মিরপুরে প্লাস্টিক কারখানায় বিস্ফোরণ, নিহত ১৩
রাজধানীর মিরপুরের একটি প্লাস্টিক কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। শানিবার রাত ১২টায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে মৃতের সংখ্যা ১৩ জন। এর মধ্যে ১০ জন পুরুষ ও তিনজন নারীর লাশ রয়েছে। লাশগুলো ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা আশঙ্কা করছেন, মৃতের সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে। বিস্ফোরণে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। এতে ওই কারখানার পাশে থাকা একটি একতলা ভবন ধসে গেছে। আশপাশের বেশ কিছু বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যার দিকে মিরপুর-১ এর ঈদগাহ মাঠসংলগ্ন এফকো ভবনে এই ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে হঠাৎ বিকট আওয়াজে বিস্ফোরণের ঘটনা। এ সময় আশপাশের ভবনগুলো কেঁপে ওঠে। বিস্ফোরণের পরপরই চারতলা ওই ভবনে আগুন লেগে যায়। এর ১৫ মিনেটের মাথায় আরো ভয়াবহ বিস্ফোরণ। এ সময় ভবনের সামনে থাকা গাড়িগুলো মুহূর্তে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। বিস্ফোরণের ভয়াবহতায় পাশের একটি একতলা ভবন ধসে যায়। আশপাশের বেশ কিছু ভবনের দরজা-জানালার কাচ ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে খসে পড়ে। ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা গিয়ে প্রায় ২ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। এরপর ভেতর থেকে লাশ ও আহতদের বের করে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ওই ভবনের সিকিউরিটি গার্ড মাজেবুর রহমান জানান, মিরপুর-১ নম্বর চিড়িয়াখানা রোডের ১-২ চার তলা ওই ভবনটিতে এফকো নামের একটি প্লাস্টিক কারখানা রয়েছে। যেখানে খাবার পার্সেল করার ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের বক্সসহ নানা পণ্য তৈরি করা হয়। এখানে দুই শিফটে কাজ করা হয়। প্রতি শিফটে প্রায় ৪০-৫০ জন শ্রমিক কাজ করে থাকেন। ঘটনার সময় ফ্যাক্টরির মালিক আনিসুজ্জামান ও তার দুই ছেলেসহ কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে ৬০-৬৫ জনের মতো লোক ছিলেন।
তিনি বলেন, বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিকট শব্দে আগুন ধরে যায়। শব্দটা এত জোরে হয়েছিল প্রাথমিকভাবে তিনি কিছু বুঝে উঠতে পারেননি। পরে আগুন দেখে তিনি দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে যান। এ সময় ভেতর থেকে চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ শোনা যায়। এ সময় ভবনের ভেতরে থাকা অনেকেই জানালা ভেঙে নিচে লাফিয়ে পড়তে থাকেন। এই দৃশ্য দেখে স্থানীয় অনেকেই ছুটে আসেন তাদের উদ্ধারে। স্থানীয়রাও জানালা ভেঙে ভেতরে থাকা বেশ কয়েকজনকে বের করেন। প্রায় ১০-১৫ মিনিট পর পুনরায় বিকট শব্দ হয়। এ সময় আগুন আরো তীব্র আকার ধারণ করে। পরে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় ২ ঘণ্টা চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
আনিসুজ্জামান আরো বলেন, ১৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হলেও ধারণা করা হচ্ছে, আরো মানুষের মৃত্যু হতে পারে। বিষয়টি উপস্থিতির খাতা দেখলে বোঝা যাবে। তবে ওই খাতাটি আগুনে পুড়ে গেলে সেটা সম্ভব হবে না।
নিখোঁজ ভাই মোখলেসুর রহমানের খোঁজে আসা জাহাঙ্গীর আলম জানান, তিনি নিজেও ওই ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন। তবে ঘটনার সময় তিনি ছিলেন না। তার ভাই মোখলেসুর সেখানে কাজ করছিলেন। ঘটনার পর থেকে তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ। জাহাঙ্গীর বলেন, ভবনের প্রথম তলায় কারখানা। চার তলায়ও ফিটিংয়ের কাজ হয়। বাকি দুই তলায় অফিসসহ অন্য কাজ হয়ে থাকে।
ঘটনার পর সেখানে ছুটে যান স্থানীয় এমপি আসলামুল হক, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার আলী আহমেদ, ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়াসহ পুলিশ ও র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আলী আহমেদ বলেন, ধারণা করা হচ্ছে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের কারণে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। ঘটনাস্থলে দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করে। একপর্যায়ে সেখানে থাকা বয়লার বা গ্যাসসিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। তিনি আরো বলেন, এই ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে কমিটি বিষয়টি তদন্ত করে রিপোর্ট দেবে।
শাহআলী থানার ওসি সেলিমুজ্জামান জানান, ঘটনাস্থল ও তিনটি হাসপাতাল থেকে সর্বশেষ ১৩ জনের লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে রাশিয়া নামে একজন মহিলার নাম পাওয়া গেছে। অন্যদের নাম পরিচয় এখনো জানা যায়নি। এমনকি কারখানার মালিকের কী অবস্থা সেটিও জানা যায়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এমপি আসলামুল হক বলেন, এটি একটি দুঃখজনক ঘটনা। তাৎক্ষণিক ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার ও আহতদের পাঁচ হাজার করে টাকা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিস্ফোরণে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আশপাশের ভবনগুলো কেঁপে ওঠায় অনেকেই ভবন ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন। পুরো এলাকায় এ সময় হুলস্থুল কাণ্ড লেগে যায়। উৎসুক জনতা ভিড় জমাতে থাকে। ঘটনার পর নিরাপত্তাজনিত কারণে পুলিশ পুরো এলাকা কর্ডন করে রেখেছে।