার কথাকে প্রমান করুন। গভীর সংকটে দেশ আজ। বল প্রয়োগে শান্তি আসবেনা। শান্তি আসবে আপনার এক ঐতিহাসিক সাহসী ঘোষনা যদি তা দিতে পারেন। আর সে ঘোষনা হলো অচিরেই নির্দলীয় ব্যক্তির অধিনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
প্রায় দশজন এমিকাস্ কিউরী (আদালতের বন্ধু) সুপ্রীমকোর্ট নিয়োগ দিয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত বিধানের ব্যাপারে এক্সপার্ট অভিমত দিয়ে আদালতকে সহায়তা করার জন্য। একজন বাদ দিয়ে বাকী সব এমিকাস কিউরীরা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পক্ষে মতামত দিয়েছিলেন। এমনকি রাষ্ট্রের এর্টনী জেনারেলও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পক্ষে সাবমিশন দিয়েছিলেন। এই সব কিছুকে ছুঁড়ে ফেলে বিচারপতি খায়রুল হক একেবারে ইউটার্ন নিয়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিধানটি বাতিল করে দিলেন। তাই বর্তমানে জাতির গভীর সংকটের জন্য বিচারপতি খায়রুল হকের দায়ও কম নয়।
পরিশেষে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশ আজ এক গভীর সংকটে। আপনিই একমাত্র পারেন এই সংকট থেকে জাতিকে বের কের নিয়ে আসতে। আমরা জানি আপনার আশে পাশে যারা আছে তারা সব সময় ভাল ও সঠিক পরার্মশ আপনাকে নাও দিতে পারে। কারন তাদের অনেক স্বার্থ জড়িত। কিন্তু আপনি তো বারবার বলেছেন আপনি দেশে শান্তি চান, আপনি প্রধানমন্ত্রীত্ব চান না। আপনি যদি সত্যিই সেটা বুঝিয়ে থাকেন, তাহলে সাহসিক সিদ্ধান্ত নেয়ার এখনই সময়। ইতিহাস আপনাকে অন্যভাবে মূল্যায়ন করবে যদি সাহসিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। নির্দলীয় ব্যক্তির অধীনে অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন অনুষ্টিত হোক তাতে যে দলই বিজয়ী হিসেবে আসবে দেশবাসী স্বাগত জানাবে। কারো কিছু বলার থাকবে না। জনগনই তো ক্ষমতার উৎস বলে সংবিধানে লিখা আছে। আর তাই যদি হয় তাহলে জনগনকে অবাধে সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করার সুযোগ দিতে তো আপনার অসুবিধা হবার কথা নয়। আপনি অতীতে অনেক সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আরেক সাহসী সিদ্ধান্ত দেখার অপেক্ষায় জাতি।
লেখক : ব্রিটেন প্রবাসী, আইনবিদ ও বিশ্লেষক

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button